যুক্তরাষ্ট্রেও ইউএসবি-সি পোর্ট বাধ্যতামূলক করার দাবি

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সংগতি রেখে যুক্তরাষ্ট্রেও সব ডিভাইসে একই ধরনের চার্জিং পোর্ট রাখার দাবি তুলেছেন কয়েকজন আইনপ্রণেতা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডোর কাছে লেখা চিঠিতে দাবি তোলেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন সিনেটর এডওয়ার্ড জে মার্কেই। ২০২৪ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে ইউএসবি-সি পোর্ট বাধ্যতামূলক করার জোরালো দাবি তুলেছেন প্রভাবশালী সিনেটররা। খবর স্ল্যাশগিয়ার।

গত সপ্তাহেই স্মার্টফোন, ট্যাবলেট পিসি, গেমিং কনসোল ক্যামেরার মতো ডিভাইসে একই ধরনের চার্জিং পোর্ট আনতে একমত হয়েছে ইইউ জোট।

বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে সিনেটররা লেখেন, গ্রাহকের অপ্রয়োজনীয় খরচ মোকাবেলা, ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমানো এবং নতুন ইলেকট্রনিক পণ্য কেনায় বিচক্ষণতা নিশ্চয়তা আনতে বিশেষ কৌশল তৈরি করে আমরা আপনাকে ইইউর পথ অনুসরণের আহ্বান জানাচ্ছি।

অ্যাপলের লাইটনিং পোর্টের মতো নিজস্ব চার্জিং ব্যবস্থাকে পরিকল্পিত বিকল্পের উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সিনেটররা। এটি গ্রাহকদের জন্য ব্যয়বহুল হতাশাজনক। পাশাপাশি এটি ইলেকট্রনিক বর্জ্যের বিস্তার আরো বাড়াবে। ইইউতে নতুন সব ফোনে একই চার্জিং পোর্ট আনার আইনকে ক্ষমতাধর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক হাত নেয়ার উদাহরণ হিসেবে দেখছেন সিনেটররা। নতুন আইনের প্রবর্তন হলে যুক্তরাষ্ট্রে এটি ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমাতে সাহায্য করবে এবং যেসব গ্রাহক চার্জার কিনতে কিনতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন, তাদের বিড়ম্বনাও কমাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর সংস্থাকে সমন্বয় করে একটি বিশেষ পরিকল্পনা তৈরির আহ্বান জানান সিনেটররা। এতে যেমন গ্রাহক বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাবেন এবং পরিবেশও রক্ষা পাবে বলে মনে করেন তারা।

নষ্ট অব্যবহূত চার্জারের কারণে প্রতি বছর ১১ হাজার টন -বর্জ্য তৈরি হয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন মার্কিন সিনেটররা। এক জরিপের বরাতে তারা জানান, ডিভাইসের যথোপযুক্ত চার্জার পেতে বিড়ম্বনা একাধিকবার ডিভাইস চার্জে অসুবিধার কথা স্বীকার করেছেন ৪০ শতাংশ মার্কিন গ্রাহক।

ইইউ প্রস্তাবিত নতুন আইন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মধ্যে সব ডিভাইসে ইউএসবি-সি পোর্টের চার্জার ব্যবহার করতে হবে। এর আওতায় রয়েছে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট পিসি, কনসোল, ডিজিটাল ক্যামেরা, অডিও গিয়ারসহ অন্তত ১৫ ক্যাটাগরির ডিভাইস।

কয়েক বছর ধরেই এক ফোন এক চার্জার নীতিমালার পক্ষে জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল ইইউ কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যতে যত ফোন লঞ্চ হবে, তা সে যে ব্র্যান্ডেরই হোক না কেন, থাকতে হবে ইউএসবি-সি পোর্ট। ইইউর আইনপ্রণেতারা অবশেষে এমনই সমঝোতায় পৌঁছেছেন। খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ২০২৪ সালে পদার্পণের পর থেকেই ইইউয়ে যত ফোন লঞ্চ করবে, সেগুলোয় ইউএসবি-সি চার্জিং পোর্ট বাধ্যতামূলক। নিয়মে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে অ্যাপল। বর্তমানে ফোনে লাইটনিং পোর্ট দিচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোভিত্তিক কোম্পানিটি।

সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদনে জানা গেছে, অ্যাপল বাজারে এমন কিছু ফোন নিয়ে আসতে চলেছে, যাতে আর লাইটনিং পোর্ট থাকবে না। বদলে থাকবে সর্বজনীন ইউএসবি-সি। ইইউর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকে মাথায় রেখে খুব সম্ভবত ২০২৩-এর শেষ বা ২০২৪ সালের প্রথমেই ইউএসবি-সি পোর্টের হ্যান্ডসেট নিয়ে আসবে অ্যাপল। সবার জন্য একই চার্জার নীতি আসলে ইইউতে -বর্জ্যের পরিমাণ কমানোর অন্যতম একটা পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। আইনটি একবার বলবৎ হয়ে গেলে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো আর তাদের ফোনের রিটেল বক্সে চার্জার দেবে না। কারণ সেই ক্রেতার বাড়িতে এরই মধ্যে একটা ইউএসবি টাইপ-সি কেবল রয়েছে। ইইউর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নতুন আইনে প্রতি বছর অন্তত ২৪ কোটি ইউরো বা ২৮ কোটি ডলার অর্থ সাশ্রয় হবে, যা অযথা চার্জার কেনার পেছনে ব্যয় করা হতো।

চলতি বছরের শেষ দিকে ইইউ পার্লামেন্ট কাউন্সিল দ্বারা আইনটি অনুমোদিত হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের তরফে বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর নাগাদ আইনটি কার্যকর হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন