আলোকপাত

প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য প্রয়োজন ন্যায়পাল

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

কথা অনস্বীকার্য দেশ, সমাজ, সংসারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা-প্রয়োগের প্রধান পূর্বশর্ত হলো ব্যক্তিজীবনে শুদ্ধাচারিতা। ব্যাষ্টি থেকেই সমষ্টি। সঠিক জীবনদৃষ্টি প্রয়োগ করে মেধা প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকশিত সমাজে স্ব-উদ্যোগ, স্ব-পরিকল্পনা স্ব-অর্থায়ন দ্বারা সৃষ্টির সেবায় সংঘবদ্ধভাবে সম্পাদিত কাজই অশান্তিকে প্রশান্তিতে, রোগকে সুস্থতায়, ব্যর্থতাকে সাফল্যে, অভাবকে প্রাচুর্যে রূপান্তরিত করতে পারে।

ব্যাষ্টি সমষ্টির জীবনে ন্যায়নীতিনির্ভরতার প্রত্যয়, শুদ্ধাচার বা সদাচার চর্চার তাত্পর্যময় আবশ্যকতার কথা তাবৎ ঐশী গ্রন্থে, ধর্ম প্রবর্তক-প্রচারকের বাণীতে, সক্রেটিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০-৩৯৯), প্লেটো (খ্রিস্টপূর্ব ৪৩৭-৩৪৭), অ্যারিস্টটল (খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২) এমনকি কৌটিল্যের (খ্রিস্টপূর্ব ৩৭৫-২৮৩) অর্থশাস্ত্রেও ছিল। সে সদাচার শুদ্ধাচারের চর্চা অবলম্বন অনুসরণ যুগে যুগে নানান প্রেক্ষাপটে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটেছে। সদাচার সুশাসন  লোপ পেলে ব্যক্তি সমাজ সংসার নিপতিত হয়েছে নানান অরাজক পরিস্থিতিতে। মানব সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সূচনা, বিকাশ-বিবর্তনও ঘটেছে শুদ্ধাচারের প্রতি আকিঞ্চন আকাঙ্ক্ষা দায়বদ্ধতা থেকে। শান্তি শৃঙ্খলার স্বার্থে, সহযোগিতা-সহমর্মিতার স্বার্থে, ন্যায়নীতিনির্ভরতার স্বার্থে তাগিদে সুশাসনকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। ন্যায়নীতি নির্ভরতার মূল্যবোধ যে সমাজে যত বেশি বিকশিত, পরিপালিত, অনুসৃত হয়েছে সে সমাজ তত সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পেরেছে। বিপরীত অবস্থায় বিপন্ন বিপর্যস্ত হয়েছে বহু সমাজ সম্প্রদায়। 

সর্ববিধ বিবেচনায় নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, রাজপথে রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন দাবি বা অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের প্রতিও সরকারি বাহিনীর বেপরোয়া আচরণ, বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের মতো অর্থনীতির সমূহ সর্বনাশ সাধন, সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির প্রতিকার না পাওয়ার মতো বিষয়গুলো দিন দিনই সাধারণ মানুষকে যাতে আরো উদ্বিগ্ন করে না তোলে, কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কার্যকলাপ জবাবদিহিতার বাইরে চলে যাওয়ার মতো ঘটনার প্রতিকার পেতে একজন সাংবিধানিক ন্যায়পালের আবশ্যকতা উঠে আসছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করছেন, ন্যায়পাল সরকারের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আনবে জবাবদিহিতার মধ্যে, একজন ন্যায়পাল থাকলে সরকারকে মুখোমুখি হতে হবে না অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিরও। চানক্য পণ্ডিতের মতো অনেকে এটাও বলছেন, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রশাসনকে করতে পারে শক্তিশালী। কেননা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে সরকারের প্রতি আস্থা হারাতে পারে সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি আস্থাহীনতাই জন্ম দেয় সামাজিক অনাচার রাজনৈতিক সহিংসতার।

মানুষ বিশ্বাসের বিশ্বে বাস করে। পরস্পরের প্রতি আস্থায় বিশ্বাসের ভিত রচিত হয়। আস্থার সংকট তৈরি হলে পরাধীনতার প্রতিভূ হয়ে দাঁড়ায় সহমত-সহাবস্থানের। ঔপনিবেশিক শাসন-প্রশাসনযন্ত্রের যাবতীয় অন্যায়-অনিয়ম শোষণ-বঞ্চনা রহিত সুশাসন সদাচারী সমাজ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ নিযুতের রক্তত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। সেই নিরিখে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য ন্যায়পাল নিঃসন্দেহে অনিবার্য বিষয়। বাংলাদেশের সংবিধানের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো ন্যায়পালের বিধান। প্রশাসনের অনিয়ম-অব্যবস্থা দূর করতে সংবিধানে ন্যায়পালের বিষয়টি সংস্থাপিত হয়। ন্যায়পালের সহযোগিতায় সরকার শুদ্ধাচারের অনুশীলন নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে।  একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে উঠতে অব্যবস্থা, অনিয়ম এবং দুর্নীতি দূর করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে সম্মিলিত সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন। এটা তখনই সৃষ্টি হতে পারে যখন প্রয়াসে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ শামিল হবে।

পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রে ন্যায়পাল নিয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা হয়েছে। ন্যায়পাল ধারণাটি প্রথমবারের মতো সুইডেনে প্রকাশিত হয়, যার আভিধানিক অর্থ হলো মুখপাত্র বা প্রতিনিধি। সহজ ভাষায় বললে বলতে হয়, ন্যায়পাল হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি অন্যের জন্য কথা বলেন অন্যের স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। সুইডেনে ১৮০৯ সালে ন্যায়পাল নিয়োগ করা হয়। সুইডিশ ভাষায় Ombudsman বা ন্যায়পাল বলতে এমন একজন সরকারি মুখপাত্র বা প্রতিনিধি কিংবা সরকারি কর্মকর্তাকে বোঝায় যিনি সরকারি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করেন। সরকারি আমলা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী সরকারি এজেন্ট হিসেবে ন্যায়পাল থাকেন স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য অভিগম্য। ১৮০৯ সালের পর থেকে ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই ন্যায়পাল পদের প্রবর্তন হয়েছে। যুক্তরাজ্যে ন্যায়পালকে বলা হয় পার্লামেন্টারি কমিশনার বিশ্বের ১৭০টি দেশে দুশোর অধিক ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব দেশেই ন্যায়পাল আইনসভা কর্তৃক নিযুক্ত হন। সাধারণত আইনসভায় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সর্বসম্মতিক্রমে ন্যায়পাল নির্বাচন করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তই ন্যায়পালকে যথাযথ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়াও ডেনমার্কে ১৯৫৪ সালে, নরওয়েতে ১৯৬০, নিউজিল্যান্ডে ১৯৬২, তাঞ্জানিয়ায় ১৯৬৬, ব্রিটেনে ১৯৬৭, ঘানায় ১৯৬৯, ইসরায়েলে ১৯৭১, ফ্রান্সে ১৯৭৩, জিম্বাবুয়েতে ১৯৭৪, নাইজেরিয়ায় ১৯৭৫, অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৭৭, নেদারল্যান্ডসে ১৯৮৭ নেপালে ১৯৯০ সালে তাদের দেশের অভ্যন্তরে সরকারের কাজের স্বচ্ছতার জন্য ন্যায়পাল নিয়োগ করলেও আমাদের দেশে স্বাধীনতার ১০ বছর পর ১৯৮০ সালে সংবিধানের আলোকে ন্যায়পাল আইন গৃহীত হলেও এখনো ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা বা প্রবর্তিত হয়নি।

ন্যায়পাল শব্দটি, পদ প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে আরো ব্যাপক অর্থে ব্যবহূত; অর্থাৎ প্রশাসনিক দুর্নীতি তদন্তে সরকারি প্রশাসনের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (যেমন বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়) কর্তৃক প্রবর্তিত যেকোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়। ন্যায়পালের কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে বেসামরিক প্রশাসন আদালতের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান। তাকে বেআইনি কার্যকলাপ, কর্তব্যে অবহেলা ক্ষমতার অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করতে হয়। বিশেষভাবে প্রতারণামূলক অপরাধ ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী কার্যকলাপের প্রতি ন্যায়পালকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয়। যেকোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সংবিধানের বিধি বা দেশের আইন লঙ্ঘন কিংবা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন ভঙ্গ করলে ন্যায়পাল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সাধারণভাবে ন্যায়পাল পদের মূল উদ্দেশ্য সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কাজের সমতা সততা বিধান এবং সুনির্দিষ্টভাবে প্রশাসনের যেকোনো ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের গতিবিধির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ।

উল্লেখ্য, ন্যায়পালের শাস্তি প্রদানের কোনো ক্ষমতা নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমন জনসাধারণের সম্পত্তি বেদখল হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে আদালতে অভিযুক্ত করার পরিবর্তে ক্ষতিপূরণের জন্য তিনি প্রস্তাব দিতে পারেন। অবশ্য বিচারক বা প্রশাসনিক কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ক্ষমতাও তার নেই। তবে এসব সীমাবদ্ধতা প্রশাসনের ওপর ন্যায়পালের নিয়ন্ত্রণ এবং সংশোধন প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করতে পারে না। কোনো কর্মকর্তা যদি নিজের সিদ্ধান্তকে বিধিসম্মত আইনানুগ বলে দাবি জানিয়ে ন্যায়পাল প্রদত্ত সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেন, সেক্ষেত্রে ন্যায়পাল বিষয়টি সম্পর্কে আইনসভা কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করতে পারেন। দেশের প্রচলিত আইন বিধিগুলোর ত্রুটি নির্দেশ করার অধিকারও তার এখতিয়ারভুক্ত।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদ কর্তৃক ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালের পদ প্রতিষ্ঠার জন্য বিধান করিতে পারিবেন। সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালকে কোনো মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের যেকোনো কার্য সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতাসহ যে রূপ ক্ষমতা কিংবা যে রূপ দায়িত্ব প্রদান করিবেন, সে রূপ ক্ষমতা বা দায়িত্ব পালন করিবেন। এটা থেকে বোঝা যায়, ন্যায়পালের মূল কাজ হলো, নাগরিক অধিকারকে প্রশাসনের দুর্নীতি ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে রক্ষা করা। এছাড়া সব পর্যায়ের আধিকারিক কর্মকর্তার দেশের আইন সংবিধান সঠিকভাবে মেনে চলছেন কিনা এবং তাদের কাজে নাগরিক অধিকার বিনষ্ট হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে লক্ষ রাখা।

যেসব বিষয় ন্যায়পাল অফিসের জন্য জরুরি, তা হলো () ন্যায়পাল অফিস হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন, () ন্যায়পাল অফিসের তদন্ত করার চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকবে, () ন্যায়পালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুতিতে ক্ষমতা থাকবে, () ন্যায়পালের জন্য বেশকিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে এখতিয়ার থাকবে, () ব্যক্তিবিশেষের পদমর্যাদা রক্ষার লক্ষ্যে ন্যায়পাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, () স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে ন্যায়পাল ভূমিকা রাখতে পারে, () দুর্নীতি হ্রাসে ন্যায়পাল অবদান রাখতে পারে।

গত দশকে ভারতে আন্না হাজারের লোকপালের জন্য অনশন আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বিশ্বময় আলোচিত প্রসঙ্গ হয়ে ওঠে। সরকার সংসদে একটি লোকপাল বিল উত্থাপনের উদ্যোগ নেয়। বিলটি তৈরি হয়েছিল এবং সংসদে অনুমোদিত হয়েছিল ব্রিটেনের Parliamentary Commissioner for the Administration-এর আদলে। বিলের মাধ্যমে জনলোকপাল তার ইচ্ছামতো কারো দুর্নীতি নিয়ে শুধু অনুসন্ধান নয়, বিচারিক ক্ষমতাও পাবেন। তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা তার থাকবে। ন্যূনতম ১০ বছর ঊর্ধ্বে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারবে। বিনামূল্যে জনগণ জনলোকপালের কাছে অভিযোগ দিতে পারবে। বিচার হবে দ্রুত।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ২০০৫ সালে কর ন্যায়পাল আইন গৃহীত হয়। কর ন্যায়পাল বিল পাসের প্রস্তাব করে সংসদে সে সময় বলা হয়েছিল কর ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ কর নিয়ে বিদ্যমান ভীতি থেকে রেহাই পাবে। মানুষ আরো কর দিতে উৎসাহিত হবে। কর আদায়ে হয়রানি রোধেও কর ন্যায়পাল ভূমিকা রাখতে পারবে বলে ওই সময় পাস হওয়া আইনটিতে বলা হয়। মাত্র ছয় বছর পর সংসদে কর ন্যায়পাল (রহিতকরণ) বিল, ২০১১ পাসের মধ্য দিয়ে কর ন্যায়পাল পদ তার যাবতীয় কাজ রহিত করা হয়। বর্তমানে সরকার কর আদায়ে মানুষকে নানাভাবে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেয়ায় ধরনের ব্যয়সাধ্য প্রতিষ্ঠানের আর কোনো প্রয়োজন নেই। মানুষকে বোঝানো গেছে, প্রত্যেককেই কর দেয়া উচিত। গত দুই বছরে দুই লাখ করদাতা বেড়েছে। তাই কর ন্যায়পাল বাতিল করা দরকার। সে সময় এটাও বলা হয়েছিল কর, ভ্যাট শুল্ক-সম্পর্কিত আইনের সঙ্গে ন্যায়পাল আইনটি সাংঘর্ষিক হওয়ায় মন্ত্রিসভা সেটি রহিতকরণের প্রস্তাব অনুমোদন করে। সে মর্মে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশসহ বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। পাঁজি পুঁথিতে দেখা যায় কর ন্যায়পাল কার্যালয়ে ২০০৬ সালে ১০টি, ২০০৭ সালে ১১৯টি, ২০০৮ সালে ২৪১টি ২০০৯ সালে ৩৫৫টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। এসব অভিযোগ কর ভয়ভীতি দূরীকরণের বিষয়ভুক্ত ছিল না। এগুলো ছিল কর রাজস্ব আহরণে আইনের ব্যাখ্যা প্রয়োগে মতবিরোধ এবং সে সূত্রে উৎসারিত হয়রানির প্রতিকার প্রার্থনামূলক। প্রয়োজনের তাগিদেই কর ন্যায়পাল পদ তৈরি হয়েছিল আবার প্রয়োজন নেই মনে করেই বাল্যবয়সে এটি বিলুপ্ত করা হয়। প্রয়োজন অপ্রয়োজনের হিসাব-নিকাশটি যুক্তিযুক্ততার নিরিখে দেখতে গেলে প্রণিধানযোগ্য হয়ে উঠবে, দেশে কর রাজস্ব প্রদান আহরণের সংস্কৃতিকে বলবান বেগবান করতে সদাচারি সুশাসিত পরিবেশ এবং আস্থা সৃষ্টির প্রেক্ষাপট নির্মাণের বিকল্প নেই।

 

. মোহাম্মদ আবদুল মজিদসরকারের সাবেক সচিব এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন