দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় গাজা ও পশ্চিম তীর

ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা নিষিদ্ধ করল ইসরায়েল

আগামী তিন মাসের মধ্যে ইসরায়েল এবং ইসরায়েলের দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে আইন পাস করেছে ইসরায়েলের সংসদ। ইউএনআরডব্লিউএ এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগও নিষিদ্ধ করা হবে এই আইনের মাধ্যমে। এতে গাজা ও পশ্চিম তীরে সংস্থাটির কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সীমাবদ্ধ হবে। এতে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা আরো বাড়লো গাজা ও পশ্চিম তীরে। খবর বিবিসি।

গতকাল সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাতে ইসরায়েলের সংসদ নেসেটে এ বিষয়ে দুইটি বিল অনুমোদন করা হয়েছে। আইন প্রণয়নকালে নেসেটের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা কমিটির চেয়ারম্যান ইউলি এডেলস্টাইন ইউএনআরডব্লিউএকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঢাল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সংসদে বলেছেন, হামাসের সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএর একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে, এবং ইসরায়েল এটি মেনে নেবে না।

ইউএনআরডব্লিউএ কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি জাতিসংঘ সনদের বিরুদ্ধাচরণ এবং আন্তর্জাতিক আইনে ইসরায়েল রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতাগুলোর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেছেন, গাজার লোকেরা ইতিমধ্যে ‘নরক যন্ত্রণা’ ভোগ করছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সেখানে ৬ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। এতে একটি সম্পূর্ণ প্রজন্ম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

গাজা ও পশ্চিম তীরে সাহায্য বিতরণের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএর সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গাজায় সাহায্য পৌঁছানোর জন্য সকল সীমান্তের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইসরায়েল। নিষেধাজ্ঞার ফলে ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীদের আইনি নিরাপত্তা ইসরায়েলে আর থাকবে না, এবং পূর্ব জেরুজালেমে সংস্থাটির সদর দপ্তর বন্ধ করা হবে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এই আইনগুলোর বাস্তবায়ন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধান এবং অঞ্চলটিতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষতিকর হবে। এতে ফিলিস্তিনিদের ভোগান্তি আরো বাড়বে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ এই পদক্ষেপ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি এই পদক্ষেপকে ‘সম্পূর্ণ ভুল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বলেছেন, এই আইনগুলো ফিলিস্তিনিদের জন্য ইউএনআরডব্লিউএর অপরিহার্য কাজকে অসম্ভব করে তুলবে, যা গাজার সামগ্রিক আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তাকে বিপদের মধ্যে ফেলবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্য বিতরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ইউএনআরডব্লিউএ। দুই মিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার গাজার প্রায় সব মানুষ ইউএনআরডব্লিউএর সাহায্য ও পরিষেবার ওপর নির্ভরশীল।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তাদের দায়ী করা উচিত। সে সঙ্গে তিনি বলেন, গাজার বেসামরিকদের জন্য টেকসই মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করতে হবে।

ইসরায়েল বারবার ইউএনআরডব্লিউএর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বিরোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীরা গাজায় হামাসের সঙ্গে যুক্ত এবং গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ১৯ জন ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ ইসরায়েলের দাবির তদন্ত করে অভিযুক্ত নয়জনকে বরখাস্ত করেছে। সংস্থাটি বলেছে যে, ইসরায়েল তাদের বিশদ অভিযোগের সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি।

প্রায় ২৫ লক্ষ ফিলিস্তিনি ইউএনআরডব্লিউএর তালিকায় নিবন্ধিত, যার মধ্যে ইসরায়েল দখলকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজার এলাকা রয়েছে। গাজার উত্তরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সামরিক অপারেশন পরিচালনা করছে। সেখানে কয়েক লাখ মানুষ হতাশাজনক অবস্থায় বসবাস করছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভোলকার তুর্ক গত শুক্রবার বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ জনসংখ্যাকে বোমা হামলা, অবরোধ এবং ক্ষুধার ঝুঁকির সম্মুখীন করছে।

অনেক ফিলিস্তিনি বিশ্বাস করেন যে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার উত্তরে মানুষের ওপর ‘হয় আত্মসমর্পণ নয়তো অনাহারে মৃত্যুর’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। গাজার উত্তরে আনুমানিক ৪ লাখ বেসামরিক ফিলিস্তিনি জোরপূর্বক স্থানান্তরের শিকার।

আরও