যুক্তরাষ্ট্রে ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় উত্তরাঞ্চলীয় ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের মধ্য দিয়ে এ ভোট গ্রহণ শুরু হয়। কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে ভোট গ্রহণ চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে। কমলা হ্যারিস জিতলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে ট্রাম্প জিতলে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউজে বসার সুযোগ হবে তার।
ভোট শুরুর পর গতকাল ভোরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দেন কমলা হ্যারিস। ওই পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমেরিকা, নিজের কণ্ঠস্বর শোনানোর এটাই উপযুক্ত সময়।’
অন্যদিকে ভোট গ্রহণ শুরুর আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘এখন ঘর থেকে বেরিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের সময়, যেন আমরা সবাই মিলে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসাতে পারি।’
কমলা হ্যারিস এবার ডাকযোগে নিজ অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় আগাম ভোট দিয়েছেন। ট্রাম্প ভোট দেন গতকাল, ফ্লোরিডায় পাম বিচে ম্যান্ডেল রিক্রিয়েশন সেন্টারে। ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জয়ের ব্যাপারে খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং জয়ের ব্যবধানটা ছোট হবে না।’
এবারের নির্বাচনী প্রচারে কমলা ও ট্রাম্প বিভিন্ন ইস্যুতে ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কমলা বলেছেন, ‘ক্ষমতায় গেলে প্রথম দিন থেকেই তিনি শ্রমজীবী পরিবারের জন্য খাদ্য ও আবাসনের খরচ কমানোর লড়াই করবেন। বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বছরে ৪ লাখ ডলারের বেশি আয় করা ব্যক্তির ক্ষেত্রে কর বাড়াতে চান হ্যারিস। তিনি গর্ভপাতের অধিকারকেও নির্বাচনী প্রচারের প্রাণকেন্দ্রে রেখেছিলেন।’
অন্যদিকে ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সবকিছু মানুষের ক্রয় সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে আসবেন। অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা কমানোর পক্ষেও মত দিয়েছেন তিনি। আমদানি পণ্যে উচ্চ হারে কর আরোপের আভাস দিয়েছেন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট। আর গর্ভপাতের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘নারীদের যেন গর্ভপাতের কথা ভাবতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করা হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কমলা কিংবা ট্রাম্প—যে প্রার্থীই জয়ী হোক না কেন, তা রেকর্ড তৈরি করবে। কমলা জিতলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প জিতলে তিনি হবেন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট। দু’বার অভিশংসিত হওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ড গড়তে পারেন তিনি।
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ (ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া) যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ আছে ৫১টি। ভোটাররা ৫১টি ইলেক্টোরাল কলেজের ৫৩৮ জন ইলেক্টর নির্বাচিত করে থাকেন। যে প্রার্থী অর্ধেকের বেশি (অন্তত ২৭০টি) ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন, তিনিই হবেন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রে ভোটার সংখ্যা ২৪ কোটি ৪০ লাখের বেশি। তাদের মধ্যে নিবন্ধিত ভোটার আছে ১৬ কোটির মতো। প্রায় আট কোটি মানুষ এবার আগাম ভোট দিয়েছেন।
বরাবরের মতো এবারের নির্বাচনের ব্যালট পেপারও ছিল বেশ দীর্ঘ। সব মিলিয়ে দুই-তিন পাতার। ব্যালটে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নামের পাশাপাশি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের প্রার্থীদের নাম থাকে। স্থানীয় অঙ্গরাজ্যের নানা উদ্যোগ ও প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেয়ার ব্যবস্থাও থাকে ব্যালটে। তাই অঙ্গরাজ্য বা এলাকাভেদে ব্যালটের আকার ভিন্ন হয়। একেকটি ব্যালট পূরণ করতে ভোটারদের ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে।
নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দল থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন টিম ওয়ালজ ও রিপাবলিকান পার্টি থেকে আছেন জেডি ভ্যান্স। গতকাল কংগ্রেসের নতুন সদস্য বেছে নেয়ার জন্যও ভোট দেন মার্কিনরা। একই দিন অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নর ও আইন পরিষদ নির্বাচনের ভোটও নেয়া হয়।
এবারের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাতটি ‘দোদুল্যমান রাজ্য’ বা ‘সুইং স্টেটকে’ গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছে অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন। গতকাল এসব রাজ্যে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।