বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে জনপ্রিয় গানের তালিকায় স্থান পেয়ে গেছে লোকসংগীত। সেই লোকসংগীতকে টিকিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন সংগীতপ্রেমী শিক্ষার্থীরা। কেউ দলবদ্ধভাবে নিয়মিত করে যাচ্ছেন গান। আবার কেউবা তৈরি করেছেন নিজস্ব কোনো ব্যান্ড। তেমনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী রিপন প্রামাণিক তৈরি করেছেন তার নিজস্ব গানের দল ‘সপ্তক’। ক্যাম্পাসের স্টেডিয়াম মার্কেটে প্রতিষ্ঠা করেছেন সপ্তক একাডেমি, যেখানে শিক্ষার্থীদের গান ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র শেখানো হয়।
২০১২ সাল থেকে গানের সঙ্গে পথচলা শুরু হয় রিপনের। তখন থেকেই তার এলাকা রাজশাহীর বাগমারার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। ২০১৪ সালে রাজশাহীতে আসেন মূলত ভালোভাবে গান শেখা, গান করা এবং উচ্চতর পড়াশোনার জন্যে। শহরে সংগীতশিল্পী হিসেবে তার পরিচিতি শুরু হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার মাধ্যমে। এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। নিজস্ব ব্যান্ড গড়ে তুলতে খুঁজতে থাকেন তার মনের মতো দক্ষ মিউজিশিয়ানদের। এরপর একে একে বিভিন্ন প্রফেশনাল কাজ করা মিউজিশিয়ানদের সমন্বয়ে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সপ্তক’।
ছয় বছর ধরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সুনাম অর্জন করেছে রিপনের গানের দল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে গান করেন তারা। সমসাময়িক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের হীরকজয়ন্তীতে গানের তালে মাতিয়েছেন দর্শকদের। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাই, নবীনবরণ, হল সমাপনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে ‘সপ্তক’। শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, তাদের সুনাম ছড়িয়েছে পুরো রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, করপোরেট প্রোগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সংগীত পরিবেশন করেন তারা।
বর্তমানে সপ্তকের সদস্য রয়েছেন ছয়জন। তাদের তিনজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী। বাকিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের। এর মধ্যে প্রধান কণ্ঠশিল্পী, গিটার ব্যাঞ্জ ও ম্যান্ডোলিন বাদক হিসেবে রয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা রিপন প্রামাণিক, কি-বোর্ড বাদক ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আছেন রওশান রোমিও, ড্রামস ও অক্টোপ্যাড প্লে করেন জনি ইসলাম, বেজ গিটার প্লে করেন মহিদুল ইসলাম, পারকিউশন করেন সিজার ও বাঁশিবাদক হিসেবে আছেন রিপন আলী। রিপন প্রামাণিক ও রিপন আলী একই সঙ্গে লোকসংগীতে মাস্টার্স করছেন এবং তারা খুব ভালো বন্ধুও।
সপ্তক নিয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠাতা রিপনের সঙ্গে। রিপন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি মূলত লোকসংগীতসহ সব ধরনের গান করার। লোকসংগীত, ব্যান্ড ও আধুনিক গান বেশি করি আমরা। এছাড়া রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, হিন্দি ও ইংলিশ গানও করে থাকি। আর যেহেতু আমি সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করি, শুধু আমি না আমার ব্যান্ডের তিনজন সদস্য মিউজিকের শিক্ষার্থী, সেজন্যই হয়তোবা আমরা সব ধরনের ভালো গান করার চেষ্টা করি। ক্ল্যাসিক্যাল, সেমি ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকও আমরা নিজেরা খুব পছন্দ করি এবং চর্চা করি। লোকসংগীত আমাদের দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি। লোকসংগীত নিয়ে সারা পৃথিবী ভ্রমণ করতে চাই। বিশ্বকে জানাতে চাই আমাদের দেশের সুর কতটা সমৃদ্ধ।’
রিপনের নিজের লেখা, সুর করা ও গাওয়া একটি গানও রয়েছে। যা সপ্তকের গান হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করা হয়। সামনে দুর্গা পূজা উপলক্ষে তার নতুন আরো একটি গানের কাজ চলছে। পূজার আগের দিন রিলিজ করা হবে গানটি। রিপন নিজেই গানটির সুরকার, সংগীত আয়োজক ও গায়ক।
লোকসংগীতের ভক্ত সপ্তকের আরেক সদস্য নূর আহসান মৃদুল বলেন, ‘লোকসংগীত আমাকে গ্রামবাংলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। খাঁটি বাঙালি হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। রাবির সপ্তক গানের দলটি এ চর্চাই করে সবচেয়ে বেশি।’