বৈশ্বিক ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) হেডসেট বিক্রি গত কয়েক প্রান্তিকে লক্ষণীয়ভাবে বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভিআর হেডসেট বিক্রি পূর্ববর্তী বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে ২৪১ দশমিক ৬ শতাংশ। শীর্ষ প্রতিষ্ঠান মেটার বাজার হিস্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ শতাংশ। মার্ক জাকারবার্গ নেতৃত্বাধীন কোম্পানিটির সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিআর হেডসেট ছিল কোয়েস্ট ২। মেটার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৪.৫ শতাংশ) শেয়ার পিকোর। প্রধানত চীনের বাজারে কাজ করলেও বৈশ্বিক বাজারেও নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে বাইটড্যান্স মালিকানাধীন কোম্পানিটি।
সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভিআর হেডসেটের চাহিদা বাড়ছে। সেখানেও একচ্ছত্র আধিপত্য মেটার। শীর্ষ পাঁচে থাকা ডিপিভিআর, এইচটিসি ও আইকিউআইওয়াইআইয়ের হিস্যা ৪ শতাংশেরও কম। স্মার্টফোন, পিসি, অ্যাপ স্টোরসহ বিভিন্ন খাতে অ্যাপলের আধিপত্য থাকলেও এআর ও ভিআরে বেশ পিছিয়ে আছে অ্যাপল। তবে অন্যান্য খাতে যেভাবে নেতৃত্বের আসনে আসীন হয়েছে সে কৌশল খেয়াল করলে দেখব, অন্যের কর্ষিত ভূমিতে সোনা ফলাতে উস্তাদ ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি। এআর ও ভিআর খাতেও সেভাবে এগোচ্ছে তারা।
ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) মবিলিটি অ্যান্ড কনজিউমার ডিভাইস ট্র্যাকার্সের রিসার্চ ম্যানেজার জিতেশ ইউবরানি জানান, মেটাভার্স উন্নয়নে লাখো লাখো ডলার বিনিয়োগ করছে মেটা। কিন্তু সাশ্রয়ী হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে লাভে থাকার এ কৌশল দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না।
চলতি বছরে ভিআর বিক্রি বাড়বে বলে পূর্বাভাস সবার। ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) বলছে, ২০২২ সালে ভিআর বিক্রি ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১ কোটি ৩৯ লাখ ইউনিটে দাঁড়াবে। তবে ভিআর শিল্পের জন্য ২০২৩ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাল হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। অগমেন্টেড রিয়ালিটি বা এআর হেডসেট নিয়ে আসতে যাচ্ছে মেটা, পিকো ও সনির মতো কোম্পানি।
আগামী বছর নিজেদের প্রথম হেডসেট আনতে যাচ্ছে অ্যাপল। সেদিকে দৃষ্টি রয়েছে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টদের। অন্যসব পণ্যের মতো অ্যাপল চাইবে এ সেগমেন্টেও শক্তিশালী অবস্থান থাক তাদের। মেটা ও সনি বাজার বিস্তৃত করবে এবং অ্যাপল সেখানে নিরাপদেই প্রবেশ করতে পারবে।
নতুন অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) ডিভাইস নিয়ে অ্যাপলের কাজ শুরুর বিষয়ে গুঞ্জন আগেই উঠেছে। আলাদা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, হেডসেটটিতে এমওয়ান চিপ ও মাইক্রো ওলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করবে অ্যাপল।
সরবরাহ চেইন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অ্যাপল এআর হেডসেট প্রি-প্রডাকশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এর আগে বিশ্লেষক মিং-চি কিয়ু জানিয়েছিলেন, কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি তাদের নতুন হেডসেটে ম্যাকবুকের সমপরিমাণ কার্যক্ষমতা দেবে। বিশেষ করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় হেডসেটের চিপ ডিজাইনে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে।
অ্যাপলের নতুন এআর ও ভিআর হেডসেট কবে নাগাদ বাজারে উন্মুক্ত করা হবে, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে কেউ কেউ বলছেন, চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ডিভাইসটি বাজারে আনা হতে পারে। অ্যাপলের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাংও তাদের প্রথম এআর হেডসেট তৈরিতে কাজ করছে বলে জানা গেছে। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। যারা পরবর্তী প্রজন্মের এআর হেডসেট তৈরিতে মাইক্রোসফটের সঙ্গে কাজ করবে।
স্যামসাংয়ের অগমেন্টেড রিয়েলিটি হেডসেটে হলোগ্রাম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এবং স্যামসাং অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে দীর্ঘ সময় ধরে এর উন্নয়ন করা হয়েছে। হেডসেটটিতে এক্সিনোজ প্রসেসর ও গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হবে বলে জানায় সূত্রগুলো। অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো বৈশ্বিক কোম্পানি এবং চীনের বাইটড্যান্স এআর ও ভিআর খাতে ভালোভাবে প্রবেশ করলে এ খাতে মেটার একাধিপত্য টেকসই হবে না এটা বলা যায় নির্দ্বিধায়। আইডিসির পূর্বাভাস, কয়েক বছরের মধ্যেই মেটাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে এ কোম্পানিগুলো।