হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

পুরনো ছবি। বণিক বার্তা।

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ। সাধারণত প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুনের যেকোনো সময় ডিম ছাড়ে মাছেরা। এ বছর কয়েক দফায় নমুনা ডিম ছাড়লেও রোববার (১৮ জুন) মধ্যরাতে বহুল প্রতীক্ষিত ডিম ছাড়ে মা মাছ

মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, প্রাকৃতিকভাবে হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার জন্য পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথিকে বেছে নেয় কার্পজাতীয় মাছেরা। পাশাপাশি পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবাহেরও প্রয়োজন হয়। এ বছরের এপ্রিল মাস শুরু হওয়ার পর এরই মধ্যে পাঁচটি ‘‌জো চলে যায়। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়াসহ নদীতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ। সশেষ রোববার দিবাগত রাতে মা মাছ পুরোপুরি ডিম ছাড়ে। 

একই সময়ে নদীর স্থানীয় ও খাগড়াছড়ি, মানিকছড়িসহ নদীটির উজানে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি ঢল নামবে এবং নদীতে ফেনাসহ পানি প্রবাহিত হবে। ঠিক এই সময়ে পূর্ণ জোয়ার শেষে অথবা পূর্ণ ভাটা শেষে পানি যখন স্থির হয়, তখনই মা মাছ ডিম ছাড়ার উপযুক্ত সময়

হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রোববার মধ্যরাতে হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় মা মাছ। নদীতে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের সময়ে পুরোদমে নদীর বিভিন্ন স্থানে ডিমের উপস্থিতি দেখা যায়। ডিম আহরণের জন্য অনেক দিন ধরে মৎস্য বিভাগ জেলেরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। ডিম ছাড়ার কারণে সবমুখর পরিবেশে রাত থেকেই নদীতে দল বেঁধে ডিম সংগ্রহ করতে নেমে পড়েছে সংগ্রহকারীরা। 

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম জানান, হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। এটা দেশের মৎস্য অর্থনীতির জন্য একটি বড় খবর। গড়দুয়ারা এলাকা থেকে উত্তর মাদার্শা এলাকার মাঝামাঝিতে সবচেয়ে ভালো ডিম পাচ্ছেন সংগ্রহকারীরা। আশা করি ডিম সংগ্রহের পরিমাণ অতীতের যেকনো সময়ের তুলনায় বেশি হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানা সংগ্রহের পর এসব ডিম আগে থেকেই প্রস্তুত অস্থায়ী হ্যাচারিতে রেখে ডিমগুলো ফোটানো হবে। এরপর প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলা হাটে এসব ডিম বিক্রি করবে সংগ্রহকারীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৎস্যচাষী ব্যবসায়ীরা হালদার পোনা সংগ্রহের জন্য প্রতি বছর চট্টগ্রামে আসেন। এ বছর অন্তত ৩০০ নৌকায় ৫০০ থেকে ৬০০ সংগ্রহকারী হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করছে। ডিম থেকে পোনা সংগ্রহের পর প্রতি কেজি পোনা লক্ষাধিক টাকায় বিক্রির রেকর্ড রয়েছে।

আরেক হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরিয়া হালদার পোনা সম্পর্কে বণিক বার্তাকে বলেন, হালদার প্রাকৃতিকভাবে আসা রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস মাছের পোনা মানসম্মত। পুকুর, জলাশয় কিংবা খামারের মাধ্যমে মাছ চাষের জন্য হালদার পোনা সবচেয়ে বেশি লাভজনক। এ কারণে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মৎস্যচাষীরা হালদার পোনার জন্য সারাবছরই অপেক্ষায় থাকেন। হালদার কার্পজাতীয় মাছ দেশের স্য খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন