দেয়ালে
আঁকাআঁকি কিংবা লেখার ব্যাপকতা অনেক। বলা যায় এটি এক ধরনের স্থায়ী প্রতিবাদ। ভিন্ন
আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয় বলে এর প্রতি সহজেই মানুষের দৃষ্টি পড়ে। প্রতিরোধ,
প্রতিবাদের ভাষায় দেয়াল জুড়ে গ্রাফিতি যেন রেঁনেসা নিয়ে এসেছে পৃথিবীর বুকে। গ্রাফিতি
হতে পারে নানা চিত্র অংকন বা শৈল্পিক ভাবনার ছাপ। শৈল্পিক উপায়ে দেয়ালের ওপরে লেখা
বা চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় সমাজের নানা বিষয়। কখনো মার্কার পেন অথবা কালার স্প্রে
পেইন্ট সাধারণত গ্রাফিতির উপকরণ। তবে গ্রাফিতি আজকের পন্থা নয়। রোম ও পম্পেই নগরীর
সমাধিস্থলের দেয়াল ও ধবংসাবশেষে গ্রাফিতির অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে প্রায় চার
হাজার বছর পূর্বে।
সময়ের
সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেছে আরো অর্থবহ ও সুস্পষ্ট গ্রাফিতি আঁকা দেয়াল। তবে সমসাময়িক
গ্রাফিতির জন্ম বলা হয় হিপহপ দ্বারা প্রভাবিত। এমন অসংখ্য গ্রাফিতির
উদ্ভব ফিলাডেলফিয়া এবং নিউ ইয়র্ক শহরের সুড়ঙ্গে আঁকা গ্রাফিতি থেকে। আমাদের কথাই
যদি বলি, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সে সময়ে দেশের অলিগলি থেকে প্রধান প্রধান শহরের
ফটকজুড়ে পোস্টারসহ নানা গ্রাফিতি ছিল। পোস্টার, গ্রাফিতি, প্ল্যাকার্ড—এই
সবই যেন একটি অপরটির অংশ। শিল্পের একটি ভাষা বলা হয় গ্রাফিতিকে। শিল্পীরা
বলেন, দেয়ালে যা কিছু উপস্থাপিত হয়, তা মানুষকে আকর্ষণ করে বেশি। ফলে সমাজের জন্য
তা উপযোগী।
সব
সময় যে গ্রাফিতি রাজনৈতিক ইস্যু, বিপ্লবী ভাবনা নিয়ে আঁকা হয় এমনটি নয়। তবে গ্রাফিতির
মূল উপজীব্য সমসাময়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়কে ঘিরেই। ১৯৭১-এর
নির্মমতার প্রতিবাদের ভাষায় যুক্ত হয়েছিল গ্রাফিতি, পোস্টার। শিল্পী
কামরুল হাসানের সে সময়ে আঁকা বেশ কিছু পোস্টার যেগুলোতে আঁকা ছিল জেনারেল ইয়াহিয়ার
মুখের সেই বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছবি এবং সঙ্গে লেখা ‘এই রক্তখেকো জানোয়ারদের হত্যা
করতে হবে’। সে সময়ের এমন সব পোস্টার নজর কেড়েছিল জন সাধারণের।
পাশাপাশি তার আঁকা বেশ কিছু দেয়ালচিত্র বা গ্রাফিতিও তৈরি করেছিল হট্টগোল। যে
সবাইকে জানান দিচ্ছিল হটাতে হবে এ রক্তখেকোদের। স্বাধীন করতে হবে বাংলাকে। এর
মধ্যে কেবল শিল্পী কামরুল হাসান না, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকেই অনেক শিল্পী
এঁকেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। গ্রাফিতি বা এ দেয়ালচিত্রের বিশেষত্ব হচ্ছে বড় পরিসরে
কাজ করা যায়। খুব করে তুলে ধরা যায়
সমাজের নানান বিষয়।
গ্রাফিতির
ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাঙ্কসি। বিশ্বজুড়ে এই ধারার গ্রাফিতি রীতিমতো
গ্রাফিতিকে প্রতিবাদের হাতিয়ার করে তুলেছিল। এই কয়েক বছর আগে আমাদের দেশে ‘সুবোধ’
শিরোনামে সিরিজ গ্রাফিতি আঁকা হয়েছিল। এরপর কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে
শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও ভূমিকা রাখছে গ্রাফিতি।