বিশ্বের অন্যতম টেক জায়ান্ট অ্যাপলের প্রযুক্তিপণ্য বিক্রি গত অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এক দশকে প্রতিষ্ঠানটির জন্য এটাই ছিল সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিক্রি কমার ঘটনা। পাশাপাশি অ্যাপলের ডিভাইসে জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অন্তর্ভুক্তকরণ নিয়ে টানাপড়েন চলছিল। ফলে অ্যাপলের শেয়ার দর প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় মন্থর থাকবে বলে পূর্বাভাস করে ছিল বাজার পর্যবেক্ষকরা।
তবে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা ইঙ্গিত দিয়েছেন চলতি বছর বিক্রি ও মুনাফা আগের থেকে বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়া হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার পারফরম্যান্স ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
মঙ্গলবার অ্যাপলের শেয়ার দর প্রায় ৪ শতাংশ পতন ঘটে। বিশ্লেষকরা আইফোন ১৫-এর চাহিদা কমে যাওয়াকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নীতিগত পর্যায়েও বাধা কারণে অ্যাপলের জন্য গত বছর অনেকটা প্রতিকূলতা সময়ের মধ্যে ছিল। তখন গুগলের সঙ্গে বার্ষিক ২ হাজার কোটি ডলারের চুক্তিটি পড়েছিল ঝুঁকির মুখে। বিদ্যমান উদ্বেগ দীর্ঘমেয়াদি হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২৪ সালেই অ্যাপল আবারো গতিতে ফিরে পাবে বলে আশাবাদী তারা।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ অনুসারে, অ্যাপলের স্মার্টফোন বিক্রি গত বছর কমলেও প্রিমিয়াম প্রডাক্টের বাজার বেড়েছে ৬ শতাংশ। আর প্রিমিয়াম প্রডাক্টের বাজারেই মূলত অ্যাপলের একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। গত বছর আইফোনের মডেলগুলোর দাম না বাড়ালেও চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটি নতুন আইফোনের মডেলগুলোর দাম বাড়তে পারে। এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ডিভাইসের বিক্রয় কম হলেও আয় বাড়াবে।
জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া জানিয়েছে, অ্যাপলের ওয়াচ, এয়ারপডস, ম্যাকবুক যারা সরবরাহ করে, সেসব সরবরাহকারীকে কম যন্ত্রাংশ তৈরির নির্দেশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপলের জনপ্রিয় এসব পণ্যের চাহিদা কম থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে মনে করেছেন প্রযুক্তিবিশ্লেষকরা। যদিও এ বিষয়ে অ্যাপলের বক্তব্য জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটি তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
অ্যাপলের চলতি বছর আনতে যাওয়া নতুন প্রডাক্টগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিশন প্রো ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেট, নতুন আইপ্যাড। এছাড়া আশা করা হচ্ছে অ্যাপলের ডিভাইসের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর সফটওয়্যার যুক্ত করা হবে চলতি বছরই। ফলে বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রডাক্টে এআইয়ের অন্তর্ভুক্ত ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা দেরি করেছে। কিন্তু এমন কোনো উদাহরণও তৈরি করেনি, যা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে। তাছাড়া আইফোনে ছবি তোলার অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করতে নিজস্ব ইমেজ সিগন্যাল প্রসেসর (আইএসপি) তৈরি করার উদ্যোগও নিয়েছে অ্যাপল।
গত বছর অ্যামাজনের শেয়ার দাম ৫০ শতাংশ ও ফেসবুকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেটার শেয়ার দর ৬৩ শতাংশ কমেছে। সে হিসাবে অ্যামাজন ও ফেসবুকের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে অ্যাপলের শেয়ার। যদি অ্যাপল গত বছরের অনুপাতে ব্যয় করে, তাহলে ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।