সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি বলেছেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহে কাব্য চর্চার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মহাকাব্যের কবি থেকে শুরু করে ছড়ার জাদুকর এ বৃহত্তর ময়মনসিংহে খুঁজে পাওয়া যায়। সুকুমার রায়ের জাদুকর পিসি সরকার তিনিও বৃহত্তর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেছেন। এ বাংলার প্রথম নারী কবি এখানকার সন্তান। রামায়ণ, মলুয়া সুন্দরী, দস্যুকেনারামসহ উল্লেখযোগ্য রচনা এ অঞ্চল থেকে উৎপত্তি। মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু এখান থেকে ছাপা হয়েছে। শেরপুর জেলা থেকে পূর্ববঙ্গের প্রথম প্রেস প্রকাশিত হয়েছিল। আবুল কালাম, আবুল মনসুর, সত্যজিৎ রায়সহ বহু সাহিত্যিক দাপটের সঙ্গে বিচরণ করেছেন এ অঞ্চলে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কবি নজরুল, ছকিনা বিবি সাহিত্যকর্মকে সমৃদ্ধ করে গেছেন, কাব্য রচনায় ধন্য করেছেন। নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের জারি, সারি, বাউল গান প্রাচীন যুগের সংস্কৃতির এ জনপদ সবার নজর কেড়েছে। প্রতিমন্ত্রী গতকাল নগরীর টাউন হল প্রাঙ্গণে অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাহিত্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায়, বাংলা একাডেমির সমন্বয়ে ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এ বিভাগীয় মেলার আয়োজন করা হয়। তৃণমূল পর্যায়ের সাহিত্যিকদের সৃষ্টকর্ম জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ মেলার আয়োজন।
ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর থেকে আগত লেখক, সাহিত্যিক, গবেষক সম্প্রদায় দুদিনব্যাপী এ সাহিত্য মেলায় অংশ নেন। তারা তাদের সাহিত্যকর্মকে বিশ্বের দুয়ারে তুলে ধরতে অঞ্চলভিত্তিক স্টল আকারে এখানে উপস্থিত হন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাসের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘জাতিগত বিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র আমরা পেয়েছি। আমরা জানি, জাতিগত বিবর্তনের শুরুতেই আমাদের ভাষা একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। আমি যে কথা বলছি এটাও সাহিত্য। আমি বলছি আপনার শুনছেন। আপনাদের সহিত আমার অর্থাৎ অন্যের সহিত আমার। নিজের সহিত নিজের। এটাও সাহিত্যের অংশ। সাহিত্য হচ্ছে একের সঙ্গে অন্যের যুক্ত করা এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক, আদান-প্রদান, যোগাযোগ সৃষ্টি করা। সারা বিশ্বে সাহিত্যের উদ্ভব এভাবেই।’ তিনি বলেন, ‘দীনেশ চন্দ্র সেনের মৈমনসিংহ গীতিকা বিখ্যাত। বাংলা ভাষার যে বয়ান তা দীনেশ চন্দ্র সেন এ গীতিকায় উপস্থাপন করেছেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাহিত্যকর্ম শুধু দেশেই নয়, এটি বিশ্বেও সমাদৃত। এ মেলার মাধ্যমে সাহিত্যপ্রেমীদের সাহিত্যকর্মে আরো উদ্বুদ্ধ করবে, এ প্রত্যাশা রাখি।’ উদ্বোধনী আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক (সাবেক সচিব) কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী, যুগ্মসচিব মো. মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. এহতেশামুল আলম বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।