স্বাধীনতার আগে বাঙালিদের বড় শিল্প উদ্যোগ

শুধু একটি ব্যবসায়িক গ্রুপই পারিবারিকভাবে টিকে আছে

বদরুল আলম ও সাইফ বাপ্পী

স্বাধীনতার আগে দেশে বড় শিল্প গ্রুপগুলোর প্রায় সবই ছিল প্রধানত পারিবারিক উদ্যোগ। সে সময় শিল্প খাতে আধিপত্য ছিল অবাঙালিদের। বাঙালি উদ্যোক্তাদের জন্য পুঁজি গঠন বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসা অনেক কঠিন ছিল। এর পরও বাঙালি মালিকানাধীন কয়েকটি উদ্যোগ মোটামুটি বড় আকার নিতে সক্ষম হয়েছিল। স্বাধীনতার আগমুহূর্তে আড়াই কোটি পাকিস্তানি রুপি (তত্কালীন বিনিময় হার অনুযায়ী সাড়ে ৫২ লাখ ডলার) বা এর বেশি মূল্যমানের সম্পদ নিয়ে ব্যবসা করছিল মোটে ১৬টি বাঙালি শিল্প গ্রুপ।

বর্তমানে এসব শিল্প গ্রুপের মধ্যে কে খান গ্রুপ ছাড়া আর কোনোটিই পারিবারিক ঐক্য বজায় রেখে ব্যবসায়ে সফলভাবে টিকে নেই। প্রয়াত জহুরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত ইসলাম গ্রুপ দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে ব্যবসা চালালেও তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটি ভাগ হয়ে যায়। স্বাধীনতা-পূর্বকালের অন্য সব বৃহৎ বাঙালি শিল্প গ্রুপই এখন হয় ভাগ হয়ে ধুঁকছে, নয় একেবারেই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে।

বেক্সিমকো, আকিজ, স্কয়ার বা আনোয়ার গ্রুপের মতো স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি শিল্প গ্রুপ এখন দেশে ব্যবসায়িক সাফল্যের বড় উদাহরণ হয়ে রয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান বড় হয়েছে মূলত বাংলাদেশ আমলেই। স্বাধীনতা-পূর্বকালে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার ব্যাপ্তি টার্নওভারের পরিমাণ তেমন একটা উল্লেখযোগ্য ছিল না। ওই সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূলত পুঁজি গঠনের লড়াইয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে বেশি।

সমসাময়িক মাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার আগে বাঙালি পরিবারগুলোর মালিকানাধীন ব্যবসার মধ্যে শীর্ষস্থানে ছিল কে খান গ্রুপ। ১৯৬৯-৭০ অর্থবছরে গ্রুপটির মালিকানাধীন সম্পদের পরিমাণ ছিল তত্কালীন সাড়ে কোটি পাকিস্তানি রুপি ( কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার) স্বাধীনতার অর্ধশতক পরেও দেশে পরিবারের মালিকানাধীন শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে দোর্দণ্ডপ্রতাপে টিকে রয়েছে শিল্প গ্রুপটি। বর্তমানে শিল্প গ্রুপটির মূল নেতৃত্বে রয়েছে পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম। তবে এখনো পরিবারটি ঐক্যবদ্ধভাবেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কোম্পানির (আইএফসি) ২০২০ সালের এক পরিসংখ্যানেও বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে শতকোটি ডলারের বেশি আয়কারী পারিবারিক ব্যবসাগুলোর মধ্যে কে খান গ্রুপই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক আবুল কাসেম খান বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের আগের প্রজন্মকে যতটুকু দেখেছি, তা থেকে মনে হয়েছে আমরা ব্যবসার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছি মূলত করপোরেট সুশাসনের জন্য। আগের প্রজন্মের মতো এখানে এখনো করপোরেট সংস্কৃতিকে মেনে চলা হচ্ছে। ব্যবসার ক্ষতি না করে এগুলো শক্তিশালীভাবে বজায় রাখা হচ্ছে। আমরা অনেকগুলো জয়েন্ট ভেঞ্চার করেছি। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি জয়েন্ট ভেঞ্চার করেছে আমাদের কোম্পানি। বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার করে উন্নত কাঠামো শিখেছি। কোম্পানিগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশীরা ম্যানেজ করেছে। তারা টেকনিক্যাল নলেজ এনেছে, আমরা লোকাল পার্টনার হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। একেকটি কোম্পানি স্বতন্ত্র একেকটি ম্যানেজমেন্ট দিয়ে পরিচালিত হয়েছে। এটিও একটা ভালো কৌশল হিসেবে কাজে দিয়েছে। কারণে এক কোম্পানির সমস্যার প্রভাব অন্য কোম্পানিতে পড়েনি। আমার দাদা-বাবা ছিলেন পথিকৃৎ শিল্পোদ্যোক্তা। তারা শিখিয়েছেন দেশকে দিতে হবে। তাদের দর্শন ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টির। সেগুলো আমরা এখনো পরিপালন করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো পারিবারিক ব্যবসার ঐক্য। অংশীদারদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হয়। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আমরা সব ব্যবসায় যাইনি। অনেক ব্যবসায় অনেক লাভ করা যেতে পারত, কিন্তু আমরা সেদিকে এগোইনি। বুঝে-শুনে ব্যবসা করার চেষ্টা করেছি। যে ব্যবসা টেকসই করা যাবে, সে ব্যবসাকে বেছে নিয়েছি।

স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাঙালি মালিকানাধীন শীর্ষ পারিবারিক উদ্যোগগুলোর মধ্যে আরো ছিল ভুঁইয়া বা গাওসিয়া গ্রুপ (গুলবক্স ভুঁইয়া), ইসলাম গ্রুপ (জহুরুল ইসলাম), ফকির চাঁদ গ্রুপ, রহমান-কাইয়ুম গ্রুপ (মকবুলুর রহমান জহুরুল কাইয়ুম), আলহাজ মুসলিমউদ্দিন গ্রুপ, নর্দার্ন-পিপলস গ্রুপ (আলহাজ শামসুদ্দোহা), রহমান ব্রাদার্স (খান বাহাদুর মুজিবুর রহমান), আফিল গ্রুপ (আফিলউদ্দিন আহমেদ), সাত্তার গ্রুপ, আশরাফ গ্রুপ, ভাণ্ডারি গ্রুপ, সবদার আলি গ্রুপ, ইব্রাহিম মিয়া অ্যান্ড সন্স, আনোয়ার-নিউ স্টার (সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী) ডেল্টা গ্রুপ (মোহাম্মদ আবদুস সামাদ)

সম্পদমূল্যের দিক দিয়ে স্বাধীনতা-পূর্বকালে ইসলাম গ্রুপের অবস্থান ছিল তৃতীয়। ১৯৬৯-৭০ সালে ইসলাম গ্রুপের সম্পদ মূল্যায়িত হয়েছিল তত্কালীন মুদ্রায় কোটি পাকিস্তানি রুপি ( কোটি ২৬ লাখ ডলার) শিল্প গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা জহুরুল ইসলামকে দেখা হয় দেশের সফল উদ্যোক্তাদের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থেকে শুরু করে উপমহাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছিল তার পরিচিতি। তার হাত ধরে গড়ে উঠেছিল নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (বিডিসি) জাতীয় সংসদ, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক ভাবনসহ দেশের নান্দনিক বহু স্থাপনা গড়ে উঠেছে কোম্পানির হাত ধরে। ভাইদের সঙ্গে নিয়ে আফতাব গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপ, ইস্টার্ন হাউজিং, নাভানার মতো শিল্প গ্রুপ গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

১৯৯৫ সালে জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর ভাইদের মধ্যে ভাগ হয় কোম্পানিগুলো। তার সন্তানরা ইসলাম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ইস্টার্ন হাউজিংয়ের হাল ধরেন। জহুরুল ইসলামের ভাই আজহারুল ইসলাম গড়ে তোলেন আফতাব গ্রুপ। অন্য ভাই শফিউল ইসলাম কামাল নাভানা গ্রুপের জন্ম দেন। উত্তরাধিকার হিসেবেই আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড ভাগে পান তিনি।

এর মধ্যে শফিউল ইসলাম কামালের মালিকানাধীন নাভানা গ্রুপের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি বর্তমানে বেশ খারাপ অবস্থায় আছে। দেশের অন্তত ৪০টি ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে শিল্প গ্রুপটি। অনাদায়ী সুদ যুক্ত হতে হতে মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে। করোনার আগেই গ্রুপটির বেশির ভাগ ঋণ খেলাপির খাতায় উঠেছিল। তবে অতীতের ব্যবসায়িক সুনাম ব্যাংকের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে খেলাপি হওয়া ঋণগুলো দফায় দফায় পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক পরিস্থিতি দিনে দিনে আরো খারাপ হয়েছে।

স্বাধীনতার আগ মুহূর্তে সম্পদের দিক থেকে বাঙালি মালিকানাধীন শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে ভুঁইয়া বা গাওসিয়া গ্রুপের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ওই সময়ে ভুঁইয়া পরিবারের উদ্যোগে গড়ে ওঠা কোম্পানিগুলোর সম্পদ মূল্যায়িত হয়েছিল সাড়ে কোটি পাকিস্তানি রুপিতে ( কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার) ভুঁইয়া পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কোম্পানি ছিল গুলবক্স ভুঁইয়া অ্যান্ড কোং। গ্রুপের মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল মসলিন কটন মিলস, গাওসিয়া কটন স্পিনিং মিলস, শরিয়তগঞ্জ টেক্সটাইল মিলস, গাওসিয়া জুট মিলস ইত্যাদি। পরিবারের প্রধান গুলবক্স ভুঁইয়া গ্রুপের বাইরেও দুটি পাটকলের অংশীদার পরিচালক বোর্ডের সদস্য ছিলেন। এগুলো হলো পাকাওয়ালা-মেমন গ্রুপের গুল আহমদ জুট মিলস বাওয়ানি-মেমন গ্রুপের পিপি জুট মিলস। এককালের নামকরা ভুঁইয়া গ্রুপ এখন অস্তিত্বহীন।

হারিয়ে গিয়েছে ফকির চাঁদ গ্রুপও। স্বাধীনতার আগে বাঙালি মালিকানাধীন শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে সম্পদ মালিকানার দিক থেকে গ্রুপটির অবস্থান ছিল চতুর্থ। পরিবারের প্রধান আলহাজ মোহাম্মদ ফকির চাঁদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গ্রুপটির ফ্ল্যাগশিপ প্রতিষ্ঠান ছিল হাজি মোহাম্মদ ফকির চাঁদ অ্যান্ড সন্স। ট্রেডিংয়ের পাশাপাশি পাট, পোশাক, নির্মাণসামগ্রী, ইস্পাত, মুদ্রণ বেকারি শিল্পে বিনিয়োগ ছিল ফকির চাঁদ গ্রুপের। এর মালিকানাধীন শিল্প গ্রুপগুলো ছিল আলিজান জুট মিলস, চাঁদ টেক্সটাইল মিলস, ঢাকা অটোমেটিক ব্রিকস, জালালাবাদ ব্রিকস অ্যান্ড টাইলস ইন্ডাস্ট্রিজ, মোহাম্মদী ক্যালেন্ডারিং অ্যান্ড প্রিন্টিং মিলস, এমএ ফকির অ্যান্ড সন্স (জুট প্রেস), চান্দ অ্যান্ড কোং (পাট রফতানিকারক), চান্দ জুট ট্রেডিং কোং (জুট প্রেস পাট ক্রয়) এবং বেকারি কারখানা ফকিরচান্দ অ্যান্ড সন্স। প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদ মূল্যায়িত হয়েছিল কোটি পাকিস্তানি রুপি ( কোটি ২৬ লাখ ডলার)

স্বাধীনতা-পূর্বকালের বাঙালি মালিকানাধীন বৃহৎ শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যগুলোও এখন হয় বিলুপ্ত, নয় বিভক্ত অবস্থায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব শিল্প গ্রুপের পরিণতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলোর প্রায় প্রতিটিই ছিল মূলত পারিবারিক ব্যবসা। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিরই উত্থানের পেছনে রয়েছে একেকজন উদ্যোক্তার পরিশ্রম সাফল্যের গল্প। প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তার তৈরি করা ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ব্যবসা পরিচালনা সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়েই পরের প্রজন্মগুলো ব্যবসার হাল ধরতে এগিয়ে আসে। যদিও শুরুর জন যেভাবে পরিবারে ঐক্য ধরে রাখার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন, দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মে এসে তা ভেঙে পড়ছে। পরিবারের সদস্যদের মত-পথের পার্থক্য সম্পত্তির দ্বন্দ্বের জের ধরে একপর্যায়ে পারিবারিক ব্যবসাগুলো ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ব্যবসার কর্তৃত্ব হস্তান্তর করার সময়ে কর্তৃত্ব নিয়ে বিবাদ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসহ নানা জটিলতা দেখা যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে হস্তান্তরের পর বিনিয়োগ সম্প্রসারণ নিয়েও পরিবারের মধ্যে কোন্দল দেখা দিয়েছে। শুধু স্বাধীনতার আগের বৃহৎ শিল্প গ্রুপগুলো নয়, স্বাধীনতার পরেও বড় হওয়া পারিবারিক ব্যবসাগুলো প্রজন্মান্তরে এসে ভেঙে পড়ার বা বিভক্ত হওয়ার অনেক নজির দেখা গিয়েছে। আবার দক্ষ কর্মীবাহিনী এবং যুগোপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক বিপণন ব্যবস্থাপনা গড়তে না পারার কারণেও অনেক পারিবারিক ব্যবসার পতন হয়েছে।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মামুন রশীদ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, যারা পরিবর্তন আধুনিক চিন্তাকে গ্রহণ করেছে, মূলত তারাই টিকে থেকেছে। এটি একটা বিরাট বিষয়। তারা পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিষ্ঠানের রূপান্তর ঘটিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত শক্তিশালী করতে পেরেছে। পাশাপাশি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিতও উন্নত শক্তিশালী হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা দায়িত্বশীলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে শিখেছে।

তিনি আরো বলেন, পারিবারিক ব্যবসাগুলোর অনেকগুলোরই সাকসেশন প্ল্যান (নতুন প্রজন্মের হাতে ব্যবসা স্থানান্তর সংক্রান্ত পরিকল্পনা) নেই। আগে ব্যবসা একজনই চালাত। তারা নিজেরা যতটুকু পারত করত আর পাশাপাশি তারা পরিবারের স্বল্পশিক্ষিত লোক দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করত। যারা টিকে থাকতে পারেনি দেখা গিয়েছে, তারা কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন সিইও নিয়োগ দেয়নি, প্রডাকশন হেড নিয়োগ দেয়নি। ব্যবসা কিন্তু পেশাজীবী দক্ষ লোকবল ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা যায় না। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হয়। আরেকটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো লুটেরা রাজনীতিপ্রসূত লুটেরা অর্থনীতি থেকে দূরে থাকতে না পারলে ব্যবসার টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয় না।

পরিবার পেশাদার কর্মীর মধ্যে সমন্বয় ছাড়া পারিবারিক ব্যবসা এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) অধ্যাপক . সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ধরনের ব্যবসাকে পেশাদারির সঙ্গে এগিয়ে নিতে হলে পরিবার পেশাদার কর্মী দুইয়েরই সমন্বয় থাকতে হয়। আর ব্যবসা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এগিয়ে নিতে অবশ্যই উত্তরসূরিদের চিন্তাভাবনা শেয়ারহোল্ডার থেকে স্টেকহোল্ডার পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। শুধু কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারের ভাবনা থেকে ব্যবসা পরিচালনা না করে সব স্টেকহোল্ডার অর্থাৎ কর্মী থেকে শুরু করে পণ্য সেবার ভোক্তাকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবসা নিয়ে ভাবতে হয়। বাংলাদেশে পারিবারিক ব্যবসাগুলোর মধ্যে যেগুলোয় এসবের ঘাটতি দেখা গিয়েছে, সেগুলোই হারিয়ে গিয়েছে।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই দেশের বৃহদায়তন শিল্প-কারখানাগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেয়া হয়। ওই সময়ে দেশের শিল্প খাতের মোট সম্পদে রাষ্ট্রের মালিকানা ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ শতাংশে। এরপর আশির দশকের গোড়ার দিকে ব্যাপক মাত্রায় বিরাষ্ট্রীয়করণ শুরু হয়। পুরনো প্রতিষ্ঠিত শিল্প উদ্যোগগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই সে সময় তাদের পুরনো অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বরং ওই সময়ে নতুন এক ধরনের শিল্পোদ্যোক্তাদের আবির্ভাব দেখা যায়, দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসার পরিবর্তে যাদের ঋণের অর্থ সরকারি সম্পদ লুট করাতেই আগ্রহ ছিল বেশি। সরকারি আনুকূল্যে এসব শিল্পোদ্যোক্তা ফুলেফেঁপে উঠলেও বিপাকে পড়ে গিয়েছিলেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন