বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন

বিদ্রোহী কবির সাহিত্যকর্মে নামাঙ্কিত বাস

বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী প্রতিভা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সময়ের আবর্তে কৈশোরের দুখু মিয়াই হয়ে ওঠেন বাংলা সাহিত্যের অমর ব্যক্তিত্ব, দেশের জাতীয় কবি।

বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী প্রতিভা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সময়ের আবর্তে কৈশোরের দুখু মিয়াই হয়ে ওঠেন বাংলা সাহিত্যের অমর ব্যক্তিত্ব, দেশের জাতীয় কবি। তার পরলোকগমনের তিন দশক পর কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালে স্থাপন করা হয় তারই নামে বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো নাম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনাগুলোর নামকরণ করা হয়েছে নজরুলের বিভিন্ন সাহিত্যকর্মের নামে। ব্যত্যয় হয়নি বাসের নামকরণেও। বাসগুলোর এমন নামকরণ বাড়িয়েছে  বিদ্রোহী নটরাজের আত্মিক বন্ধন। 

ময়মনসিংহ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত চলাচল করে সাম্যবাদী, ধূমকেতু, প্রভাতী, নতুন পথিক, রণভেরী, প্রলয় শিখা, দূরের বন্ধু, আগমনী নামের বাসগুলো। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত ‘সাম্যবাদী’ ও ১৯৩০ সালে প্রকাশিত ‘প্রলয় শিখা’ কাব্যগ্রন্থ দুটোর নামে রয়েছে দুটো বাসের নাম। ‘ধূমকেতু’ কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ১১ আগস্ট ১৯২২ থেকে মার্চ ১৯২৩ পর্যন্ত প্রকাশিত একটি অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকার নাম, এ নামেও একটি বাসের নামকরণ করা হয়েছে। ‘ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠ রে! ঐ ডাকে যুঁই শাখে ফুল-খুকি ছোট রে।’ ছোটবেলায় আমাদের বহুল পঠিত এই কবিতার নামেও রয়েছে একটি বাসের নাম। ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলাচলকারী একমাত্র বাসের নাম ‘ঝিলিমিলি’, যা কাজী নজরুল ইসলাম রচিত প্রথম নাট্যগ্রন্থের নাম। ১৯২৬ সালে প্রকাশিত ‘ঝিঙে ফুল’ কাব্যগ্রন্থের নামে, নজরুল রচিত প্রথম উপন্যাস ‘বাঁধন হারা’, ‘অগ্রপথিক’ ও ‘বিদ্রোহী’ কবিতার নামে নামকরণ করা হয়েছে শিক্ষকদের বাসের নাম। স্থানীয়ভাবে যাতায়াতকারী মাইক্রোবাসের নামকরণও করা হয়েছে নজরুল সৃষ্টিকর্ম থেকেই ‘কান্ডারী’ ও কবিতা ‘দুরন্ত পথিক’।

এ বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করেছেন তানজিল আহমেদ, এখন শিক্ষকতা করছেন। এক সময় যাতায়াত করেছেন শিক্ষার্থী বাসে, এখন শিক্ষক বাসে। উভয়ই নজরুল সাহিত্যকর্মের নামে নামাঙ্কিত। তানজিল বলেন, ‘এ এক অন্য রকম অনুভূতি। নজরুলের সব সৃষ্টি সবসময় আমাকে অনুপ্রাণিত করে। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে শিক্ষক হিসেবে নজরুলের নামে নামকৃত সব সৃষ্টির সংস্পর্শ আমাকে পুলকিত ও উদ্দীপ্ত করে। সব কর্মে অন্য রকম এক স্পৃহার সঞ্চার করে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘‌নামকরণের ক্ষেত্রে এ ধারা বজায় রাখার একটি লক্ষ্য হলো, নজরুলের রচনাবলির সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রী ও বৃহৎ বাঙালি সমাজের পরিচয় করিয়ে দেয়া। এতে ব্যক্তির প্রতি যেমন শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়, তেমনি রচনাবলির প্রতিও সর্বজনের আগ্রহ সৃষ্টির উদ্দেশ্য মেটে।

আরও