আইএমএফের শর্ত, ব্যাংক খাতের সংস্কার ও ভ্রান্ত উন্নয়ন মডেল

ড. আর এম দেবনাথ

আজকে এই অফিস, কালকে আরেক অফিস—এ ধরনের ‘‌মুভমেন্ট’ দেখে বুঝতে পারছি না কে বিপদে আছে—আমরা না ‘‌আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল’ (আইএমএফ)। দৃশ্যত আমরা একটু অস্বস্তিতে আছি। আছি বলেই কিছুটা স্বস্তির জন্য লোন নেয়া হয়েছে আইএমএফ থেকে। কত ডলারের লোন? মাত্র ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন সমান শতকোটি) ডলার। তাও দেয়া হবে তিন বছরে। টাকার অংকে বছরে কত? হবে মাত্র ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকা। আমাদের যে অর্থনীতি, অর্থনীতির যে আকার সে তুলনায় ‌আইএমএফের লোনের অংক খুব বেশি নয়। কিন্তু এই লোন নিয়েই হয়েছে এখন যত সমস্যা। সমস্যা মানে লোনের অনেক শর্ত আছে। সব আমাদের মানতে হবে। কোন শর্ত, কবে, কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে তা পুর্বনির্ধারিত। তা প্রতি মুহূর্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে তারা। সে সূত্রেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের একটি দল এখন বাংলাদেশে, মানে ঢাকায়। তারা আজ এ সরকারি অফিসে যাচ্ছে তো কাল অন্য অফিসে। কখনো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অফিসে, কখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ে, আবার কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে। কখনো জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে, কখনো কৃষি মন্ত্রণালয়ে। কত প্রশ্ন তাদের! আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে গলদ্গর্ম প্রায়। এ-সংক্রান্ত খবর প্রতিদিন কাগজে পড়ছি। এতে একটা উপকার আমাদের হচ্ছে। অনেক পরিসংখ্যান/তথ্য যা আমরা জানতাম না তা জানতে পারছি। সরকারের সত্যিকারের অবস্থান কী তাও জানতে পারছি। অনেক তথ্য! এমনকি অনেক গোপন তথ্য বা চাপা দেয়া পরিসংখ্যানও আমরা পাচ্ছি। এটা আমাদের লাভ। কিন্তু আইএমএফের লাভ কী? আইএমএফ আসলে কী চায়? মোটা দাগে আমার মনে হয় তারা তিন-চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। খবরের কাগজ পড়ে মনে হয় তারা বলছে, তোমাদের রাজস্ব বাড়াতে হবে, রাজস্ব আদায় তোমাদের ভালো নয়। রাজস্ব প্রশাসন ঢেলে সাজাও। কর মৌসুমের সংস্কৃতি থেকে তোমরা বেরিয়ে আসো। দুই নম্বরে তারা চায় ভর্তুকির সংস্কৃতি ভাঙতে। তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস, সার ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রদত্ত ভর্তুকি ধীরে ধীরে তুলে দিতে হবে। আবার তারা এও বলছে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। এ স্ববিরোধী অবস্থানে রয়েছে তারা। তৃতীয় যে বিষয়টির ওপর তারা গুরুত্ব দিচ্ছে তা হচ্ছে ব্যাংক খাতে সুশাসন। সেখানে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে, কারণ এর পরিমাণ খুব বেশি। সুদের হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। আমানত ও ঋণের ওপর সুদের হার বাজার ঠিক করবে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের হিসাবায়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে করতে হবে। ব্যাংকের মূলধন, প্রভিশন (সংরক্ষণ) পর্যন্ত হতে হবে। এখন অনেক ব্যাংকের পর্যাপ্ত মূলধন নেই। অনেক ব্যাংকের পর্যাপ্ত সংরক্ষিত ফান্ড নেই যা দিয়ে জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করা যায়, খেলাপি ঋণের বোঝা টানা যায়। বিশেষ করে তাদের নজর খেলাপি ঋণের ওপর এবং ব্যাংক মালিকদের অতিরিক্ত ক্ষমতা খর্ব করার ওপর। মোটা দাগে আমার কাছে মনে হয় এ হচ্ছে ‌আইএমফের শর্ত তালিকা, অবশ্যই ছোটখাটো শর্ত বাদে। এটা ভিন্ন বিষয়। 

আইএমএফের শর্তাদির ওপর অনেক কথা হতে পারে। ফলাফল কী হবে তা নিয়েও অনেক কথা হতে পারে। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের মিশ্র, কোথাও কোথাও তিক্ত। যেমন ব্যাংক খাতে তাদের আগেকার পরামর্শ। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে আইএমএফের মনে হয় যে সরকারি ব্যাংকগুলো চলা উচিত স্বাধীনভাবে। তারা হবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। অতএব করণীয় কী? প্রথম করণীয় হচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা। এতে গঠন হবে বোর্ড, বোর্ড করে দেবে মালিক হিসেবে সরকার। বাকি কাজ করবে বোর্ড। দৈনন্দিন ব্যাংক পরিচালনায় বোর্ডই নেতৃত্ব দেবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ, কর্মকর্তাদের পদায়ন-পদোন্নতি, ঋণের সিদ্ধান্ত ইত্যাদি ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্ত হবে চূড়ান্ত। সে মোতাবেক আইএমএফের পরামর্শে বহু টাকা বেতন-ভাতার প্রতিটি সরকারি ব্যাংকে ‘‌এমডি’ নিয়োগ দেয়া হয়। ব্যাংকে ব্যাংকে বসানো হয় নামিদামি ‘‌কনসালট্যান্ট’ অনেক পারিতোষিকে। এদের কাজ হচ্ছে, ব্যাংকগুলোকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রপান্তর করা এবং ওই কোম্পানি কীভাবে চলবে সে ব্যাপারে সুপারিশ করা। বলা বাহুল্য, এ মূল্যবান কাজটা তারা করে। ফলে সব সরকারি ব্যাংক ‘‌জাতীয়করণের আওতা’ থেকে বের হয়ে আজ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। ব্যস, এ পর্যন্তই। কোনো সরকারি ব্যাংকের শেয়ারই শেয়ারবাজারে ক্রয়-বিক্রয় হয় না। ঠিক আছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে ফলাফল কী? সরকারি ব্যাংকগুলো কি তাদের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন (এমএ) এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন (এএ) মোতাবেক চলছে—যেমন চলে অন্যান্য ‘পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি’? না, সেভাবে তারা চলতে পারছে না। কারণ? কারণ হচ্ছে সরকারি ভিন্ন পদক্ষেপ। সরকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভেতরে আরেকটি বিভাগ সৃষ্টি করে যার নাম ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এটি এক সময় ছিল। প্রথমবারের আওয়ামী লীগ সরকার তা তুলে দেয় অপ্রয়োজনীয় বলে। কিন্তু পরে আবার একে পুনঃস্থাপন করে। শুরু হয় দ্বৈত শাসন। ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের, ব্যাংকের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণের ভার বা আইনি দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। এর জন্য জবরদস্ত একটি আইন রয়েছে। তার নাম ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১। এতে প্রচুর ক্ষমতা দেয়া আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এদিকে মন্ত্রণালয় এখন সরকারি ব্যাংকের বোর্ড নয় শুধু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ইত্যাদি সব পদেই নিয়োগ এবং পদোন্নতি দেয়। দৈনন্দিন কাজে তারা হাত দেয়। অথচ এসব করার কথা তাদেরই কর্তৃত্বে করা/গঠিত বোর্ডের। কিন্তু বোর্ড এখন সাক্ষী গোপাল। সরকারি ব্যাংকগুলো এখন কার্যত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটা ‘অ্যাপেনডিকসে’ পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বৈত শাসনে তারা পর্যুদস্ত। অথচ খেলাপি ঋণের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে। এক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা বা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো দায়িত্ব নেই। সব খবরদারি সরকারি ব্যাংকের ওপর। সব বদনাম তাদের, আর সবাই সাধু। এসব দেখে কী মনে হয়? মনে হয় না কি যে আইএমএফের ভালো পদক্ষেপকেও ব্যর্থ করতে আমাদের প্রশাসন অত্যন্ত পারদর্শী? তা না হলে ব্যাংকের অবস্থা এমন কেন? যেখানে ব্যাংকগুলো চলার কথা ব্যাংকের ‘‌এমএ/এএ’ অনুসারে, সেখানে তা হচ্ছে না কেন? সরকারি ব্যাংকের বোর্ডগুলোকে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেয়া হচ্ছে না কেন? যা হচ্ছে সবই কাগজে-কলমে। অথচ দিন দিন ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, সেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো দায়িত্ব নেই। দায়িত্ব সব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ডের ও কর্মকর্তাদের।

এত কথা/অভিজ্ঞতার কথা এখানে কেন উল্লেখ করলাম? কারণ কাগজে দেখছি, আইএমএফ শর্ত দিয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ সংশোধন করতে হবে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা, খেলাপির শাস্তি/সাজা, ব্যাংক মালিকদের ক্ষমতা, তাদের প্রতিনিধিত্ব ইত্যাদি বিষয় পুনর্বিবেচনা করে ব্যাংক কোম্পানি আইনটি সংশোধন করতে হবে অচিরেই। এটি নিশ্চিত করার জন্য আইএমএফ জানতে চেয়েছে কী কী সংশোধনীতে আছে। সরকার তা দিতে/বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ এটি এখন সংসদে যাচ্ছে, তাই এ সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। যুক্তি আছে বলার মধ্যে। এ অবস্থায় সংশোধনীতে কী কী আছে তা বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে একটি ব্যাপারে মন্তব্য করাই যায়। বিষয়টি হলো নীতিগত। আইএমএফ মনে করছে ব্যাংকের সুশাসনের বিষয়টি আইনি সমস্যা। খেলাপি ঋণ, পর্যাপ্ত মূলধন, পর্যাপ্ত সংরক্ষণ ইত্যাদি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে আইন বদলালে, আরো কঠোর করা হলে। এখানেই প্রশ্ন। কী মনে হয়? আইন সংশোধন করলেই কি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান হবে, সরকারি ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে? বিষয়টি কি এতই সহজ মনে হয়? আসলেই কি আইনি সমস্যার জন্য ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না?

শুধু আইনি সমস্যার জন্য ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না, খেলাপি ঋণ প্রতিদিন বাড়ছে—এটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন। আমার মনে হয় বেশ কিছু বিষয় আছে যার জন্য ব্যাংকের অবস্থা আজকের জায়গায় পৌঁছেছে। আমি একবার বলেছি ব্যাংকগুলো তিনটি দোষে আসক্ত, বিষয়টি মালিকানার। যারা আইন করে, যারা রাজনৈতিক, যারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সরকার পরিচালনায় জড়িত তারাই আজ বাংলাদেশের ‘‌বিগ বিজনেস’। আবার তারাই ব্যাংকের মালিক, বীমা কোম্পানির মালিক, লিজিং কোম্পানির মালিক। তার মানে তিনটি শক্তি এখানে কাজ করছে; রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ‘‌বিগ বিজনেস’ ও ব্যাংক মালিকানা। এটা বিশাল শক্তি। প্রতিষ্ঠানরাই সরকার, সরকারের ভেতরের সরকার। এদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য রয়েছে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি-মন্ত্রীরা। যদি এটি না হতো তাহলে বর্তমান আইনের মধ্যেই অনেক কিছু করা সম্ভব হতো। বর্তমানে রয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১, রয়েছে অর্থ ঋণ আদালত আইন, রয়েছে দেউলিয়া আইন, রয়েছে দুদকের মতো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। এক ব্যাংক কোম্পানি আইনেই বাংলাদেশ ব্যাংককে যে ক্ষমতা দেয়া আছে তার পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে পারলেই বহু সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হয়েছে, এ আইনে যে ক্ষমতা তাদের দেয়া হয়েছে তা তারা ব্যবহার করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সব বোর্ড সদস্য সরকার মনোনীত। স্বভাবতই তাদের কাজ রাজনৈতিকভাবে স্থির হয়। এ কারণে বড় কোনো বিষয় নয়, সমস্যা ত্রুটি-বিচ্চুতির বিচারও কেন্দ্রীয় ব্যাংক করতে পারে না। কার্যত বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের একটি অঙ্গ। দ্বিতীয়ত, যে ইস্যুটি ব্যাংক খাতকে কুরে কুরে খাচ্ছে তা হচ্ছে সরকারের উদার ঋণনীতি। নীতিগতভাবে সরকার ‘‌ব্যাংক ফাইন্যান্স লেড গ্রোথ’-এ বিশ্বাস করে। এ ধারণায় বিশ্বাস করা অর্থনীতিবিদও প্রচুর। আবার অনেক দেশও এ নীতিতে বিশ্বাস করে আমাদের মতোই এখন ভুগছে। ব্যাংক ফাইন্যান্স লেড গ্রোথ করতে গিয়ে আমরা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে শিল্পঋণে জড়িয়ে ফেলেছি।

