নভেল করোনাভাইরাসের দীর্ঘ ছুটি পুষিয়ে নিতে অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি ও বাকি সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে তদারক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান বণিক বার্তাকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ও এতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। আমরা সে আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তথ্য পাঠানোর জন্য চিঠি দিই। তাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, ইউজিসির দেয়া চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে তিনটি বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে কিনা, কতগুলো বিভাগে নেয়া হচ্ছে ও ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার। সে চিঠির আলোকে ৭২টি বিশ্ববিদ্যালয় মেইলের মাধ্যমে ইউজিসির চিঠির জবাব দেয়। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাকি ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকয়টিই অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে বলে ইউজিসিকে জানায়, আর ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাতটি অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে বলে মেইলে উল্লেখ করে। সে হিসেবে বর্তমানে দেশের ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে।
ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হারেও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্নতা রয়েছে। এ হার পাবলিকের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি বলে জানান ইউজিসির এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে তাদের শতভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনে নেয়া ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। কেউ জানিয়েছে ৮০ থেকে ৯০, আবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে তাদের অংশগ্রহণের হার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। সব মিলিয়ে গড় হিসাব করলে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইনে পাঠদানে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ।
করোনার বন্ধের সময়টাতে অনলাইনে পাঠদান চলছে বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ইউজিসিকে দেয়া চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছে, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে নেয়া এ ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। অনলাইন ক্লাস বিষয়ে জানতে চাইলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, শুধু পাঠদান নয়; আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই অনলাইনে সচল রয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনলাইনে পাঠ নিচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সভা করা হচ্ছে। এমনকি আমরা অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দিয়েছি।
অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে আরেক শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়টির অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের
অংশগ্রহণের হার ৭৭-৮০ শতাংশ। ইউআইইউ উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ছুটির মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা অনলাইনে সীমিত পর্যায়ে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এটা মূলত বসে না থেকে সময়টাকে কিছুটা কাজে লাগানো। কিন্তু গ্রামেগঞ্জে ইন্টারনেটের বেহাল অবস্থায় কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। তাদের ভিডিও ও অডিও ফাইলগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করার অনুরোধ করছি। তা-ও না পারলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ইউনিভার্সিটি খোলার পর যথেষ্ট পরিমাণ সময় হাতে নিয়ে ক্লাস করে সিলেবাস শেষ করে ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে আমরা পরবর্তী সেমিস্টার শুরু করব।
অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের তিনটি ভার্চুয়াল ক্লাসরুম রয়েছে। কয়েকটি বিভাগে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একটি বিভাগে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হার খুবই ভালো। আসলে অনেক শিক্ষার্থী ইন্টারনেট কিনতে না পারার কারণে অংশ নিতে পারছে না। সরকার যদি একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য ইন্টারনেটের মূল্যে ছাড় দিত, তাহলে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার এ হার আরো বাড়ত।
করোনার ছুটি ঘোষণার পর গত ২৩ মার্চ করোনার বন্ধের সময়টাতে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানিয়ে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। কমিশনের দেয়া চিঠিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষকদের অনলাইনে পাঠদান চালাতে উৎসাহ দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের (বিডিরেন) ডাটা সেন্টারের জুম অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিনা খরচে এ অনলাইন কার্যক্রম চালানো সম্ভব। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য শিক্ষকদের বিডিরেনের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়। এ ব্যবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ডেস্কটপ, ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারেক্টিভ শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে।