সমাবর্তন

এভাবেও ফিরে আসা যায়

চার বছর, ১২ সেমিস্টার। সবারই সব বিষয়ে আশির ওপর নম্বর তোলা চারটিখানি কথা নয়।

চার বছর, ১২ সেমিস্টার। সবারই সব বিষয়ে আশির ওপর নম্বর তোলা চারটিখানি কথা নয়। নিজেকে নিজেই হারানোর প্রতিযোগিতায় মো. জাহাঙ্গীর আলম যথার্থভাবে সফল। স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল; লোকে বলে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, কেননা রাষ্ট্রপতিই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর। লেখকসমাজে তিনি জাহাঙ্গীর সুর নামেই অধিক পরিচিত। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এসইউবি) প্রাক্তন জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। ৪০টির বেশি কোর্স ছিল। সবই তিনি চারের স্কেলে জিপিএ অর্জন করেছেন।

২০১৮ সালে সুরের শিক্ষা সমাপন হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে অতিবিলম্বে ২০২২ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তনে তিনি গৌরবের পদকটি গ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনের একেবারে শুরু থেকেই শাণিত মেধা কঠোর অধ্যবসায়ের ছাপ রেখে আসছেন সুর। তিনি পঞ্চম শ্রেণীতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কালিগঞ্জ ইসমাইল মেমোরিয়াল হাই স্কুলে স্কুল সেরা শিক্ষার্থী হন। ২০০৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তার উপজেলার কোনো বিদ্যাপিঠ থেকে তিনিই একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে জিপিএ অর্জন করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু মাঝপথে সেখানকার পাঠ চুকিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন, সেখান থেকেও তিনি মাঝপথে ঝরে পড়েন, এবারো নিজ ইচ্ছায়।

পরে ২০১৪ সালে ভর্তি হন এসইউবিতে। সুর সিলেবাসের পড়াশোনাকেও এক ধরনের অনন্যতা দিয়েছিলেন। কোনো অ্যাসাইনমেন্টই তিনি টেবিলে বসে করার পক্ষে ছিলেন না। একবার গাইবান্ধায় আদিবাসী পল্লীতে চলে গিয়েছিলেন, সংখ্যালঘুরা কেন ধীরে ধীরে নীরব হয়ে যায় তা নিয়ে গবেষণা করার জন্য। একবার পাহাড়ে চলে গিয়েছিলেন সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট করার জন্য।

সুর এসব সেরেছিলেন আরো অনেকগুলো পূর্ণকালীন দায়িত্ব নিরজুহাতে পালন করেছিলেন। সংসার সামলানো, সাংবাদিকতার দৈনিক চাকরি, সবই তিনি সেরেছেন দশভুজা দুর্গার মতো মানসিক শক্তি সঞ্চার করে। পাশাপাশি নিজের মৌলিক বিজ্ঞান লেখনী এবং আন্তর্জাতিক নানা অঙ্গনের প্রখ্যাত পথিকৃৎ ব্যক্তিত্বদের সাক্ষৎকার গ্রহণ, এসব চালিয়ে গেছেন পুরোদমে। সাংবাদিকতায় নিজের অসামান্য আত্মনিয়োগের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে দ্য রিপোর্ট টোয়েন্টি ফোর থেকে পেয়েছেন সেরা সাব-এডিটর সম্মাননা এবং ২০১৯ সালের আগস্টে রাইজিংবিডির সেরা লেখক নির্বাচিত হন তিনি।

আর দেশের প্রান্তিক এলাকার সুবিধাবঞ্চিত স্কুলগুলোয় খেলা আড্ডার ছলে বিজ্ঞান শিক্ষাদান জনপ্রিয়করণের কাজটি দলগতভাবে এগিয়ে নিয়ে আসছেন। লিখেছেন ১০টি বই, সম্পাদনা করেছেন সাতটি নন-ফিকশন গ্রন্থ। বিজ্ঞান আন্দোলন বিজ্ঞান লেখনীর জন্য ২০১৮ সালে স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বিপিএইচআর ইয়াং অ্যাপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড।

আরও