রামপুরা খাল ঘেঁষে হবে এক্সপ্রেসওয়ের পিলার, পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা

শামীম রাহমান

ঢাকা শহরের বৃষ্টির পানির বড় একটি অংশ রামপুরা খাল দিয়ে নেমে যায় বালু নদে ছবি: মাসফিকুর সোহান

ঢাকার বৃহত্তম জলাধারগুলোর একটি হাতিরঝিল। জলাধারের পানি রামপুরা খাল হয়ে প্রবাহিত হয় বালু নদে। খাল ঘেঁষা রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা সড়কটি চার লেনে উন্নীত করছে সড়ক জনপথ অধিদপ্তর। সাড়ে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির সাড়ে নয় কিলোমিটার অংশ তৈরি করা হবে উড়ালপথে (এলিভেটেড) নকশা অনুযায়ী, উড়ালপথের পিলারগুলো পড়েছে রামপুরা খালের পাড়ে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বলছে, পাড় ঘেঁষে তৈরি করা পিলারের কারণে রামপুরা খালের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। গতকাল ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় বিষয়টি তুলে ধরেছে ডিএনসিসি।

রামপুরা থেকে আমুলিয়া হয়ে ডেমরা পর্যন্ত সড়কটি তৈরি হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে। সড়ক জনপথ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নির্মিতব্য সাড়ে ১৩ কিলোমিটারের সড়কটির সাড়ে নয় কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। ভূমি সমান্তরালে থাকবে চার কিলোমিটার। সার্ভিস রোড, দুটি সেতু, চারটি ইন্টারচেঞ্জ, দুটি কালভার্ট, একটি ওভারপাস, প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোয় ফুটওভারব্রিজ একটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে। পুরো সড়কটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অব চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি) প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। ২০২৬ সালে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন অন্তত ৪০ হাজার যানবাহন পারাপার হওয়ার আশা করছেন সড়ক জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে নির্মাণকাজ শুরুর আগেই সড়কের উড়ালপথের জন্য পরিকল্পনা করা পিলার নিয়ে আপত্তি তুলেছে ডিএনসিসি।

ঢাকা মহানগরে চলমান সড়ক, রেল নৌ-পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছে ডিটিসিএর পরিচালনা পর্ষদ। কমিটির সভাপতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। গতকাল মন্ত্রীর সভাপতিত্বে সমন্বয় কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার কার্যপত্রে ডিএনসিসির আলোচ্য বিষয়ে বলা হয়েছে, সড়ক জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক রাজধানীর রামপুরা থেকে ডেমরা পর্যন্ত একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের মাঠ পর্যায় পরিদর্শনে দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ের পিলারগুলো রামপুরা খালের পাড় ঘেঁষে নির্মাণ করা হবে, যা খালের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এছাড়া আলোচ্য এক্সপ্রেসওয়ের একটি র্যাম্প হাতিরঝিলে নামানোর প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে প্রগতি সরণি প্রধান সড়কের রামপুরা টিভি স্টেশনের সামনে একটি ইউলুপ রয়েছে, যা হাতিরঝিল প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় সমীক্ষার মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। হাতিরঝিলের র্যাম্পটি আলাদা করে নির্মাণ করা হলে হাতিরঝিলের ট্রাফিক সার্কুলেশন পরিকল্পনাটি ব্যাহত হতে পারে।

একই সভায় নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৪১টি পিলার হাতিরঝিলের ওপর তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি বলছে, এসব পিলার লেকের সৌন্দর্য বিঘ্নিত করবে। পিলারগুলো তৈরি হচ্ছে বেগুনবাড়ি খাল, এফডিসি এলাকায়।

শুধু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নয়, নির্মাণকাজ শুরুর অপেক্ষায় থাকা রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা সড়কের একটি র্যাম্পও হাতিরঝিলে নামানোর পরিকল্পনা হয়েছে। র্যাম্পের জন্যও রামপুরা এলাকায় হাতিরঝিলের ওপর একাধিক পিলার তৈরি করতে হতে পারে। এসব অবকাঠামো হাতিরঝিল রামপুরা খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে হাতিরঝিল রামপুরা খাল। এর মধ্যে রামপুরা খাল দিয়ে শহরের বৃষ্টির পানির একটা বড় অংশ নেমে যায় বালু নদে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে রামপুরা খালের পাড় ঘেঁষে স্থায়ী কোনো অবকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক . হাদিউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকার সক্রিয় বা প্রবহমান খালগুলোর একটি হাতিরঝিল। খালটির অবশ্যই একটি প্রকৃত চ্যানেল বা রাইট অব ওয়ে আছে। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা বা রাজউকের কাছে নিশ্চয় খালের রাইট অব ওয়ের তথ্য রয়েছে। খালের রাইট অব ওয়ের মধ্যে কোনো অবস্থায়ই স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা সমীচীন হবে না। পিলার হলো স্থায়ী অবকাঠামো। ভবিষ্যতে আমরা চাইলেও কিন্তু পিলার এক ইঞ্চিও সরাতে পারব না।

তিনি আরো বলেন, ঢাকায় খাল কমতে কমতে বর্তমানে সংখ্যাটি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে। যে টি খাল অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলোর ওপর বা আশপাশে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা উড়ালসড়কের পিলার নিয়ে ডিএনসিসি আপত্তি তুললেও সরকারের সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগ বলছে, নির্মিতব্য পিলারগুলো রামপুরা খালের পানিপ্রবাহে কোনো সমস্যা তৈরি করবে না। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা খালের ওপর কোনো পিলার তৈরি করছি না। তার পরও বিষয়টি নিয়ে যেহেতু কথা হচ্ছে, আমরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন