ভেটেরিনারি পড়াশোনায় সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার

বিশ্বব্যাপী মর্যাদাপূর্ণ পেশার নাম ভেটেরিনারি। বাংলাদেশে ১৯৬১ সালে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি অনুষদ চালুর মাধ্যমে এ শিক্ষার সূচনা হয়। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা। নব্বইয়ের দশক থেকে প্রাণী শিল্পের আকার এবং প্রকৃতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বাণিজ্যিক

বিশ্বব্যাপী মর্যাদাপূর্ণ পেশার নাম ভেটেরিনারি। বাংলাদেশে ১৯৬১ সালে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি অনুষদ চালুর মাধ্যমে শিক্ষার সূচনা হয়। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা। নব্বইয়ের দশক থেকে প্রাণী শিল্পের আকার এবং প্রকৃতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বাণিজ্যিক পশুপালন, দুগ্ধ হাঁস-মুরগির খামার দেশী বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তা পুষ্টির অবদানকারী হিসেবে গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগি নীতিনির্ধারক এবং উন্নয়ন সহযোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হয়ে উঠেছে। দ্রুত নগরায়ণ এবং নগরবাসীর মধ্যে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ত্বরান্বিত হয়েছে, যার ফলে খাদ্য শিল্পে পরিবর্তন হয়েছে। পশু স্বাস্থ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিপণনে ভেটেরিনারি মেডিসিনের আরো দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন।

ভেটেরিনারি কী?

বিজ্ঞানের একটি শাখা হলো ভেটেরিনারি বা প্রাণী চিকিৎসা। মানুষের স্বাস্থ্য সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা এবং বৃদ্ধির জন্য মেডিকেলের চিকিৎসকরা যেমন মানুষের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়, রোগ প্রতিরোধ, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসা করে থাকেন, ঠিক তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে শাখা পশুপাখির বিভিন্ন রোগ নির্ণয়, রোগ প্রতিরোধ, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করে তাকে ভেটেরিনারি বলে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের শাখার গ্র্যাজুয়েটদের ভেটেরিনারিয়ান বলা হয়। ভেটেরিনারিয়ানরা পশুপালন, প্রজনন, পুষ্টি সম্পর্কিত গবেষণা এবং প্রাণিজ পণ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে পড়ালেখা করেন। পশুপাখি থেকে মানুষের মাঝে যেসব রোগবালাই ছড়ায় সেগুলো শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ প্রতিকার নিয়ে কাজ করেন একজন ভেটেরিনারিয়ান। অ্যানথ্রাক্স, বার্ডফ্লুর মতো ভয়াবহ রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় ত্রাণকর্তা হিসেবে ভেটেরিনারিয়ানরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা

মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় প্রতিটিতে চতুর্থ বিষয় বাদে ন্যূনতম . এবং যৌথভাবে ন্যূনতম জিপিএ .৫০ থাকতে হবে। এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় পদার্থ, রসায়ন, গণিত এবং জীববিদ্যায় আলাদা আলাদা পাস করতে হবে।

ভর্তি পরীক্ষার বিষয় নম্বর বণ্টন

এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি/সমমান পর্যায়ের ইংরেজিতে ১০, প্রাণিবিজ্ঞানে ১৫, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ১৫, পদার্থবিজ্ঞানে ২০, রসায়নে ২০ গণিতে ২০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য .০০ (এক) নম্বর প্রদান করা হবে। এবং প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য .২৫ নম্বর কাটা যাবে। মোট ১৫০ নম্বরের ভিত্তিতে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়। ভর্তি পরীক্ষার ১০০ নম্বরের সঙ্গে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত মোট নম্বরের জন্য ২৫ এবং এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত মোট নম্বরের জন্য ২৫ নম্বর যোগ করে ফলাফল প্রস্তুত করে মেধা অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরি করা হয়।


কোথায় পড়বেন

বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে ভেটেরিনারি মেডিসিনে স্নাতক, স্নাতকোত্তর পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে দুটি সরকারি কলেজ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী আটটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদে পড়তে পারবেন। একটি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই ভালো ফলাফল থাকলে পছন্দের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি পড়ার সুযোগ রয়েছে। কৃষি গুচ্ছভুক্ত আট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি পড়তে পারবেন ৭৮৮ জন শিক্ষার্থী। এর বাইরে দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ার সুযোগ আছে।

বিশেষায়িত ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের একমাত্র বিশেষায়িত ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৬ সালে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের অধীনে পাঁচ বছর মেয়াদি ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ডিগ্রি প্রদান করা হয়। অনুষদে প্রতি বছর ১০০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান। ঢাকার পূর্বাচলে রয়েছে তাদের নিজস্ব টিচিং অ্যান্ড ট্রেনিং পেট হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার। রয়েছে তিনটি ইনস্টিটিউটপোলট্রি গবেষণা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউট এবং উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য, সামুদ্রিক মত্স্য বন্যপ্রাণী গবেষণা কেন্দ্র।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশে ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি পড়ার সুযোগ রয়েছে। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদ ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রি প্রদান করে। সাধারণ আসন সংখ্যা ১৭০, মুক্তিযোদ্ধা নয়টি এবং উপজাতি একজনসহ মোট ১৮০টি আসন রয়েছে। গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদে সাধারণ আসন সংখ্যা ৫৫, মুক্তিযোদ্ধা তিন এবং উপজাতি দুজনসহ মোট ৬০টি আসন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ বিএসসি ইন ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রিতে অনার্স ডিগ্রি প্রদান করে। সাধারণ আসন সংখ্যা ১০০, মুক্তিযোদ্ধা এবং উপজাতি দুই, দলিত , হরিজন , বিকেএসপি , ছিটমহল , পোষ্য -সহ মোট ১১৪টি আসন রয়েছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি (অনার্স) ডিগ্রি প্রদান করে। ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিনে সাধারণ আসন সংখ্যা ৬০, মুক্তিযোদ্ধা এবং উপজাতি , পোষ্য , প্রতিবন্ধী , প্রবাসীর সন্তান , হরিজন দলিত এবং বিকেএসপি সহ মোট ৭২ আসন। এছাড়া বিএসসি ইন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি (অনার্স) ডিগ্রির সাধারণ আসন সংখ্যা ৬০, মুক্তিযোদ্ধা এবং উপজাতি , পোষ্য , প্রতিবন্ধী , প্রবাসীর সন্তান , হরিজন দলিত এবং বিকেএসপি সহ মোট আসন সংখ্যা ৭২টি। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে সাধারণ আসন সংখ্যা ৯৪, মুক্তিযোদ্ধা এবং উপজাতি সহ মোট ১০০টি আসন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, অ্যানিমেল বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদে সাধারণ আসন সংখ্যা ৯২, মুক্তিযোদ্ধা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি, -উপজাতি , অন্যান্য অঞ্চলের উপজাতি (বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি ব্যতীত) , বিকেএসপি সহ মোট ১০০টি আসন রয়েছে। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, অ্যানিমেল অ্যান্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদ বিএসসি ইন ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ডিগ্রিতে সাধারণ আসন সংখ্যা ২৮, মুক্তিযোদ্ধা এবং উপজাতি/আদিবাসী সহ মোট আসন ৩০টি। হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী চিকিৎসা প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞান অনুষদ বিএসসি ইন ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ডিগ্রি প্রদান করে। সাধারণ আসন সংখ্যা ২৮, মুক্তিযোদ্ধা এবং উপজাতি/আদিবাসী সহ মোট ৩০ আসন। কৃষিবিজ্ঞানে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস অনুষদে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ আছে।

ভেটেরিনারি কলেজ

বর্তমানে বাংলাদেশে দুটি ভেটেরিনারি কলেজ আছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ, সিরাজগঞ্জ এবং ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ, ঝিনাইদহ। সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে আসন সংখ্যা ৫০টি এবং ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে ৬০টি আসন রয়েছে। আসন সংখ্যা কম হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় কম জিপিএতে ভর্তি হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ হতে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান গণিত/উচ্চতর গণিত বিষয়গুলোসহ উত্তীর্ণ হতে হবে। মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার চতুর্থ বিষয় ব্যতীত পরীক্ষা দুটির প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপিএ .০০ এবং দুই পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ .০০ থাকতে হবে।

আরও