দ্রব্যমূল্য ভোক্তার সাধ্যের মধ্যে রাখা নতুন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গত দু-তিন বছরে চিনি ও গুড়ের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ ভাগ।
বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি খুচরা বাজারে ১৪৫ ও প্যাকেটজাত চিনি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি কেজি আখের গুড় বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে। আর খেজুর নামের ভেজালগুড় বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও চিনি ও গুড়ের এ অগ্নিমূল্য ছিল না। তখন প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ১০০ ও গুড়ের দাম ছিল ৮০ টাকা।
শিশু-কিশোরদের মেধা বিকাশে চিনি ও গুড়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে জাতি যত বেশি গুড় ও চিনি গ্রহণ করে সেই জাতি তত মেধাবী। অন্যান্য এশীয় দেশের তুলনায় পাকিস্তানে মাথাপিছু বার্ষিক চিনি ব্যবহার বেশি। সেখানে মাথাপিছু বার্ষিক চিনির ব্যবহার ২৫ কেজি এবং ভারতে ১৪, চীনে ১১ ও বাংলাদেশে মাত্র ৯ দশমিক ৭৮ কেজি। অন্যদিকে সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিতে জনপ্রতি বার্ষিক চিনি ভোগের পরিমাণ যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ৪২, ৩৩ দশমিক ৩৬, ৩৩ দশমিক ১৭ ও ৩২ দশমিক ৯০ কেজি।
২০২২-২৩ সালে সারা বিশ্বে ১৭৬ বিলিয়ন টন চিনি ব্যবহার হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন টনে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চিনি উৎপাদন বাড়ছে এবং আগের বছরগুলোর তুলনায় চিনির দাম কমলেও বাংলাদেশে বিপরীত চিত্র দৃশ্যমান হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সুস্থ দেহের জন্য একজন মানুষের দৈনিক ২৫ গ্রাম চিনি খাওয়া উচিত। সে হিসাবে বছরে চিনির প্রয়োজন প্রায় ১৬ লাখ টন। এছাড়া মিষ্টির দোকান, বেকারি পণ্য ও ওষুধসহ নানা শিল্পের জন্য আরো দুই লাখ হলেও দেশে বার্ষিক চিনির প্রয়োজন ১৮ লাখ টন। গত বছর দেশে চালু নয়টি সরকারি মিলে চিনি উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার ৩৭৪ টন, যা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এ রকম অবস্থা ছিল না চিনি শিল্পের। একসময় দেশে ১৫টি চিনিকল থেকে দুই লাখ টনের বেশি চিনিও উৎপাদন হতো। তখন চিনির দাম থাকত ভোক্তাদের সাধ্যসীমার মধ্যে। সরকারি চিনিকলের উৎপাদিত চিনি দিয়ে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। আর্মি, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের চিনির চাহিদাও পূরণ করা হতো আখ থেকে উৎপাদিত নিরাপদ চিনির মাধ্যমে।
লোকসান কমানোর অজুহাতে ২০০০ সালে ছয়টি সরকারি চিনিকলে উৎপাদন বন্ধের পরই দেশে চিনি শিল্পের বারটা বাজতে শুরু করে। চিনিকল এলাকায় আখের আবাদ হ্রাস পায়, অবৈধভাবে পাওয়ার ক্রাশারের মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বেড়ে যায়। চাষীরা সময়মতো আখের মূল্য পান না। শ্রমিক-কর্মচারীরা অবসর ভাতা পান না। বেতন-ভাতা পান না। ঠিকাদাররা সরবরাহ করা উৎপাদন উপকরণের মূল্য পান না। এসব কারণে একসময়ের সম্ভাবনাময় ভারী কৃষিভিত্তিক চিনিশিল্প মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে এসে উপনীত হয়। ৪০০ কোটি টাকার জন্য চিনি শিল্পের প্রায় চার হাজার শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা অবসরোত্তর পাওনা না পেয়ে সাত-আট বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করবেন—এটা কেমন কথা? স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য যে শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি বুকের রক্ত ঢেলে রাজপথ রঞ্জিত করেছেন, যে দেশের চারটি মূলমন্ত্রের মধ্যে একটি হলো সমাজতন্ত্র, সে দেশে কেন এমন অমানবিক কর্মকাণ্ড চলবে তা আমার কাছে মোটেও বোধগম্য নয়? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি বিষয়টি জানেন?
অন্যদিকে আখভিত্তিক সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ করে চিনির বাজার একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য বেসরকারি পরিশোধন কোম্পানিগুলোর ষড়যন্ত্রও কম ছিল না। পরিশোধন কোম্পানিগুলো সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে চিনি বিক্রি করত। অনেক সময় নিজ পরিবহনে বিনা ভাড়ায় তাদের ডিলারদের কাছে চিনি পৌঁছে দিত। আখ থেকে উৎপাদিত দেশীয় চিনির রঙ একটু অস্বচ্ছ থাকায় পরিশোধন কারখানার সাদা ধবধবে চিনি বাজারে বেশি বিক্রি হতো। অথচ পুষ্টিমানের দিক থেকে এবং মিষ্টতার দিক দিয়ে আখ থেকে দেশীয় কারখানায় উৎপাদিত চিনির গুণগত মান অনেক উন্নত।
চলতি মাড়াই (২০২৩-২৪) মৌসুমে মিলজোন এলাকায় ৪৩ হাজার ৯ একর জমি থেকে ছয় লাখ টন আখ মাড়াই করে ৬ দশমিক ২ রিকভারি হারে ৩৭ হাজার ২০০ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আখের ফলন ভালো হয়েছে। আখের মূল্য কুইন্টালপ্রতি ১০০ টাকা বাড়িয়ে আখের দাম পুনর্নির্ধারণ করায় চাষীদের মধ্যে মিলে আখ সরবরাহের আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং আখ রোপণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যায়, এ বছর চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। উল্লেখ্য, গত মাড়াই মৌসুমে মিলজোন এলাকায় আখের আবাদ ছিল ৪৯ হাজার ৪২৫ একর। ওই মাড়াই মৌসমে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩৭৪ টন আখ মাড়াই করে ৫ দশমিক ৫৪ রিকভারি হারে চিনি উৎপাদন হয়েছিল ২১ হাজার ৩৭৪ টন।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন চিনিকল এলাকায় আখের মূল্য পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গঠিত স্থায়ী কমিটি গত ২৭ জুলাইয়ের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুম থেকে আখের বর্তমান ক্রয়মূল্য প্রতি কুইন্টাল মিল গেটে ৪৫০ থেকে বৃদ্ধি করে ৫৫০ টাকা এবং বাইরের কেন্দ্রে প্রতি কুইন্টাল ৪৪০ থেকে বৃদ্ধি করে ৫৪০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। সেই সঙ্গে ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমের জন্যও অগ্রিম আখের মূল্য ঘোষণা করে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমে প্রতি কুইন্টাল আখের দাম মিলগেটে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা এবং বাইরের কেন্দ্রে ৫৪০ থেকে ৫৮৭ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে মাড়াই মৌসুমের মাঝামাঝি থেকে শেষ ভাগ পর্যন্ত ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ দিন অন্তর পাঁচবার আখের মূল্য কুইন্টালপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। আগের ন্যায় ৮ শতাংশের অধিক চিনি আহরণের জন্য প্রিমিয়াম মূল্যও প্রদান করা হবে। মাড়াইযোগ্য আখের মূল্যের সঙ্গে বিশুদ্ধ বীজ আখের দামও আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়েছে। মিলে মাড়াইয়ের জন্য সরবরাহযোগ্য আখের মূল্যের চেয়ে এফএস ও সিএস শ্রেণীর পরিচ্ছন্ন বীজ আখের মূল্য ১০ থেকে ১২ টাকা এবং টিএলএস শ্রেণীর বীজ আখের মূল্য কুইন্টালপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে চিনিকলগুলোর অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। সরকারি চিনিকলগুলোয় উৎপাদন বাড়িয়ে ভোক্তা ও আখচাষীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নিম্ন লিখিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
এক. ২০০০ সালে বন্ধ ঘোষিত চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন এবং পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে যাচাই সাপেক্ষে পুনরায় চালু করতে হবে।
দুই. বন্ধ চিনিকলগুলোর আখচাষীদের সব বকেয়া কৃষি ঋণ একবারে মওকুফ করতে হবে এবং অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পাওনা সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।
তিন. প্রতি বছর অন্যান্য ফসলের মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আখের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে এবং এ ঘোষণা রোপণ মৌসুম শুরুর আগে অর্থাৎ জুন-জুলাইয়ে দিতে হবে।
চার. বাংলাদেশে আগে পাঁচ-সাত বছর পরপর ঘূর্ণিঝড় হতো, এখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছরই দু-একবার ঘূর্ণিঝড় হয়। এ ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় উপকূল ও চরাঞ্চলের কৃষক। এবারো অক্টোবরে মিধিলার কারণে কত কৃষকের যে পাকা আমন ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। শাকসবজিও কম নষ্ট হয়নি। তাই কৃষি, কৃষক তথা বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে কৃষিকে রক্ষা করতে হবে। এ বছর ভরা মৌসমে আলুসহ শাকসবজির উচ্চমূল্যের কারণও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে কৃষককে বাঁচাতে হলে আমাদের ঘাতসহিষ্ণু ফসলের চাষ বাড়াতে হবে। উৎপাদন ও তার ব্যবহার বাড়াতে হবে। আখ একটি সাংঘাতিক ঘাতসহিষ্ণু ফসল। খরা, বন্যা জলোচ্ছ্বাসের সময় মাঠের সব ফসল বিনষ্ট হলেও আখ সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয় না। প্রকৃতির প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার শক্তি আখ ফসলের বেশি। তাই আমাদের চরাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় ঘাতসহিষ্ণ আখের চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে। শুধু চিনি নয়, আখ থেকে জৈব জ্বালানি, আখের উদ্বৃত্ত ছোবড়া থেকে বিদ্যুৎ, মোলাসেস থেকে পশুখাদ্য, ভিনেগারসহ নানা পণ্য তৈরি করে অধিক মূল্য সংযোজন করতে হবে এবং সেভাবে আখের মূল্য নির্ধারণ করে আখ চাষকে আকর্ষণীয় ও লাভজনক করতে হবে। সেই সঙ্গে জমি চাষ, নালা তৈরি, সেচ প্রদান, আগাছা দমন, আখ কাটা প্রভৃতি কাজগুলোয় যন্ত্রের ব্যবহার করে আখ চাষের উৎপাদন খরচ কমানোর ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে।
পাঁচ. আমদানীকৃত অন্যান্য ফসলের ন্যায় আখ চাষের জন্য প্রদত্ত ঋণের সুদ ১১ থেকে ৪ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে।
ছয়. মিলে আখ সরবরাহের তিনদিনের মধ্যে সম্ভব হলে সঙ্গে সঙ্গে আখের মূল্য প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাত. আখের ওজনের কারচুপি রোধে প্রতিটি আখ ক্রয় কেন্দ্রে ডিজিটাল ওজনযন্ত্র স্থাপন করতে হবে।
আট. চিনিকল এলাকায় অবৈধ পাওয়ার ক্রাশারের মাধ্যমে আখমাড়াই ও গুড় তৈরি বন্ধ করতে হবে। আখচাষীরা তাদের ব্যবহারের জন্য সীমিত পরিমাণ গুড় তৈরি করতে হলে মিল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
নয়. মিল এলাকার মতো মিলবহির্ভূত এলাকায় আগাম, রোপা ও মুড়ি আখ চাষের ওপর সমহারে সরকারি ভর্তুকি দিতে হবে। সেই সঙ্গে মিলবহির্ভূত এলাকায় বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদন এবং বিনামূল্যে অথবা ঋণে বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দশ. মিলবহির্ভূত গুড় উৎপাদন এলাকায় অধিক রস নিষ্কাশন যুক্ত ইক্ষু মাড়াইযন্ত্রে অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতির মতো ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিতে হবে।
এগার. হাইড্রোজমুক্ত নিরাপদ গুড় উৎপাদনের জন্য গুড় উৎপাদন এলাকার আখচাষীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বার. নন-মিলজোন এলাকায় অন্য ফসলের মতো আখ চাষের উন্নত কলাকৌশলের ওপর প্রদর্শনী খেত স্থাপন, মাঠ দিবস, পদ্ধতি প্রদর্শনী ও ফলাফল প্রদর্শনী, চাষী যোগাযোগ, মাঠ পরিদর্শন প্রভৃতি সম্প্রসারণ কর্মকাণ্ড আরো জোরদার ও গতিশীল করতে হবে।
তের. চর ও পাহাড়ি এলাকায় চিবিয়ে খাওয়া আখ চাষ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিসহ কর্মকাণ্ড জোরদার করতে হবে। সেই সঙ্গে চলমান বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদন ও বিতরণ প্রকল্পের মেয়াদ কমপক্ষে আরো পাঁচ বছর বাড়াতে হবে।
চৌদ্দ. আখের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে আলু, পেঁয়াজ ও রসুন চাষের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
পনেরো. দেশে গুড়ের অভাব পূরণের জন্য গ্রামীণ রাস্তার দুই ধারে তাল ও খেজুর গাছ রোপণ করতে হবে এবং ইটভাটায় খেজুর গাছ পোড়ানোর কাজ বন্ধ করতে হবে।
চিনি আহরণ হারের ওপর একটি চিনিকলের বাঁচা-মরা, লাভ-লোকসান বহুলাংশে নির্ভর করে। এজন্য বিএসআরআইকে আরো উচ্চ চিনি আহরণহারযুক্ত আখের জাত উদ্ভাবন করতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে কোনো ক্রমেই দৈনিক কোটার অতিরিক্ত আখ ক্রয় করা যাবে না এবং ক্রয়কৃত সমুদয় আখ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে মিলে সরবরাহ করতে হবে। আখচাষীদের ময়লা, আবর্জনা, আগা-ডগা ও শিকড়মুক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আখ কেন্দ্রে সরবরাহ করতে হবে। মিল চালুর শুরুতে আগাম রোপণকৃত ও মুড়ি আখ সরবরাহ করতে হবে। সেই সঙ্গে মিলের পুরনো যন্ত্রপাতির পরিবর্তে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করতে হবে।
অবশেষে বলতে চাই, আখচাষীদেরকে সরকারি চিনিকলগুলোকে নিজেদের মিল মনে করে চিনিকলগুলোর প্রতি গভীর মমত্ববোধ সৃষ্টি করতে হবে। গুণগত মানের আখ মিলে সররাহ করতে হবে। সময়মতো পোকা-মাকড় ও রোগবালাই দমন করতে হবে। উঁচু জমিতেও উচ্চফলনশীল অধিক চিনি আহরণয়ুক্ত আখের জাতের চাষ করতে হবে। একবার নতুন আখের চাষ করে কমপক্ষে দুবার মুড়ি আখের চাষ করতে হবে।
এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দেশে আখ, চিনি ও গুড়ের উৎপাদন বাড়বে এবং মূল্যও ভোক্তাদের সাধ্যের মধ্যে থাকবে। চিনির দামের ওপর পরিশোধন কারখানাগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য হ্রাস পাবে। প্রয়োজনে কয়েকটি চিনিকলে বিদেশ থেকে র সুগার আমদানি করে রিফাইন সুগার তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ চিনির মতো একটি অত্যাবশ্যক পণ্যের বাজার কতিপয় পরিশোধন কারখানা মালিকের মর্জির ওপর ছেড়ে দেয়া কোনো অবস্থাতেই উচিত হবে না বলে আমরা মনে করি।
নিতাই চন্দ্র রায়: সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি)
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন