ছয় খাতে বাড়তি ৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করবে এনবিআর

হাফিজুর রহমান

আয়কর থেকে চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আয় করতে পেরেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ধারণা করা হচ্ছে, ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে এবার আরো ১৫ হাজার ৪০০ কোটি বেশি আয় করা সম্ভব হবে। এর পরও লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে অতিরিক্ত আয় করতে হবে ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। ঘাটতি এ অর্থ আয়করের ছয় খাত থেকে ওঠানোর পরিকল্পনা করছে এনবিআর।

ডলার সংকট কাটাতে আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা নিচ্ছে সরকার। এ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে সংস্থাটির একটি রিভিউ মিশন বাংলাদেশ সফর করছে। প্রতিনিধি দলটি গতকাল এনবিআরের ভ্যাট, আয়কর ও শুল্কনীতি সদস্য ও তাদের দলের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। লক্ষ্য ঘাটতির ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আয়ে ছয়টি খাত নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানানো হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে ভূমি নিবন্ধন, ভ্রমণ, তামাকজাত পণ্য, পরিবেশ সারচার্জ ও সর্বনিম্ন কর, কর আওতা বৃদ্ধি এবং বকেয়া আহরণ। 

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয়কর থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে, গত অর্থবছরের চেয়ে যা ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি। এ বিষয়ে আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে এনবিআর জানিয়েছে, তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপে স্বাভাবিকভাবেই ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ রাজস্ব আয় বাড়বে। সে হিসাবে আগের অর্থবছরে আয় হওয়া ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার চেয়ে এবার ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আসবে। আইএমএফের দেয়া লক্ষ্যপূরণে এনবিআরকে অবশ্য আরো ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করতে হবে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত এ রাজস্ব আরণের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে এনবিআর। 

রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা তুলে ধরে আইএমএফের প্রতিনিধি দলকে এনবিআর জানিয়েছে, নতুন আয়কর আইনে কয়েকটি খাতে করহার বাড়িয়েছে এনবিআর এবং কিছু উল্লেখযোগ্য সংশোধনও করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বেভারেজের টার্নওভার ট্যাক্সের হার বৃদ্ধি, যেখানে ১ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় সম্ভব। বিভিন্ন সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করায় সেখান থেকেও ২৫০ কোটি টাক বেশি রাজস্ব আয় হবে। এছাড়া পরিবেশ সারচার্জ আরোপ করায় আয় হবে ৫০০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব।

আইএমএফের সুপারিশ অনুযায়ী আয়কর উইং পুনর্গঠনের কাজও ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে বলে প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে এনবিআর। পাশাপাশি কমপ্লায়েন্স ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য আয়কর গোয়েন্দা, উইথহোল্ডিং ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট, ই-ট্যাক্স ও আন্তর্জাতিক কর ইউনিট তৈরি করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। আয়কর থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথাও জানিয়েছে সরকারের রাজস্ব সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে মানুষকে সচেতন করা, আয়কর রিটার্ন বাড়ানো, ভালো প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইনে সহজেই রিটার্ন জমার পোর্টাল ইত্যাদি। 

এদিকে বিদেশীদের আয়ের ওপর কর অব্যাহিত, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের করছাড়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অব্যাহতির ফলে আয়কর আহরণের লক্ষ্য পূরণ হবে কিনা সংশয় জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া নতুন আয়কর আইনে ভূমি নিবন্ধন কর বাড়ানো হলেও সম্প্রতি এক এসআরওর মাধ্যমে সেখান থেকে সরে এসে এনবিআর। এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নতুন আয়কর আইনে বিভিন্ন খাতে এনবিআর কর বাড়িয়েছে। বিভিন্ন কারণে আবার অনেক জায়গা থেকে সেই হার কমিয়েছে, ভবিষ্যতেও হয়তো কমাবে। ফলে যেসব খাতে করহার বাড়বে বলে মনে করছে এনবিআর সেখান থেকে প্রত্যাশিত কর আসবে না। তাছাড়া নানা খাতে কর বাড়িয়ে স্থির থাকতে পারবে না জেনেও এগুলোকে অবলম্বন হিসেবে দেখাচ্ছে এনবিআর।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘এনবিআর কোন জায়গা থেকে কর আহরণ বাড়তে পারবে তার হোমওয়ার্কগুলো ঠিক নেই। তা না করে মাঝপথে এসে যদি আইনগুলো সংশোধন করতে হয় তাহলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় হবে না। দেশে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও আয়ের ওপর কর অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় ব্যাহত হবে। প্রচুর রেয়াত দেয়ার কারণে ন্যায্য রাজস্ব আহরণও ঠিকমতো করা যাবে না।’ 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন