ইসরায়েলের ইরান আক্রমণের পরিকল্পনা সম্পর্কে গোপনীয় মার্কিন গোয়েন্দা নথি প্রকাশ পেয়েছে। সূত্রগুলো বলছে। তিনজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মতে, ইসরায়েলের ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আক্রমণের পরিকল্পনা সম্পর্কিত অত্যন্ত গোপন মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসের ঘটনা তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের একজন ফাঁস হওয়া নথির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নথি ফাঁস হওয়ার ঘটনাকে ‘গভীরভাবে উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। খবর সিএনএন।
মিডল ইস্ট স্পেকটেটর নামক এক অ্যাকাউন্ট থেকে গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এসব নথি টেলিগ্রাম প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা হয়। তারপর ইন্টারনেটে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ১৫ ও ১৬ অক্টোবরের তারিখ থাকা এসব নথি। অত্যন্ত গোপনীয় হিসেবে চিহ্নিত নথিগুলো কেবল যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির ‘ফাইভ আইস’ভুক্ত মিত্রদেশগুলোরই দেখতে পারার কথা ছিল। দেশগুলো হলো— অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য।
ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার প্রস্তুতির পরিকল্পনার বিবরণ রয়েছে নথিগুলোতে। ন্যাশনাল জিওস্পেশিয়াল-ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি দ্বারা সংকলিত একটি নথি বলছে, ইসরায়েল গোলাবারুদ সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির আরেকটি নথিতে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর আকাশ থেকে ভূমিতে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। ইরানের ওপর হামলার সম্ভাব্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তথ্যটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, কথিত এই পেন্টাগন নথিতে প্রবেশাধিকার কে পেয়েছিল সেটাই তদন্তের মূল বিষয়। এমন কোনো নথি ফাঁসের ঘটনা ঘটলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এফবিআই, পেন্টাগন এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ তদন্ত শুরু হয়।
নথি ফাঁসের ঘটনাটি ঘটলো যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কের একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল সময়ে। আর এই ঘটনা ক্ষুব্ধ করতে পারে ইসরায়েলকে, যারা ১ অক্টোবর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
ফাঁস হওয়া একটি নথিতে এমন কিছু ইঙ্গিত রয়েছে যা ইসরায়েল কখনো প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি আর সেটা হচ্ছে- দেশটির কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। নথিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো ইঙ্গিত দেখেনি যে, ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে।
অবসরপ্রাপ্ত সিআইএ কর্মকর্তা এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রাক্তন উপ-প্রতিরক্ষা সচিব মিক মালরয় বলেছেন, যদি সত্যিই ১ অক্টোবর ইরানের হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলের কৌশলগত পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে থাকে, তবে এটি একটি গুরুতর লঙ্ঘন। এতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মধ্যে ভবিষ্যৎ সমন্বয়ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। বিশ্বাস সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, এবং এটি কীভাবে ফাঁস হয়েছে তার ওপর নির্ভর করবে, সেই বিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা।
আরেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ফাঁস হওয়া নথি দুটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, তবে খুব বেশি বিপজ্জনক নয়। উদ্বেগের বিষয় হলো যদি আরো নথি থাকে।
নথি ফাঁসের ঘটনায় পেন্টাগন এবং ন্যাশনাল জিওস্পেশিয়াল-ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
নথিগুলো কীভাবে জনসমক্ষে এসেছে তা স্পষ্ট নয়। জানা যায়নি এগুলো হ্যাক হয়েছে নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এরইমধ্যে ইরানের হ্যাকারদের ব্যাপারে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত আগস্টে বলেছিল, ইরান ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারাভিযানের নথি হ্যাক করেছে।
অ্যাক্সিওস প্রথম শনিবার ফাঁস হওয়া নথিগুলোর বিষয়ে প্রতিবেদন করে।