ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে পাশে রেখে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা দিলেন ট্রাম্প

বণিক বার্তা অনলাইন

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী রেখে ‘দুই রাষ্ট্র ধারণার একটি বাস্তব পরিকল্পনা’ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে এ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন তিনি। যেখানে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলার পর দুই বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ পরিকল্পনায় মূলত ইসলায়েলিদের দাবি-দাওয়ার পক্ষেই সব প্রস্তাব রাখা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন সমর্থনে পশ্চিমতীরে ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা এবং অদূর ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনকে সীমিত সার্বভৌমত্ব দেয়াই ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা সমাধান পরিকল্পনার লক্ষ্য। এছাড়া একদিকে নির্বাচনের আগে অভিশংসের মুখে ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে অবস্থানকালেই নিজে দেশে ঘুষের মামলায় আদালতে অভিযুক্ত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ইসরায়েলেও জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। ভোটারদের দৃষ্টি সরাতেই এমন সময়ে এমন একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করা হলো।

পরিকল্পনা প্রস্তাবে ট্রাম্প বলেছেন, জেরুজালেম ইসরায়েলের অবিভক্ত রাজধানী থাকবে। তবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রেরও একটি রাজধানী থাকবে এবং সেটি হবে পূর্ব জেরুজালেমে। তবে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ভাগ্য নিয়ে কথা বলেননি ট্রাম্প। তারা তাদের ঘরে ফিরতে পারবে কি না সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। তিনি শুধু বলেছেন, তার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কোনো ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনি নিজ বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হবেন না।

ট্রাম্পের পকিল্পনায় যেটুকু ইঙ্গিত রয়েছে তাতে বুঝা যায়, ফিলিস্তিনের রাজধানী হবে জেরুজালেমের আরব ভূখণ্ড সংলগ্ন পূর্বাংশে, যেখানে রয়েছে আরব-ইসরায়েল বিভেদ রেখা। এ অংশটি আক্ষরিক অর্থেই মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন। এর কাছকাছি রয়েছে ফিলিস্তিনের কার্ফ আকাব, আবু দিস এবং শুয়াফাত। প্রস্তাব অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিরা তাদের রাজধানীর নাম রাখবে ‘আল কুদস’। জেরুজালেমেরই আরবি নাম এটি। কিন্তু পূর্ব জেরুজালেমের ঠিক কোথায় রাজধানী হবে বা এই পবিত্র শহরের কোনো অংশে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে কি না তা ট্রাম্পের প্রস্তাবে একেবারে অস্পষ্ট।

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প যখন পরিকল্পনার ঘোষণা দেন, তখন তার পাশে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের বক্তব্য শেষে তিনিও বক্তব্য রাখেন। তাছাড়া এ পরিকল্পনা ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে জানা যায়। কুশনার পরিবার ইসরায়েলের অন্যতম বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ কোম্পানি। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণেও এ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। 

ট্রাম্প আরো বলেন, শান্তির পথে আজ এক বড় পদক্ষেপ নিল ইসরায়েল। শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এই প্রথম ওই এলাকার ভূখণ্ড নিয়ে একটি খসড়া মানচিত্র তৈরিতে ইসরায়েল সায় দিয়েছে। এসময় অন্যদের সঙ্গে নেতানিয়াহুকেও করতালি দিতে দেখা যায়।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বক্তৃতার সময় ফিলিস্তিনিদের মৃদু সতর্কবাণী দিতেও ছাড়েননি। তিনি স্পষ্ট করেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট সমাধানে এটি একটি ঐতিহাসিক প্রস্তাব। এ প্রস্তাব মেনে নিলে ফিলিস্তিনিরা একটি সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র পাবে। তাদের বিদেশী অনুদান নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রচুর ফিলিস্তিনির কর্মসংস্থান হবে। সেই সঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনিদের শেষ সুযোগ!

সূত্র: সিএনএন, বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন