দেশের প্রথম ক্যাম্পাসভিত্তিক ভ্রমণবিষয়ক সংগঠন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্ট’। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছোট-বড় নানা ভ্রমণের আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি। রয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ আয়োজনের কৃতিত্বও। পড়াশোনার তীব্র চাপে যখন শিক্ষার্থীদের অবস্থা নাজেহাল, ঠিক তখনই তাদের মনে আনন্দের খোরাক নিয়ে হাজির হয় এ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তবে ভ্রমণের পাশাপাশি মানবসেবায়ও এ সংগঠনের রয়েছে অনেক অবদান। বিভিন্ন সংকট ও সমস্যায় গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যেন এ সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের ব্রত।
ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্টের রয়েছে চারটি উইং। অর্গানাইজিং উইং, অ্যাডভেঞ্চার উইং, রিসার্চ উইং ও চ্যারিটি উইং। এর মধ্যে অর্গানাইজিং উইং ও অ্যাডভেঞ্চার উইংয়ের প্রধান কাজ ভ্রমণ আয়োজন করা। রিসার্চ উইং ট্যুরিজম সেক্টর নিয়ে গবেষণা করে। এ উইংয়ের একাধিক গবেষণাপত্রও রয়েছে। চতুর্থ উইংটি হচ্ছে চ্যারিটি উইং। এ উইংয়ের প্রধান উদ্দেশ্য গরিব, দুঃখী, নিপীড়িত ও অসহায় মানুষদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়ানো। সিলেটের বন্যায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা, নিম্ন আয়ের চা শ্রমিকদের সাহায্য করা, তাদের ছেলে-মেয়েদের প্রতি বছর শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে চ্যারিটি উইং।
অনেক অ-জনপ্রিয় ও কম জনপ্রিয় স্থানকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রেও এ সংগঠনের অনেক ভূমিকা রয়েছে। বিছনাকান্দি, কালাপাহাড়, ভোলাগঞ্জ ও টাঙ্গুয়ার হাওর ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্টের অভিযানমূলক ভ্রমণের এক অভিনব ফল। এছাড়া দর্শনীয় স্থানের জনপ্রিয়তা বাড়ানো ও মানুষকে সেখানে যাওয়ার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নেয় সংগঠনটি।
শান্তি, অগ্রগতি, ভ্রমণ, একতা ও শিক্ষা এ পাঁচটি মূলমন্ত্র নিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২৯ বছর পূর্ণ করে ৩০ বছরে পা রেখেছে ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্ট। বর্তমানে এ সংগঠনের ২৩তম কার্যনির্বাহী পরিষদের কার্যক্রম চলমান। এখন পর্যন্ত ২৩টি জাতীয় ভ্রমণ ও ১১টি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের আয়োজন করেছে এ সংগঠন। জাতীয় ভ্রমণের মধ্যে কুয়াকাটা, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা, সুন্দরবন, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গাসহ সিলেট ও সিলেটের বাইরে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোয় ভ্রমণ করেছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণে ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্ট ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণের পাশাপাশি নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মালদ্বীপসহ সার্কভুক্ত সব দেশে ভ্রমণ করেছে।
ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্ট ভ্রমণের পাশাপাশি ভ্রমণবিষয়ক ম্যাগাজিন ও অভিযাত্রিক প্রকাশ ও বিভিন্ন ধরনের সেমিনার আয়োজন করে থাকে। এছাড়া বিশ্ব পর্যটন দিবস উদযাপন, ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, চ্যারিটি, চড়ুইভাতি, বারবিকিউ, ফুড ফেস্টিভ্যাল, ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যাল, বনভোজন, দেশের সব জাতীয় দিবস উদযাপন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি ও দেশের বিভিন্ন পর্যটন জায়গা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করে আসছে। এছাড়া শাবিপ্রবির একমাত্র সংগঠন হিসেবে ‘হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী-ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্ট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম’ নামে শাবিপ্রবির অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি প্রদান করে আসছে সংগঠনটি।
সংগঠনের সভাপতি শোয়াইব মাহমুদ বলেন, ‘ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্ট আমাদের কাছে পরিবারের বাইরে আরেকটা পরিবার। এখানে আমরা সিনিয়র-জুনিয়র সবাই সুসম্পর্ক বজায় রেখে একসঙ্গে কাজ করে থাকি। সংগঠনে ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা ভ্রমণ আয়োজন ও ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে যাচ্ছি।’
ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্টের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল হাকিম বলেন, ‘ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্ট শুধু ভ্রমণই আয়োজন করে থাকে না। এর পাশাপাশি বিভিন্ন মানবসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। অনেক আগ থেকে অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি প্রদান করে এলেও সম্প্রতি হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী-ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্ট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম চালু করেছে সংগঠনটি, যা প্রশংসার দাবি রাখে।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি ‘মুভ অ্যাজ ফার ইউ উইল, লার্ন অ্যাজ মাচ ইউ ক্যান’ স্লোগানকে ধারণ করে শাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা শাহ শাহীনের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ট্যুরিস্ট ক্লাব সাস্ট।