সৃষ্টির মূলে অথবা বলা যায়
পৃথিবী সৃষ্টির মূল বিষয়টি কী ছিল?
কেউ বলবেন,
‘জল ছিল’। কেউ বলবেন,
‘বিশাল এক শূন্য ছিল’। যারা ধর্মে বিশ্বাসী,
তারা বলবেন, ‘স্রষ্টার আদেশের এক
হুঙ্কার ছিল।’ আরো অনেকেই হয়তো নিত্যনতুন বা বিচিত্র জবাব হয়তো দেবেন এ
প্রশ্নের উত্তরে। কিন্তু আমার ধারণা,
পৃথিবী সৃষ্টির মূলে ছিল কেবলই অসীম শক্তিতে
বলীয়ান একটি বিষয়, সে বিষয়টির নাম
‘ভালোবাসা’। আর মানব সৃষ্টির মূলেও নিহিত রয়েছে সেই ছোট্ট একটি মাত্র
শব্দ, যার নাম—
’ভালোবাসা’।
তাই বলে পৃথিবীতে যে কারো
সঙ্গেই যে কারো ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে,
তা কিন্তু নয়। দুজন মানুষের জন্মসংখ্যার দ্যোতনা
যদি একই তালে না বাজে, তাহলে পাশাপাশি-ঘেঁষাঘেঁষি করে বাস করেও দুজন মানুষের মধ্যে কখনো গড়ে উঠতে
পারে না প্রকৃত কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক। পৃথিবীতে কার সঙ্গে কার ভালোবাসা গড়ে উঠবে, সে বিষয়ে সংখ্যাতত্ত্ব আমাদের কিছু দিকনির্দেশনা দেয় এবং
হাজার বছরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে সংখ্যাতত্ত্ব নির্দেশিত সেই ছক-ই বহন করে বয়ে বেড়ায় মানুষ তার জীবনে—পারস্পরিক ক্ষেত্রে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে।
আর সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবের এ তালিকা পৃথিবীব্যাপী একই রকম। তাই মজার এ বিষয়কেই
উপজীব্য করে আমাদের আজকের প্রয়াস। লিখেছেন— রাজা হাসান
জন্মসংখ্যা ‘১’: পাঠক-পাঠিকাদের নিশ্চয়-ই জানা আছে,
বছরের যেকোনো মাসের
১,১০,১৯ কিংবা ২৮ তারিখে জন্ম নেয়া যেকোনো ব্যক্তির জন্মসংখ্যা
‘১’। আর জন্মসংখ্যা
‘১’-এর জাতক-জাতিকাদের সবচেয়ে বেশি ভাব
জমে জন্মসংখ্যা ১, ২, ৪, ৭ ও ৯-এর জাতক-জাতিকার সঙ্গে। তবে
‘১’-এর সঙ্গে
‘১’-এর কখনো কখনো ব্যক্তিত্ব-সংঘাত সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা
থাকে। তেমনি আবার যথেষ্ট খাতিরের সম্পর্ক থাকলেও জন্মসংখ্যা
‘১’-এর সঙ্গে
‘৪’-এর জাতক-জাতিকাদের মধ্যে কখনো
নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সংঘাতও দেখা দেয়।
জন্মসংখ্যা ‘২’: যেকোনো মাসের ২,
১১,
২০ বা ২৯ তারিখে কেউ
জন্মগ্রহণ করলে তার জন্মসংখ্যা হয় ‘২’। জন্মসংখ্যা ২,
৪,
৬,
৭,
৮ বা ৯-এর জাতিকা বা
জাতকের সঙ্গে সাধারণত এদের ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জন্মসংখ্য
‘২’-এর জাতক-জাতিকার সঙ্গে জন্মসংখ্যা
‘৬’-এর সম্পর্ক খুবই
‘হ্যান্ডেল উইথ কেয়ার’ ধরনের হয়ে থাকে। আবার কখনো
জন্মসংখ্যা ‘৫’-এর কোনো কোনো জাতক-জাতিকাকে নাস্তিক্যবাদী হতে
দেখা যায়। তাই ধার্মিক প্রকৃতির ‘২’-এর সঙ্গে এদের আদর্শিক সংঘাতের
আশঙ্কা থাকে। আবার স্বভাব বৈশিষ্ট্যে ‘২’ ও
‘৭’ অনেকটা একই রকম হওয়ার
কারণে এদের কখনো কখনো সম্পর্ক-শীতলতার শিকার হতেও দেখা যায়।
জন্মসংখ্যা ‘৩’: মাসের ৩,
১২,
২১ অথবা ৩০ তারিখে
জন্মগ্রহণ করলে ‘৩’ হয় জন্মসংখ্যা। ৩, ৬,
৭ ও ৯ জন্মসংখ্যার
জাতক—জাতিকাদের সঙ্গে এদের ভালো জমে। যদিও বেশির ভাগ ‘৩’ জন্মসংখ্যার জাতক-জাতিকাদের সঙ্গে ৩,
৫,
৬,
৭ অথবা ৯
জন্মসংখ্যার জাতিকা বা জাতকদের ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যায়। তবে সাধারণত
স্বপ্নবিলাসী ‘৭’-এর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে বেশ খোশ
হালেই থাকেন দার্শনিক মনোবৃত্তি-সম্পন্ন জন্মসংখ্যা ‘৩’-এর জাতক-জাতিকারা।
জন্মসংখ্যা ‘৪’: যেকোনো মাসের ৪,
২২ বা ৩১ তারিখে
জন্মালে জন্মসংখ্যা হয় ‘৪’। সাধারণত ১,
২,
৪,
৬,
৭,
৮ ও ৯ জন্মসংখ্যার
ব্যক্তিরা ‘৪’ সংখ্যার জাতক-জাতিকারা সাধারণত পরস্পরের
মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে থাকেন। যদিও ‘৪’ জন্মসংখ্যার জাতক-জাতিকার সঙ্গে
‘৮’ বা
‘৯’ সংখ্যার জাতিকা বা জাতকের
জীবন অনেক ক্ষেত্রেই খুব সংঘাতপূর্ণ হতে দেখা যায়। আবার জন্মসংখ্যা
‘৬’-এর সঙ্গে ভালোবাসায় জড়িয়ে
‘৪’-এর কাটে উষ্ণতা-শীতলতায় পরিপূর্ণ এক
প্রেমময় জীবন।
জন্মসংখ্যা ‘৫’: মাসের ৫,
১৪ অথবা ২৩ তারিখে
জন্ম নেয়া যেকোনো নারী বা পুরুষের জন্মসংখ্যা হয় ‘৫’। অন্য যে কারো সঙ্গেই খুব
সহজভাবে মিশে যেতে পারেন এরা। তবু এদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ২,
৩,
৫,
৭ ও ৮-এর সঙ্গেই
সাধারণত গড়ে ওঠে। তবে ভাববাদী ২ ও ৭-এর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে
জন্মসংখ্যা ‘৫’-এর যুক্তিবাদী জাতক-জাতিকাদের কিছুটা
ভাবনাচিন্তা করে নেয়া উচিত।
জন্মসংখ্যা ‘৬’: যেকোনো মাসের ৬,
১৫ বা ২৪ তারিখে
জন্ম নেয়া যে কারো জন্মসংখ্যা ‘৬’। পারস্পরিক হূদ্যতা গড়ে
তোলার ক্ষেত্রে এরা প্রায়ই ২, ৩, ৪,
৬ ও ৯ জন্মসংখ্যার
জাতক বা জতিকাদের প্রতি আকৃষ্ট হন। তবে জন্মসংখ্যা ‘৬’-এর সঙ্গে ৪-এর হার্দিক
টানাপড়েন ও পারস্পরিক আকর্ষণের বিষয়টিও নজরে রাখা প্রয়োজন।
জন্মসংখ্যা ‘৭’: কারো জন্মদিনের তারিখ যদি হয় ৭,
১৬ বা ২৫,
তাহলে তার
জন্মসংখ্যা হয় ‘৭’। জন্মসংখ্যা ‘৭’-এর জাতক-জাতিকাদের প্রেম-ভালোবাসা সাধারণত গড়ে উঠতে
দেখা যায়—১, ২, ৩,
৪,
৭ বা ৮ জন্মসংখ্যার
মানুষের সঙ্গে। তবে জন্মসংখ্যা, ‘৩’-এর জাতক-জাতিকাদের প্রতি জন্মসংখ্যা
‘৭’-এর মানুষের এক ধরনের অমোঘ
আকর্ষণ ক্রিয়াশীল থাকতে দেখা যায়।
জন্মসংখ্যা ‘৮’: যেকোনো মাসের ৮,
১৭ বা ২৬ তারিখে
জন্ম নিলে কোনো ব্যক্তির জন্মসংখ্যা হয় ‘৮’। এদের সখ্যতা সাধারণত ২,
৪,
৫,
৭ কিংবা ৮
জন্মসংখ্যার জাতক বা জাতিকার সঙ্গে গড়ে ওঠে। মাঝে মাঝে জন্মসংখ্যা
‘৯’-এর জাতক-জাতিকাদের সঙ্গেও এদের
গাঁটছড়া বাঁধতে দেখা যায়। তবে ‘৮’-এর সঙ্গে
‘৪’ বা
‘৯’ জীবন সংঘাত-সম্ভাবনায় সবসময়
আশঙ্কাযুক্ত থাকে। আর জন্মসংখ্যা ‘২’এর নর-নারীর সঙ্গে এদের ভালোবাসা
হয় অম্ল-মধুর স্বাদে ভরপুর।
জন্মসংখ্যা ‘৯’: মাসের ৯,
১৮ কিংবা ২৭ তারিখে
জন্ম নেয়া ব্যক্তির জন্মসংখ্যা ‘৯’ হয়। আর এদের ভালোবাসার
ব্যক্তি হিসেবে ১, ৩, ৪, ৬,
৮ ও ৯ জন্মসংখ্যার
জাতিকা বা জাতকদেরই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে আগেই বলেছি
‘৯’ এর সঙ্গে ৪ ও ৮-এর সম্পর্ক
সবসময়ই সংঘাতপূর্ণ হওয়ার একটা আশঙ্কা সবসময় থেকেই থাকে। আর মানসিক টানাপোড়েন
সার্বক্ষণিক খুনসুটির সত্ত্বেও ‘৯’-এর সঙ্গে
‘১’ জন্মসংখ্যার ভালোবাসার
সম্পর্ক সবসময়ই থাকে অনন্য-বৈশিষ্ট্যের এক বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে দীর্ঘ তালিকা
এতক্ষণ ধরে বর্ণনা করা হলো, সবসবয় সে তালিকা
মেনেই কি একজন মানুষের সঙ্গে অন্য আরেকজন মানুষের ভালোবাসা গড়ে ওঠে? না, এ কথা সবসময় অবধারিত
নয়। কথায় বলে—“পিরিতে মজিলে মন/কিবা হাঁড়ি, কিবা ডোম!” নানা ধরনের মোহমায়ায় মত্ত হয়ে এ নির্দেশিত তালিকার বাইরেও
কখনো কোনো কোনো মানুষের সঙ্গে কারো কারো ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। তবে
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সেসব সম্পর্ক
বেশিদিন টেকসই হতে পারে না। কিন্তু আমরা তো মনেপ্রাণে আশা করি, আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জীবন
জড়িয়ে থাকুক অচ্ছেদ্য-অটুট আর মজবুত এক ভালোবাসার
জিঞ্জিরে। শুভ হোক সবার প্রেম। ভরপুর ভালোবাসায় সমৃদ্ধ থাকুক প্রত্যেক জাতক-জাতিকার জীবন। সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য আমাদের প্রত্যাশা
রইল এতটুকুই।