ভুয়া সনদে চিকিৎসক: ১২ শিক্ষার্থী ও বিএমঅ্যান্ডডিসির দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছেন বাংলাদেশের ১২ শিক্ষার্থী। দীর্ঘ অনুসন্ধানে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় সেই ১২ শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমঅ্যান্ডডিসি) দুই কর্মকতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ বুধবার দুদকের উপপরিচালক সেলিনা আখতার মনি বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ১২ শিক্ষার্থী চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমঅ্যান্ডডিসি) চিকিত্সক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেন। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিবন্ধিত চিকিত্সক হিসেবে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতালেও নিয়োজিত হন। কিন্তু রেকর্ডপত্র যাচাইকালে, তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া প্রমাণিত হয়। তাদের এমবিবিএস সনদের সঠিকতা যাচাই করতে সনদপত্রগুলোর ছায়ালিপি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। চীনের বেইজিংস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সেসব সনদ যাচাই করে গত বছরের ২১ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুদকে প্রতিবেদন পাঠায়। সেসব রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় সেই ১২ শিক্ষার্থীর এমবিবিএস সনদ ভুয়া। 

এছাড়া সেসব সনদে স্বাক্ষরের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য হস্তলেখা বিশারদের সহযোগিতা নেয়া হয়। তাতেও সনদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে প্রমাণ মিলে। সেই ১২ শিক্ষার্থী কখনও চীনের তাইশান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখাই করেননি। কেউ কেউ ট্যুরিস্ট ভিসায় চীনে গিয়েছিলেন, সে দেশে থাকার সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। 

তাইশান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এরকম জাল-জালিয়াতির নিন্দা জানিয়েছে এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেছে।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিএমঅ্যান্ডডিসি সনদ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার সতর্কতা বা নিয়মনীতি মানা হয়নি। বিএমঅ্যান্ডডিসি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিনের কাছে প্রার্থীরা যখন তাদের বিভিন্ন নথিপত্র জমা দেন সেগুলো যাচাই করার কথা। প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রথমে সঠিকতা যাচাই করে রেজিস্ট্রারের কাছে মূল সনদ ও তার ছায়ালিপি উপস্থাপন করেন। তখন রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া মূল রেকর্ডপত্র দেখে আবার ছায়ালিপিগুলো সত্যায়িত করেন। সে কারণে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট নথিগুলো সম্পর্কে তারা জ্ঞাত ছিলেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। 

তারা জেনে-বুঝে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভুয়া চিকিত্সকদের নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দিয়ে ও পরবর্তীতে এমবিবিএস চিকিত্সক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর দেয়ার মাধ্যমে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। সেই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আজ মামলাটি দায়ের করা হয়। 

মামলায় যেসব শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. ইমান আলী, সুদেব সেন, তন্ময় আহমেদ, মো. মাহমুদুল হাসান, মো. মোক্তার হোসাইন, মো. আসাদ উল্লাহ, মো. কাউসার, রহমত আলী, শেখ আতিয়ার রহমান,  মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আসলাম হোসেন, মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ।

এছাড়া মামলায় বিএমঅ্যান্ডডিসির রেজিস্ট্রার  মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনকেও আসামি করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন