করোনাভাইরাস

এসএমইদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালুর প্রস্তাব এসসিবির

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ দুর্যোগে দেশের পাশে থাকতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। ব্যাংকটি গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সহযোগিতা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তারা বলছে, কভিড-১৯ এর প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, বাংলাদেশও যার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো ব্যাংক হিসেবে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এই কঠিন সময়ে গ্রাহকদের সহায়তা করার জন্য বিশেষ কিছু সহযোগিতা ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির বিবৃতির পাশাপাশি বণিক বার্তার সঙ্গে আলোচনায় বিশেষ ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুবিধাগুলো নিয়ে কথা বলেছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়।

আপনারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সঙ্কটের এই চ্যালেঞ্জ এবং অনিশ্চয়তা মোকাবেলায় করণীয় এবং সহায়তা নিয়ে ব্যাংক সক্রিয়ভাবে গ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটটা একটু ব্যাখ্যা করেন

বাংলাদেশেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি আমরা। আমরা দেখছি ভিন্ন ভিন্ন খাতের ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা আছে। বড় ক্লায়েন্টের ক্ষেত্রে তার আর্থিক সক্ষমতা ভিন্ন। কারণ তাদের অর্থ প্রবাহের উৎস বহুমুখি। কিছু আছে কমোডিটিভিত্তিক, যেগুলোর বিক্রি আছে, আবার ওষুধের মতো পণ্যেরও বিক্রি হচ্ছে, এই ধরনেরর ক্লায়েন্টের সমস্যা পণ্য ভেদে ভিন্ন। অন্যদিকে যারা রফতানি করে তাদের ওপর প্রভাব পড়ছে। এভাবে ক্লায়েন্টভেদে প্রয়োজন ভিন্ন। করপোরেট যারা আছেন তাদের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট ভেদে প্রয়োজন ভিন্ন হবে। প্রথম এক মাস তাদের কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। এই এক মাসে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের প্রয়োজনটা শনাক্ত করবো। ছোট ক্লায়েন্টদের মূলত অভ্যন্তরীণ ব্যবসা। দোকানপাট বন্ধ থাকলে তাদের কিছু করার থাকে না। এ ধরনের ক্লায়েন্টদের ক্ষেত্রে তিন মাসের পেমেন্ট হলিডে দিচ্ছি। এ সময়ে তাকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী ৯ শতাংশ সুদের হার কার্যকর করা নিয়ে বলুন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী ৯ শতাংশ সুদের হার কার্যকর হবে, এই হার আগে এসএমইদের জন্য ১৬ শতাংশ ছিল। একটা সুবিধা হলো এখন পরিশোধ করতে হবে না। আবার যখন পরিশোধ করবেন তখন কম হারে সুদ দিয়ে পরিশোধ করতে পারবেন। একটা চ্যালেঞ্জ হলো এই ৯ শতাংশে এসএমইদের অর্থায়ন দিতে অনেক ব্যাংকই স্ট্রাগল করবে, কারণ লস বেশি হলে ঝুঁকি বেড়ে যাবে। আবার অপারেশন কস্টও বেশি। এই জন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম একটা ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম, যেটা শুধু এসএমইদের জন্য। এ ধরনের স্কিম মালয়েশিয়াসহ আরো কিছু দেশে আছে। 

এই স্কিমটি সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন

এই ধরনের স্কিমের ক্ষেত্রে সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮০ শতাংশ ঝুঁকি বহন করবে। একটা প্রিমিয়াম এক্ষেত্রে পরিশোধ করতে হবে। ব্যাংকগুলো যেহেতু অর্থায়ন করবে, তারা ২০ শতাংশ ঝুঁকি বহন করবে। এটা এক ধরনের অ্যাডিশনাল স্কিম, শুধু এসএমইদের জন্য। এ ধরনের ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলোর নন-পারফর্মিং লোনের পোর্টফোলিও কমে যায়। এ ধরনের ব্যবস্থা মালয়েশিয়াতে ৪০ বছর ধরে আছে। আমাদের ব্যাংকও সেই স্কিম ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছে। ওই অভিজ্ঞতাই আমরা বাংলাদেশে কাজে লাগাতে চাই। 

এই সঙ্কট পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য উপায় কী হতে পারে?

আমাদের দেশে এখন ইস্যু হচ্ছে দুই ধরনের: একটা হচ্ছে রফতানি খাতের সমস্যা, আরেকটা হলো অভ্যন্তরীণ খাতের সমস্যা। যদি আমরা করোনার প্যানডেমিক স্প্রেডটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে সেটাই হবে আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার। গোটা পৃথিবী আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও আমাদের নিয়ন্ত্রণ তো আমাদেরই হাতে। এটা যদি আমরা করে যেতে পারি তখন সরকারের রিসোর্স প্রয়োজন হবে শুধু রফতানি খাতের সহায়তায়। এজন্য আমাদের এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে স্প্রেডটাকে নিয়ন্ত্রণ করে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে ফিরিয়ে আনা। সেক্ষেত্রে সরকারের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমটাও বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে।

করোনা পরিস্থিতিতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ঘোষিত সহায়ক ব্যবস্থাগুলো হলো:

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ / বিজনেস ব্যাংকিং ক্লায়েন্টদের জন্য:

ব্যবসায়ী গ্রাহকদের জন্য লোন অ্যাগেইনস্ট প্রপার্টি, ফাইন্যান্স অ্যাগেইনস্ট প্রপার্টি (সাদিক  গ্রাহক) এবং মর্টগেজ লোনের ক্ষেত্রে তিন মাসের পেমেন্ট হলিডে 

বিজনেস ব্যাংকিং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ক্লায়েন্টদের জন্য ৬০ দিন পর্যন্ত বর্ধিত ট্রেড ফ্যাসিলিটি

ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ক্লায়েন্টদের জন্য টেম্পোরারি ওভারড্রাফট বা ইনক্রিমেন্টাল লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি

লোন অ্যাগেইনস্ট প্রপার্টি ক্লায়েন্টদের ক্ষেত্রে অনুমোদিত সীমা বৃদ্ধি

কর্পোরেট ক্লায়েন্টদের জন্য:

৩০ দিনের তাৎক্ষণিক পেমেন্ট হলিডে। গ্রাহকদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অর্থ পরিশোধে স্থিতির এই সময়ে প্রয়োজন হলে ব্যাংক গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করবে

এসব সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য গ্রাহকদের জন্য ব্যাংক পেনাল ইন্টারেস্ট এবং লেইট পেমেন্ট চার্জ মওকুফ করবে। উদ্যোক্তাদের জন্য ক্রেডিট কার্ড লেট পেমেন্ট ফিও মওকুফ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন