বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের আশা আগে শেষ হয়ে গেলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিটের জন্য শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ম্যাচটিকে তাই বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও তার সহযোদ্ধারা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের ইতিহাস গড়া ‘টাইমড আউট’কাণ্ডের এ ম্যাচে শ্রীলংকাকে তিন উইকেটে হারিয়ে টেবিলের নয় থেকে সাত নম্বরে উঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। এই হারে এবারের আসর থেকে বিদায়ও নিশ্চিত হলো ছিয়ানব্বইয়ের চ্যাম্পিয়নদের।
বিশ্বকাপে পাঁচবারের চেষ্টায় এই প্রথম শ্রীলংকাকে হারাতে পারল বাংলাদেশ। দুই দলের আগের চারবারের মুখোমুখিতে তিনবারই জিতেছে সিংহলিজরা। এছাড়া ৫৪ ওয়ানডের মুখোমুখিতে এটা বাংলাদেশের দশম জয়। লংকানরা জিতেছে ৪২টি।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে গতকাল শ্রীলংকাকে ৪৯.৩ ওভারে ২৭৯ রানে অলআউট করার কৃতিত্ব দেখায় বাংলাদেশ। বিপর্যয়ের মধ্যে চারিথ আসালঙ্কার সেঞ্চুরিতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। রান তাড়া করতে নেমে ৪১ রানে ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাসকে হারালেও স্নায়ুচাপ জয় করে শেষ পর্যন্ত ৫৩ বল বাকি থাকতে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত ১০১ বলে ১২ বাউন্ডারিতে ৯০ ও সাকিব ৬৫ বলে ১২ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৮২ রান করে দলের জয়ের কাণ্ডারি। এর আগে বল হাতে ৫৭ রানে দুই উইকেট নেন সাকিব। চৌকস নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বাংলাদেশ দলনায়ক।
টস জিতে বোলিং নেয়া বাংলাদেশকে প্রথম ওভারেই সাফল্য এনে দেন পেসার শরিফুল ইসলাম। তার বলে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দেন কুশল পেরেরা। বামদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মুশফিক। শরিফুলের পর লংকা শিবিরে পরপর দুই ওভারে আঘাত হানেন দুই সাকিব—অধিনায়ক সাকিব ও তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। তাতে লংকানদের স্কোর হয়ে যায় ৭২/৩। শরিফুলের ব্রেকথ্রুর পর লংকান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। লং-অনে শরিফুলকে ক্যাচ দেন কুশল। ১৩তম ওভারে পাথুম নিশাঙ্কাকে বোল্ড করেন তানজিম সাকিব। এটাই বিশ্বকাপে তার প্রথম উইকেট।
৭২ রানে তিন উইকেটের পতন ঘটে শ্রীলংকার। এরপর আসালঙ্কা দারুণ এক সেঞ্চুরিতে দলের সংগ্রহটা পৌনে তিনশ পার করান। আসালঙ্কা ১০৫ বলে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কার সাহায্যে ১০৮ রানে অপরাজিত থাকেন। বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচ খেলা তানজিম সাকিব ৮০ রানে তিনটি, সাকিব ৫৭ রানে দুটি ও শরিফুল ৫২ রানে দুটি উইকেট নেন।
লংকান ইনিংসের ২৫তম ওভারে সাকিবের বলে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। শ্রীলংকার স্কোর তখন ১৩৫/৪। নতুন ব্যাটসম্যান ম্যাথুজ উইকেটে গিয়ে দেখলেন, তার হেলমেটের স্ট্র্যাপে একটা সমস্যা আছে। তিনি ড্রেসিং রুমে ইশারা করলেন নতুন হেলমেটের জন্য অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের মাধ্যমে নতুন হেলমেট দেরি হয়ে গেল। এই সময় ম্যাথুজের বিপক্ষে ‘টাইমড আউটে’র আপিল করে বাংলাদেশ। আম্পায়ার তাকে ‘টাইমড আউট’ দেন, যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম নজির।
সাবেক অধিনায়ক ম্যাথুজ আম্পায়ার ও বাংলাদেশ অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেও তাদের মন পরিবর্তন করতে পারেননি। ফলে তাকে মাঠ ছাড়তে হয় কোনো বল না খেলেই। পরে সাকিবকে আউট করে শান্তর সঙ্গে তার ১৬৯ রানের জুটি ভাঙেন ম্যাথুজ। নিজের পরের ওভারে শান্তকে বোল্ড করেন তিনি। আবার এই ম্যাথুজের করা ৪২তম ওভারের প্রথম বলে উইকেটকিপারকে ফাঁকি দিয়ে লেগে বাউন্ডারি মেরে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন তানজিম সাকিব।
টাইমড আউটের শিকার হওয়া বিধ্বস্ত ম্যাথুজ প্রাণান্ত চেষ্টা করেও বাংলাদেশকে রুখতে পারেননি। ৭.১ ওভারে ৩৫ রানের খরচায় দুটি উইকেট নেন তিনি। এছাড়া টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি দিলশান মাদুশঙ্কা নেন ৬৯ রানে তিন উইকেট। ৪৪ রানে দুই উইকেট নেন স্পিনার মহিশ থিকসানা।
এই জয়ে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পথ সুগম হলো বাংলাদেশের। নেদারল্যান্ডস (নিট রানরেট -১.৩৯৮) ও শ্রীলংকাকে (নিট রানরেট -১.১৬০) টপকে টেবিলের সাতে উঠেছে টাইগাররা (নিট রানরেট -১.১৪২)। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার চেয়ে নেদারল্যান্ডস এক ম্যাচ কম খেলেছে।
বিশ্বকাপ টেবিলের শীর্ষ সাত দল ও স্বাগতিক হিসেবে পাকিস্তান পাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলংকা: ৪৯.৩ ওভারে ২৭৯/১০ (আসালঙ্কা ১০৮, পাথুম ৪১, সাদিরা ৪১; তানজিম ৩/৭০, শরিফুল ২/৫১, সাকিব ২/৫৭)। বাংলাদেশ: ৪১.১ ওভারে ২৮২/৭ (শান্ত ৯০, সাকিব ৮২; মাদুশঙ্কা ৩/৬৯, ম্যাথুজ ২/৩৫, থিকসানা ২/৪৪)। ফল: বাংলাদেশ তিন উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।