কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প—সে সিদ্ধান্ত নিতে আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। নির্বাচনে জয়ী হলে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে ট্রাম্প জিতলে দ্বিতীয়বারের মতো বসবেন ক্ষমতার মসনদে। তবে সর্বশেষ জনমত জরিপে বলা হয়েছে, এবার দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। খবর রয়টার্স, এপি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভোটারদের মনোজগতে এবার কয়েকটি ইস্যু প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভপাত, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন।
মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে কমলা শুরু থেকেই বলে আসছেন, ক্ষমতায় গেলে তার অগ্রাধিকার হবে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো, ক্রেতাদের সহায়তা ও ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ট্রাম্প মূল্যস্ফীতির অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আবারো ‘সাশ্রয়ী’ করার অঙ্গীকার করেছেন। জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনতে তেল উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। সুদহার কমানোর আশ্বাসও দিয়েছেন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট।
গর্ভপাতের অধিকারকে শুরু থেকেই প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছেন কমলা হ্যারিস। তিনি দেশজুড়ে প্রজনন অধিকার বিষয়ে আইনের পক্ষে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প গর্ভপাতের বিষয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এবার ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন মার্কিন জনগণ। ভোটার সংখ্যা ২৪ কোটি ৪০ লাখের মতো। এদের মধ্যে প্রায় ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যা ৫৩৮। নির্বাচনে জয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ভোট পেতে হবে। নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন টিম ওয়ালজ এবং রিপাবলিকান পার্টি থেকে আছেন জেডি ভ্যান্স।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় এবার ফল অনেকটা ধীরগতিতে আসতে পারে। কারণ অনেক অঙ্গরাজ্যে এবার ভোট গণনার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সে হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাত কিংবা পরের দিনে ভোরে ফল পাওয়া যেতে পারে।
এবারের ব্যালটে কমলা ও ট্রাম্প ছাড়াও চারজনের নাম পাবেন ভোটাররা। তারা হলেন জিল স্টেইন, কর্নেল ওয়েস্ট, চেজ অলিভার ও রবার্ট কেনেডি জুনিয়র। এর মধ্যে কেনেডি জুনিয়র ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী তার নাম প্রার্থী তালিকায় রয়ে গেছে।
ভোটের আগে গত রোববার ছিল নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন। এদিন ‘সুইং স্টেট’ বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো চষে বেড়ান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস।
সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত পাওয়া রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যারিজোনা, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলাইনা ও নেভাডা। ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ দিন সমাবেশ করেন পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ায়। অন্যদিকে কমলা প্রচারণা চালান মিশিগানে, যেখানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আরব-আমেরিকান জনগোষ্ঠীর বাস। শেষদিকের প্রচারেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অভিবাসনবিরোধী বার্তাকেই সামনে রেখেছিলেন। অন্যদিকে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এক সমাবেশে কমলা বলেছেন, নির্বাচনে জয়ী হলে গাজায় যুদ্ধ অবসানে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন।
এদিকে শেষ সময়ের জনমত জরিপ বলছে, কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যবধান অনেক কমে এসেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত রয়টার্স/ইপসোস জরিপের ফলে দেখা যায়, হ্যারিস পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ সমর্থন; ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৩ শতাংশ। হ্যারিস গত জুলাইয়ে নির্বাচনী দৌড়ে শামিল হওয়ার পর থেকে নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে সমর্থনের দিক থেকে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে হ্যারিসের সমর্থন কমতে থাকে।