অথচ তা গর্হিত কাজ। অল্পদিনের জন্য আমানত নিয়ে দীর্ঘদিনের জন্য ঋণ দেয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমরা এ কাজটি করছি। এটি করতে গিয়ে শিল্পে অর্থায়নের জন্য তৈরি দুটো ব্যাংক পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফল হয়েছে কী! ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা অতি সহজে-সুলভে, কম খরচে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছেন। তাদের কেউ শেয়ারবাজারে যাচ্ছেন না। শিল্পে পুঁজি সরবরাহের জন্য রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ। এখানে কেউ যায় না। বহু নিয়ম করা হয়েছে, প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ সেখানে যায় না। অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মাধ্যমে বিশাল বিশাল ব্যবসা করছেন। ৫ লাখ টাকার পুঁজির কোম্পানি ঋণপত্র (এলসি) করে শতকোটি—২০০ কোটি টাকার। তবু তারা স্টক এক্সচেঞ্জে যান না। আইনের অধীনে তারা যেতে চান না। প্রশ্নের মুখোমুখি তারা হতে চান না। ফলে বড় বড় ঋণ বাড়ছে। তারা ডিফল্ট করছেন। রিশিডিউলিং করছেন ঋণ, এতে হচ্ছে না, করা হচ্ছে পুনর্গঠন (রিস্ট্রাকচারিং)। খেলাপির সংজ্ঞা পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে খেলাপির সংজ্ঞা থেকে বাইরে রয়ে যাচ্ছেন। খেলাপি হলেও তারা চলে যান সর্বোচ্চ আদালতে, রিট করে ওই একটা স্টে অর্ডার করিয়ে বসে থাকেন। এ কারণেই বলি, ব্যাংক ফাইন্যান্স লেড গ্রোথ থেকে বেরিয়ে আসার সময় এখনই। আমাদের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা এখন সাবালক। তাদের দেশে-বিদেশে অনেক সম্পদ। নিজেদের চাহিদা নিজেরা মেটাতে পারেন। তৃতীয় যে সমস্যা সেটা হচ্ছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্পর্কিত। ব্যাংক সার্বক্ষণিকভাবে চালান তারা। তাদের সইয়ে সবকিছু হয়। বোর্ড পথ দেখায় মাত্র। এ অবস্থায় ‘‌এমডি’ সাহেব যদি ফিক্স থাকেন, লাভ-লোভের ঊর্ধ্বে থাকেন তাহলে অনেক অনিয়ম এমনিতেই শেষ হয়ে যায়। দরকার সবার আগে এমডি ঠিক করা। তাকে দায়ীও করতে হবে এবং প্রটেকশনও দিতে হবে যাতে মালিকরা তার ওপর চড়াও হতে না পারেন। 

অতএব পরিষ্কার করে বলা দরকার, আইন সংশোধন হোক, আরো কড়া হোক সব বিধান-বিধি। কিন্তু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে শতভাগ। আর যে তিনটি বিষয় পূর্বে উল্লেখ করলাম তার প্রতিকার দরকার। আইন সংশোধনের সময় দেখা দরকার, রাজনীতি ও বিগ বিজনেসকে কী করে ব্যাংক মালিকানা থেকে আলাদা করা যায়। ব্যাংক ফাইন্যান্স লেড গ্রোথের কুফল থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। দরকার এমডি সাহেবদের ‘‌ফিক্স’ করা। নির্ভয়ে যাতে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারেন তার ব্যবস্থা দরকার। কর্মচারী-কর্মকর্তাদের প্রটেকশন দরকার। এসব করে দেখা যেতে পারে ব্যাংকে সুশাসন ফিরিয়ে আনা যায় কিনা। 

ড. আর এম দেবনাথ: অর্থনীতি বিশ্লেষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন