জাপানের আলপাইন অঞ্চলের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা কামিকোচি একটি নিরিবিলি ও গাড়িমুক্ত পর্যটন কেন্দ্র। এটি হাইকিংপ্রেমীদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত। টোকিও, কিয়োটো বা ওসাকার মতো ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে দূরে, কামিকোচি হলো শান্তির এক অপরূপ ঠিকানা। বিশেষ করে শরতের মৌসুমে এ নির্জন শহরটি হাইকিংপ্রেমীদের মুগ্ধ করে। কারণ এখানে রয়েছে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা আর স্নো মাঙ্কিদের (স্থানীয় বানর) দুষ্টুমিতে ভরা এক ভিন্ন জগত।
জাপানের আলপসের ১ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই ছোট্ট শহরটি তার নির্মল বাতাস ও নদীর তীরে হাইকিং পথগুলোর জন্য বিখ্যাত। শহরের সৌন্দর্য পর্যটকদের নিয়ে যাবে এক অনন্য শান্তিময় জগতে। এখানে কোনো চেইন রেস্টুরেন্ট নেই। ম্যাকডোনাল্ডস বা স্টারবাকসের মতো জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টের অভাবই জায়গাটিকে আরো আলাদা করে তুলেছে। কামিকোচি মূলত ২৭ এপ্রিল থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে এবং শীতকালে এটি বন্ধ থাকে। এ সময়ে এলাকাটি বরফে ঢেকে যায়।
পর্যটকদের একটি দল জানান, তারা কামিকোচিতে তিন দিন কাটিয়েছিলেন। এখানে প্রতিদিনই হাইকিং করতে হয়। হাইকিংয়ের ফাঁকে স্থানীয় খাবার উপভোগ ও প্রকৃতির মাঝে বিশ্রামের মুহূর্ত পর্যটকদের এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা দেয়। প্রথম দিনের হাইকিংয়ের শেষে মায়োজিন পুকুরের তীরে গেলে একদল স্নো মাঙ্কিকে খেলা করতে দেখা যায়। জায়গাটির ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালীন ক্লান্তি থেকে যে কাউকেই আরামের অনুভূতি দেবে।
১৯৭৫ সাল থেকেই কামিকোচি গাড়িমুক্ত এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ কারণে এখানকার শান্ত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখন পর্যন্ত টিকে আছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ির প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ায় বাসে করে পর্যটকদের আসতে হয়। এখানের চুবু-সানগাকু ন্যাশনাল পার্কের অংশটি জাপানের সবচেয়ে সুন্দর উপত্যকা হিসেবে খ্যাত। একে ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
কামিকোচির শেষ হাইকিং গন্তব্য ছিল তাইশো পুকুর। এই পুকুরের নিস্তব্ধতা, স্নো মাঙ্কিদের দুষ্টুমি আর পাখিদের গান পর্যটকদের হৃদয়ে গেঁথে থাকে। প্রকৃতির মাঝে ছুটি কাটানোর এমন অভিজ্ঞতা সত্যিই বিরল। প্রাকৃতিক এতো বৈচিত্র্যের মাঝে কামিকোচির গাড়িমুক্ত পরিবেশ এ সৌন্দর্যকে আরো বেশি উপভোগ্য করে তুলেছে।