বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত হবে বিষয়টা এত সরল নয়

বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক তো আছেই, কিন্তু সেটা কার উন্নয়ন, কী ধরনের উন্নয়ন—সেই প্রশ্নটা চলে আসে। বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন হবে বা তাদের জীবনের মান বৃদ্ধি পাবে বিষয়টা এত সরল নয়। প্রথমত বিদ্যুৎ উন্নয়নের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত খরচবহুল আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মূলত ঋণনির্ভর। এখানে ‘‌পাবলিক মানি’র মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে

মাহা মির্জা উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক, লেখক, অধিকার ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রের ওল্ড ডমিনো ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স সম্পন্নের পর জার্মানির বিলেফেল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। বিদ্যুৎ উৎপাদন, জ্বালানি খাতে বিদেশী বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা ও তৌফিকুল ইসলাম

বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে উন্নয়ন বা প্রবৃদ্ধির একটি সরাসরি সম্পর্ক আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে, এমনটাই আমরা জানি। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই অর্থে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হওয়ার কথা...

বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক তো আছেই, কিন্তু সেটা কার উন্নয়ন, কী ধরনের উন্নয়ন—সেই প্রশ্নটা চলে আসে। বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন হবে বা তাদের জীবনের মান বৃদ্ধি পাবে বিষয়টা এত সরল নয়। প্রথমত বিদ্যুৎ উন্নয়নের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত খরচবহুল আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মূলত ঋণনির্ভর। এখানে ‘‌পাবলিক মানি’র মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে সেটা কোথায় যাচ্ছে, কারা তার সর্বোচ্চ বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে বা কারা এ বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকার পাচ্ছে না—এ প্রশ্নগুলো সাধারণত উপেক্ষিত হয়। যেমন ভারতের মাথাপিছু বিদ্যুৎ কনজাম্পশন দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সটা যদি দেখেন, ১২১টা দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১০৭। পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকেও অনেক পেছনে। অর্থাৎ দীর্ঘ এক দশকে ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন বা কনজাম্পশন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু অপুষ্টি, ক্ষুধা বা দারিদ্রের মতো মারাত্মক জরুরি সূচকগুলোতে ভারতের অবস্থান একদম তলানির দিকে। অর্থাৎ এত বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনমানে তার প্রভাব পড়েনি। আবার নারী শিক্ষা, গড় আয়ু বা স্যানিটেশন—এই সবগুলো সূচকে শ্রীলংকা আর বাংলাদেশ কিন্তু ভারতের থেকে অনেক ভালো অবস্থানে আছে, কিন্তু মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনে বরাবরই ভারত থেকে পিছিয়ে আছে। তার মানে বেশি বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই সেটা আপনাআপনি  পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন হবে, দারিদ্র্য দূর হয়ে যাবে, এই চিন্তাটাই প্রশ্নবিদ্ধ। 

তার মানে অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৈষম্য দূর করতে পারছে না। আপনারা তো এমনও বলছেন যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অসম ব্যবস্থাটাই অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরো প্রলম্বিত করছে। 

হ্যাঁ, অবশ্যই। বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ মডেল তো ইগলিটারিয়ান না। বরং বৈষম্য পুনরুৎপাদনকারী। জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে জ্বালানির ধরন, উৎপাদন প্রক্রিয়া, মালিকানার মডেল, সরবরাহ ব্যবস্থা সবটাই সমস্যাজনক। প্রথমত, প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়েছে জোরপূর্বক কৃষিজমি দখল করার মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত, ইমপোর্টেড কয়লা আর এলএনজিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কয়লা স্থানীয় ইকোলজিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে, এটা জানা কথা। আর এলএনজি মারাত্মক ব্যয়বহুল। এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে বহু আগে থেকেই সতর্কবার্তা ছিল যে এলএনজিনির্ভরতা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর মারাত্মক চাপ ফেলবে। হয়েছেও তাই।

তৃতীয়ত, বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, সেই বিদ্যুতের প্রধান বেনিফিশিয়ারি কারা? দরিদ্র কি বেনিফিশিয়ারি? কৃষক কি বেনিফিশিয়ারি? ভারতীয় সাংবাদিক পি সাইনাথ একবার হিসাব করে দেখিয়েছিলেন, মুম্বাই শহরের শপিং মলগুলোয় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, তা দিয়ে মুম্বাইয়ের আশপাশের শত শত গ্রামকে ইলেকট্রিসিটি দেয়া সম্ভব। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে এখানে প্রাধান্য পাচ্ছে এরই মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। এখন বাংলাদেশেও শপিং মল কালচার তৈরি হয়েছে। খেয়াল করেন, দেশের স্বনামধন্য একটি শপিং মলে প্রায় আড়াই হাজার দোকান আছে এবং এখানে কমপক্ষে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাপ্লাই করতে হয়। অন্যদিকে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয়, যেমন খুলনা সাতক্ষীরা আর বাগেরহাটে কিন্তু পিক টাইমেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় খুব বেশি হলে ২০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ একটি গোটা জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ২০ মেগাওয়াট, আর শুধু একটি শপিং মলকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয় ১০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্ধেক পরিমাণ লোড কনজিউম করছে ঢাকা শহরের একটি মাত্র মার্কেট! এখন একে তো ইমপোর্টেড পণ্যের মার্কেট, অর্থাৎ স্থানীয় অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত না, তার ওপর বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ কনজিউম করছে। কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মসংস্থান কি তৈরি করতে পেরেছে? 

আবার অন্যদিকে কৃষি খাত আমাদের অর্থনীতির ব্লাড লাইন অথচ কৃষক বিদ্যুতের অভাবে সেচের পাম্প চালাতে পারছেন না। আবার দেখেন, ইজিবাইক একটা লেবার ইনটেনসিভ ইন্ডাস্ট্রি। এই দেশে ইজিবাইকের মতো বাহনগুলো মাত্র এক দশকে প্রায় ৪০-৪৫ লাখের কাছাকাছি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে অর্থাৎ গার্মেন্টসের চেয়েও বেশি। অথচ এই খাতে বিদ্যুতের ব্যবহারকে রীতিমতো অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার মানে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করছে যেসব খাত, সেখানে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না অথচ অভিজাত এলাকায় বা অনুৎপাদনশীল খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। অথচ অভিজাত এলাকায়  বিদ্যুতের জোগান দিতে গিয়ে সরকারকে বেসরকারি রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে অতিরিক্ত দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে।

অথচ গত এক দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত বেসরকারি খাতের অবস্থা দেখেন, হাতে গোনা কিছু রেন্টাল বিদ্যুৎ কোম্পানি অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল টাকার মালিক হয়েছে। চাহিদা না থাকার পরও তাদের বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এদের মধ্যেই একটা গোষ্ঠী আবার মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ এই বিদ্যুৎ খাত যে শুধু ক্যাপিটাল অ্যাকুমুলেশন করেছে তাই না, প্রচুর সম্পদ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত গোষ্ঠীগুলো সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করে পাবলিকের টাকায় প্রচুর মুনাফার মালিক হয়েছে। এটা তো পুরোই ক্রনি ক্যাপিটালিজম। বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে রাষ্ট্র আর ব্যবসায়িক গোষ্ঠী মিলেমিশে পাবলিকের টাকা সরিয়ে ফেলছে। 

চীন বা ভারত তো প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথেই গেছে। এ দুটি দেশই এক দশকে প্রায় এক লাখ মেগাওয়াটের ওপর বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে...

চায়নার যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সেটা হয়েছে মূলত ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে ভিত্তি করে। পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক, টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিকস, সেমিকন্ডাক্টর এসব খাতে চায়না অন্যতম শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ। এখন চায়নার বিদ্যুতের চাহিদা বা কনজাম্পশনের সঙ্গে আমাদের তো মিলবে না। আমাদের অর্থনীতির মূল জায়গা সার্ভিস খাত। অর্থাৎ ফ্যাক্টরি বা প্রোডাকশন নয়, আমাদের অর্থনীতিতে সার্ভিসকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান বেশি। এর মধ্যে আবার ইনফরমাল অর্থনীতির সার্ভিস খাতটা বিশাল। এখন সার্ভিস খাতের কর্মসংস্থানের জন্যে কি ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের মতো বিদ্যুৎ দরকার? অবশ্যই না। ভারতীয় এনার্জি বিশেষজ্ঞ সৌম্য দত্ত কিন্তু এ কথা বারবার বলছেন যে দরিদ্র দেশগুলোতে ইনফরমাল সার্ভিস খাতেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চাকরি তৈরি হয় এবং সেটাও খুব অল্প বিদ্যুৎ খরচে। কৃষিভিত্তিক স্থানীয় ইন্ডাস্ট্রিগুলোও খুব কম বিদ্যুৎ খরচে অনেক বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করে। পাশাপাশি তুলনা করলে দেখা যায়, ভারী ম্যানুফ্যাকচারিং খাত কিন্তু অত্যধিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং অটোমেশনের বিস্তারের কারণে আগের মতো চাকরি তৈরি করতেও অক্ষম।

কাজেই চায়নার মডেল এখানে অনুসরণযোগ্য নয়। আর ভারতীয় বিশেষজ্ঞরাই বলছেন যে চায়নার মডেল অনুসরণ করে ভারত যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট ধরেছে, সেটা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দারিদ্র্য দূর করতে পারেনি। বরং একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি তৈরি করেছে, আরেকদিকে এক দশক ধরে ‘‌জবলেস গ্রোথ’ স্থায়ী হয়েছে।

এখন আমাদের উন্নয়নের টার্গেট যদি হয় শপিং মল বা মেগা প্রকল্প বা নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল, তাহলে এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্যে আবার প্রচুর পরিমাণে স্টিল, কেমিক্যাল, রড বা অ্যালুমিনিয়াম দরকার এবং এসব কাঁচামাল উৎপাদন করতেই আবার প্রচুর বিদ্যুৎ দরকার। এটা একটা ভিশাস সাইকেলের মতো। অর্থাৎ এই উন্নয়ন প্রক্রিয়াটাই মারাত্মক এনার্জি ইনটেনসিভ বা ‘‌বিদ্যুৎ অপচয়কারী’। কিন্তু আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য যদি হয় স্থানীয় পর্যায়ে প্রচুর ছোট বা মাঝারি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা, বেকারত্ব দূর করা, ইনফরমাল খাতের কর্মসংস্থানকে সুরক্ষা দেয়া, তাহলে কিন্তু উন্নয়ন করতে অনেক কম বিদ্যুৎ দরকার হবে। কাজেই উন্নয়নের অগ্ৰাধিকার কী হওয়া উচিত, সেই আলোচনা না করে শুধু চায়না মডেলের অনুকরণে বিদ্যুতের চাহিদা ঠিক করা বিপজ্জনক। 

কিন্তু শিল্পায়ন করতে হলে তো বিদ্যুৎ লাগবেই। এ উন্নয়ন মডেলই সব দেশে প্রচলিত। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লে শিল্পায়ন হবে, প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে...

আসলে আমাদের অর্থনৈতিক চিন্তার ভরকেন্দ্রেই আছে মেগা প্রকল্প, ভারী ইন্ডাস্ট্রি, ইকোনমিক জোন, ইপিজেড ইত্যাদি। এগুলো সবই কিন্তু আজকাল অটোমেটেড অ্যাসেম্বলি লাইনভিত্তিক বা হাইলি মেকানাইজড। প্রথমত এনার্জি ইনটেনসিভ মানে ভারী অ্যাসেম্বলি লাইন চালাতে প্রচুর বিদ্যুৎ লাগবে আর দ্বিতীয়ত এগুলো লেবার রিপ্লেসিং। মানে শ্রমিকের বদলে মেশিন ব্যবহারের মাত্রা বাড়বে। তার মানে ভারী শিল্প মাত্রই যে প্রচুর পরিমাণে কর্মসংস্থান তৈরি করে, এখন আর সেটা বলা যাবে না। এখানে প্রশ্ন করতে পারেন যে ইপিজেড বা ইকোনমিক জোনগুলোতে কি কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না? অবশ্যই হচ্ছে। কিন্তু কনসার্নের জায়গাটা হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করে আমরা আসলে কয়টা কর্মসংস্থান তৈরি করতে পেরেছি?

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পেই গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় অটোমেশন হয়েছে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার বদলে এখানে বরং পুরনো কর্মসংস্থানগুলো বাঁচিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর গার্মেন্টস শিল্পে তো অটোমেশন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমাদের সোয়েটার ফ্যাক্টরিগুলোয় গত পাঁচ বছরে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। গাজীপুরের বেশির ভাগ ইজিবাইকচালকই কিন্তু একসময় গাজীপুরের সোয়েটার কারখানাগুলোয় কাজ করতেন। অটোমেটিক মেশিন চলে আসায় ঢালাও ছাঁটাই হয়েছেন। অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ কনজিউম করা একটি ইন্ডাস্ট্রি আর আগের মতো কর্মসংস্থান তৈরি করছে না। ম্যাকেঞ্জি  রিপোর্ট  কিন্তু  বাংলাদেশে অটোমেশনের ঝুঁকি নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল। সানেমের ২০২১ সালের রিপোর্টেও বলা হচ্ছে ২০৩০-এর মধ্যে দেশের ৬০ ভাগ গার্মেন্টস শ্রমিকই ছাঁটাই হবে শুধু অটোমেশনের কারণে। 

তার মানে ভারী শিল্পে অটোমেশনের ফলে সম্পদের পুঞ্জীভূতকরণ হচ্ছে। আর কর্মসংস্থানই যদি তৈরি না হয়, তাহলে প্রচুর বিদেশী ঋণ নিয়ে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আমরা আসলে কার স্বার্থে শিল্পায়ন করছি?

যেমন হুন্দাই কিন্তু একটা গাড়ি অ্যাসেম্বলি ফ্যাক্টরি করেছে বাংলাদেশে। স্বভাবতই এটা এনার্জি ইনটেনসিভ কারখানা। অর্থাৎ অত্যধিক বিদ্যুৎ কনজিউম করবে। অথচ এ কারখানায় কর্মসংস্থানের সংখ্যা খেয়াল করেন, মাত্র ৩০০! আবার এর পেছনে পার্টস তৈরি বা পার্টস সরবরাহকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ এমনিতেই অভিজাত গাড়ি, তার ওপর প্রায় এক হাজারের বেশি পার্টস আমদানি করা হবে। এখন আমাদের মতো একটা লেবার ইনটেনসিভ দেশের শিল্পায়ন-চিন্তার মূলে থাকার কথা ছিল কর্মসংস্থান। যেসব ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর বিদ্যুৎ লাগে, কিন্তু সেই তুলনায় কর্মসংস্থান তৈরি হয় না, সেই ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা ফোকাস করব, নাকি স্থানীয়ভাবে ইতিমধ্যেই তৈরি হওয়া অসংখ্য কর্মসংস্থানের মান উন্নয়নে ফোকাস করব, সেই আলোচনা কোথায়? 

তার মানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সম্পর্কটি বেশ জটিল...

এ দেশের আশি ভাগের বেশি মানুষ ইনফরমাল খাতে কাজ করে। এদের একটা অনেক বড় অংশই হকার বা রিকশাওয়ালা বা ফেরিওয়ালা। অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে না বললেই চলে। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে কলকাতায় কয়েক দশক ধরে খুব শক্তিশালী হকার আন্দোলন চলেছে। হকার ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট শক্তিমান ঘোষ এ বিষয় বারবার সামনে এনেছেন যে এ সেক্টরে বিদ্যুতের ব্যবহার একেবারেই মিনিমাল, কিন্তু কর্মসংস্থানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এবং সে কারণেই আমাদের মতো দেশে বিশাল বিশাল বিদেশী ঋণ নিয়ে আমরা এলোপাতাড়ি বিদ্যুৎ উৎপাদন করব কিনা তা নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবার অবকাশ আছে।

হকার ছাড়াও আরো অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন সারা দেশে অসংখ্য গাড়ি বা মোটরবাইকের ওয়ার্কশপ আছে, যেগুলো ম্যানুয়াল লেবারভিত্তিক এবং অল্প বিদ্যুতে চলে। অর্থাৎ দেখা যাবে, টিমটিম করে একটা বাতি জ্বলছে এবং এর মধ্যেই পার্টস বসানোর কাজ চলছে। ছোট ছোট অনেক ইলেকট্রনিক পণ্য, ফিটিংয়ের কারখানা আছে, কেমিক্যাল মিক্সচার কারখানা আছে, পণ্য প্যাকেটজাত বা বুটিকের কারখানা আছে—যার প্রায় সবই ম্যানুয়াল লেবারভিত্তিক। অনেক বেকারি বা মিষ্টি প্রস্তুতকারক কারখানা আছে, সেখানে গ্যাস লাগছে, কিন্তু বিদ্যুতের ব্যবহার খুবই সীমিত।

অর্থাৎ একটা বিশালসংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার ক্ষেত্রে হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরাসরি কোনো প্রভাব নেই।  

আবার এটাও ঠিক যে ইনফরমাল খাতেই ৪০ লাখের মতো অটোরিকশাচালক আছে, এদের ব্যাটারি চার্জ করতে বিদ্যুৎ লাগছে। ঝালাইয়ের কারখানা বা ফার্নিচারের কারখানায়ও বিদ্যুৎ লাগছে। বিদ্যুতের বাড়তি বিল এসব নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকাকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কাজেই ইনফরমাল খাতের সঙ্গে বিদ্যুতের ব্যবহারের সম্পর্কটা কমপ্লেক্স। কিন্তু এটা অবশ্যই বলা যায় যে ফরমাল শিল্প খাতের সঙ্গে তুলনা করলে ইনফরমাল খাতের হকার, কারিগর, মিস্ত্রি, রিকশাচালক, রিকশা পেইন্টার ইত্যাদি অসংখ্য পেশায় বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক কম। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারের অনুপাতে কর্মসংস্থানের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো এ বিশাল ইনফরমাল খাতকে নিয়ে সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে কিনা। শুধু বিদ্যুৎ বানাব আর শিল্পায়ন করব, এ বার্থ মডেলের বাইরে আর কোনো নতুন চিন্তা আছে কিনা?

তার মানে ইনফরমাল খাতের বাস্তবতায় পুরো উন্নয়ন মডেলটাকে নিয়েই সরকারকে অন্যভাবে ভাবতে হবে?

হ্যাঁ অবশ্যই। আমাদের ৮৬ ভাগ মানুষই তো ইনফরমাল খাতের শ্রমিক। এত বিশালসংখক মানুষকে ফরমাল শিল্প খাতে চাকরি দেয়া কি আদৌ সম্ভব? প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, প্রচুর শিল্পায়ন ঘটিয়ে কয়েক কোটি শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে—এমন ঘটনা বাংলাদেশে আর কবে ঘটবে? অর্থাৎ শিগগিরই আমাদের ইনফরমাল খাতটা কোথাও চলে যাচ্ছে না। তাহলে এ বিশালসংখ্যক মানুষকে নিয়ে সরকারের প্ল্যান কী? এটা তো পরিষ্কার যে শুধু ‘‌গ্রোথ’ দিয়ে বা শুধু বিদ্যুৎ দিয়ে ‘‌এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন’ সম্ভব নয়। উপমহাদেশের গত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা বলছে, একগাদা মেগা প্রকল্প বা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির এই ফাঁপা উন্নয়ন শেষপর্যন্ত জবলেস গ্রোথ তৈরি করছে। এক্ষেত্রে ইনফরমাল খাতের কোটি কোটি কর্মীর আর্থিক অনিশ্চয়তা বিদ্যুৎ দিয়ে নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ইন্টারভেনশনের মাধ্যমে 

অ্যাড্রেস করতে বলা হচ্ছে। রেশনিং, হাউজিং, গণপরিবহন, শিক্ষা- স্বাস্থ্য খরচ—এসব খাতে রাষ্ট্রকে সরাসরি সুরক্ষা দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। অমর্ত্য সেন ‘‌এনটাইটেলমেন্ট বেজড পাবলিক স্কিমে’র কথা বলেছেন। কল্যাণ স্যানালের মতো ভারতীয় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু পাবলিক সার্ভিস বাড়ালেই হবে না, ইনফরমাল খাতে রাষ্ট্রীয় ইন্টারভেনশন আরো ক্রিয়েটিভ হতে হবে। সরাসরি কর্মসংস্থান তৈরি নিয়ে ভাবতে হবে। সেটা অন্য বড় আলাপ। সামগ্ৰিকভাবে বলা যায়, শুধু বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই এমপ্লয়মেন্ট বাড়বে, মানুষের  লিভিং স্ট্যান্ডার্ড বাড়বে—এমন চিন্তা আগের থেকেই চ্যালেঞ্জড হচ্ছে।  

আবার যে ধরনের শিল্পায়ন হয়েছে বা যে ধরনের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, সেই কর্মসংস্থানের মান নিয়েও তো প্রশ্ন উঠছে...

একদমই তাই। প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, প্রচুর কর্মসংস্থান হবে, তারপর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রিদ্র্য এমনিতেই দূর হয়ে যাবে—এ চিন্তা সমস্যাজনক। এ ধরনের অর্থনৈতিক মডেলে আসলে কোন ধরনের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, সেটা তলিয়ে দেখা জরুরি। শুধু গার্মেন্টস শিল্পের দিকে তাকালেই বোঝা যে এ খাতের কর্মসংস্থানগুলো আসলে কতটা নিম্নমানের। আজকে তিন দশক পরে এসেও বাংলদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকেরা কি দারিদ্র্যের সাইকেল থেকে বের হতে পেরেছে?  

২০১৯ সালে অক্সফামের জরিপটা গুরুত্বপূর্ণ। অক্সফাম দেড় হাজার ফ্যাক্টরিতে জরিপ করে দেখিয়েছিল যে ১০ জন গার্মেন্টস কর্মীর মধ্যে নয়জনেরই তিন বেলা খাওয়ার সামর্থ্য নেই আর ৮৭ ভাগ কর্মীই  সারা বছর ঋণগ্রস্ত থাকছে। বণিক বার্তাতেই রিপোর্ট হয়েছিল যে বেশির ভাগ গার্মেন্টস শ্রমিকই সারা বছর রক্তশূন্যতায় ভোগে। তার ওপর আমাদের গার্মেন্টস শিল্প যেহেতু পশ্চিমা চাহিদার ওপর নির্ভরশীল এবং এই বাজারটা যেহেতু প্রচণ্ড কম্পিটিটিভ, হঠাৎ করে একসঙ্গে হাজার হাজার চাকরি চলে যাওয়াটাও খুব সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মোটা দাগে গার্মেন্টস শ্রমিকের জীবনে কিন্তু জব সিকিউরিটি বলে কিছু নেই। 

তার মানে আমি প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদন করলাম, প্রচুর শিল্পায়ন করলাম, কর্মসংস্থানও তৈরি করলাম, কিন্তু আমার যেটা ‘‌এন্ড গোল’ হওয়া উচিত ছিল—দারিদ্র্যের সাইকেল থেকে মানুষকে বের করে আনা, সেটাই করতে পারলাম না, উল্টো দারিদ্র্যের পুনরুৎপাদন হতে থাকল। অর্থাৎ শ্রমিক চাকরি করছে ঠিকই, কিন্তু ঋণগ্রস্ত থেকে যাচ্ছে। শিল্পায়নের নামে এত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, কিন্তু সেই বিদ্যুৎ বা সেই শিল্পায়ন শ্রমিকদের দারিদ্র্য থেকে বের করতে পারছে না। তার মানে খালি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা বা খালি শিল্পায়ন করা তো আমাদের টার্গেট হতে পারে না। টার্গেট হচ্ছে মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন করা। 

একদিকে গত এক দশকে বিদ্যুতের সারপ্লাস ক্যাপাসিটি তৈরি হয়েছে, আরেকদিকে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তে পরিণত হয়েছে, গরিব আরো গরিব হয়েছে। তাহলে এক দশকে ঋণের টাকায় বিদ্যুৎ সেক্টর যে ফুলেফেঁপে উঠল, তার বেনিফিশিয়ারি কে হলো? ৯ হাজার মেগাওয়াট সারপ্লাস ক্যাপাসিটি কি আমার কৃষক শ্রমিকের জীবনে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পেরেছে? 

গত এক দশকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। বিদেশী বিনিয়োগে প্রচুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অবকাঠামোও নির্মিত হয়েছে। এ খাতে বিপুল বিদেশী বিনিয়োগকে কীভাবে দেখছেন?

দেশী ব্যাংক অলস পুঁজি নিয়ে বসে থাকে। তার কাজ হলো পুঁজি খাটানোর নতুন নতুন জায়গা খুঁজে বের করা। বিদেশী কোম্পানি তো ফ্রি বিনিয়োগ করে না। যেখানে বিনিয়োগ করলে মুনাফা উঠিয়ে আনতে পারবে, সেখানে বিনিয়োগ হবেই। কিন্তু কোথায়, কেন বা কার স্বার্থে বিনিয়োগ হচ্ছে, এ বিশ্লেষণ না করে বিদেশী বিনিয়োগ মাত্রই বাংলাদেশের জন্যে লাভজনক, এমন বলা যাবে না।

অনেকেরই ধারণা বিদেশী বিনিয়োগ মানেই স্বচ্ছতা, সুশাসন বা দুর্নীতি হবে না ইত্যাদি। কিন্তু সেই ধারণাও সঠিক নয়। মাতারবাড়ীতে কয়লা প্লান্ট তৈরি হচ্ছে, জাইকার বিনিয়োগে। চুক্তি হয়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার! অর্থাৎ এটা দুনিয়ার সবচেয়ে খরচবহুল কয়লা প্লান্টের মধ্যে একটা। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে যে একটি কয়লা প্রকল্পের খরচ সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার হতে পারে, কিন্তু চার বিলিয়ন ডলার কী করে হয়? ২০১৯ সালে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড একটা রিপোর্ট করেছিল যে ‘‌মাতারবাড়ী পাওয়ার ডাজেন্ট বদার টু ডিজক্লোজ ১০,০০০ ক্রোর কস্ট হাইক’...অর্থাৎ ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়েছে, কিন্তু কেন বেড়েছে, কোনো জবাবদিহিতা নেই। বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে বলে কি স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, না সুশাসনের জোয়ার বয়ে গেছে? রূপপুর প্লান্টের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ আছে।

আবার অনেক সময় বিদেশী বিনিয়োগের ফলে সক্ষম দেশী প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হয়। আমাদের বাপেক্স তার উদাহরণ। যেমন রাশিয়ার গাজপ্রমকে বাংলাদেশের অনেকগুলো গ্যাসকূপ খনন করতে দেয়া হয়েছে। দেখা গেল প্রতিটি কূপ খনন করতে বাপেক্স নেয় ৮০ কোটি টাকা। আর গাজপ্রম নেয় গড়ে ১৫৪ কোটি টাকা! এক্ষেত্রে দক্ষ দেশী কোম্পানিকে বাদ দিয়ে রোসাটমের মতো প্রশ্নবিদ্ধ বিদেশী কোম্পানিকে কাজ দেয়া হচ্ছে। তাদের কাজের নিম্নমান নিয়েও অভিযোগ আছে। তার মানে, জাতীয় সক্ষমতার বিকাশ হচ্ছে না, দক্ষ দেশী কোম্পানি কাজ পাচ্ছে না অথচ খালি বিদেশী বিনিয়োগ আসছে বলেই আমরা খুশি হব?

তারপর ধরেন, সৌর ও বায়ুবিদ্যুতের দাম কমে আসছে। ভারত বা চায়না কয়েকশ কয়লা প্লান্টের ডিল বাতিল করেছে, তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ভারত এক দশকের মাথায় দেড় লাখ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। অর্থাৎ এখন আমাদের দরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রচুর বিনিয়োগ। অথচ এখন যদি আমরা একগাদা কয়লা প্লান্ট বানাই, এলএনজি টার্মিনাল বানাই, তাও আবার বিদেশী ঋণ নিয়ে এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ খরচে, সেটা কি দেশের জন্য কোনো ভালো ঘটনা?  আমাদের নিজস্ব গ্যাস আছে, সস্তা বিকল্প আছে অথচ অপ্রয়োজনীয় আর অবসোলিট খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আসছে, এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি না?

আরও