পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে গত সাড়ে ১৫ বছরে অনিয়ম-দুর্নীতি করে ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কৃপায় ভারতে আশ্রয় পেয়েছিলেন। ওই সময় তাদের দিল্লিতে অত্যন্ত সাধারণ মানের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হতে হয়েছিল। শেখ রেহানা বিয়ের পর বিলেতে চলে গেলেও ওখানে অত্যন্ত টানাপড়েনের মধ্যেই তার পরিবারকে জীবনযাপন করতে হয়েছিল।
১৯৮১ সালের এপ্রিলে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসেন এবং ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে অনিয়ম-দুর্নীতির তেমন সুযোগ পাননি তিনি। যদিও আশির দশকে তার বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী এরশাদের কাছ থেকে কয়েকবার আর্থিক উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয়ের জন্য দুর্নীতিকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিশেষত ওই নির্বাচনের আগের কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুর্নীতিকে হাইলাইট করে প্রচারিত ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের বিপর্যয়কর পরাজয়ের পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রেখেছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু ২০০১-০৬ মেয়াদে ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের কর্তাব্যক্তিদের বেলাগাম দুর্নীতি, বিএনপির যুবরাজ তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের লুটপাট ও প্যারালাল সরকার পরিচালনা, জামায়াতের জঙ্গি লালন, বাংলাভাইয়ের তাণ্ডব, জেএমবির সন্ত্রাস ও বোমাবাজি, ২০০৪ সালের দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার এবং সর্বোপরি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জন নেতাকর্মী হত্যা ও ২০০৫ সালের আগস্টে ৬৩ জেলায় বোমাবাজি ২০০৬ সালের শেষে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের পরাজয়কে অবধারিত করে তুলেছিল। এরপর ২০০৬-০৭ সালের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অপশাসন ও নির্লজ্জ বিএনপি তোষণ এবং সর্বশেষ ২০০৭ সালের ১/১১-এর সামরিক অভ্যুত্থান-পরবর্তী ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ রাজনীতির পটপরিবর্তনের প্রধান অনুঘটক হয়ে ওঠে।
এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ভূমিধস বিজয় অর্জন করতে সমর্থ হয়। ওই ভূমিধস বিজয়ই শেখ হাসিনাকে হয়তো আজীবন প্রধানমন্ত্রীর মসনদ দখল করে রাখার সর্বনাশা খায়েসে মত্ত হয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড থেকে কোনো শিক্ষা নেননি তিনি। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি একতরফা নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতার মসনদকে পাকাপোক্ত করার ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন তিনি। এ তিনটি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে তিনি নিজেই গণ-অভ্যুত্থানে সরকার উৎখাতকে ডেকে এনেছেন।
গত সাড়ে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করলেও তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি এবং উন্নয়নকে তার একনায়কত্ব গ্রহণযোগ্যতা দেয়নি। ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে লাখ লাখ মানুষ যেভাবে সবদিক থেকে গণভবনের দিকে মিছিল নিয়ে ছুটে গিয়েছিল তা দমানোর শক্তি সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ বাহিনীর থাকার প্রশ্নই আসে না। ওইদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অবস্থানে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সেনাপ্রধান বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে তার আদেশ মানেননি। হাজার হাজার জনতাকে হত্যা করলেও সেনাবাহিনী ওই গণ-অভ্যুত্থানে বিধ্বস্ত হয়ে যেত। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সশরীরে পালিয়ে যেতে পারলেও সর্বশেষ হিসাব মোতাবেক জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞে সহস্রাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। শেখ হাসিনা কোনোমতেই এসব প্রাণহানির দায় এড়াতে পারবেন না।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তিনি দেশকে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করার মিশনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এর সঙ্গে ছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়-স্বজন এবং তার পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী-ধনকুবেররা। প্রধানত তিনি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পুঁজি লুণ্ঠনকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি তার স্বৈরাচারী শাসনামলে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের’ মাধ্যমে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, দলীয় নেতাকর্মী, কতিপয় অলিগার্ক ব্যবসায়ী এবং পুঁজি লুটেরাদের সঙ্গে নিয়ে সরকারি খাতের প্রকল্প থেকে যে লাখ লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তার ভয়াবহ কাহিনী তার পতনের পর উদ্ঘাটিত হতে শুরু করেছে। ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট দৈনিক বণিক বার্তার হেডলাইনের খবরে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের দাবি অনুযায়ী ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অথচ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার দিনে বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল মাত্র ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। এর অর্থ এ দুই ঋণের স্থিতির অংকের পার্থক্য দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। গত ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার আগে তিনি এ সুবিশাল ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণের সাগরে দেশের জনগণকে নিমজ্জিত করে প্রতি বছর মাথাপিছু জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে চলেছিলেন, যাকে এক কথায় বলা চলে ‘নিকৃষ্টতম শুভংকরের ফাঁকি’ ও জনগণের সঙ্গে ভয়ানক প্রতারণা। ফলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে জনপ্রতি বাংলাদেশীর মাথার ওপর ১ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিজেদের অজান্তেই চেপে বসে গেছে। তার শাসনামলে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার অজুহাতে একের পর এক মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি সারা দেশে বেলাগামভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে শত শত উন্নয়ন প্রকল্প। প্রতিটি মেগা প্রকল্পে প্রকৃত ব্যয়ের তিন-চার গুণ বেশি ব্যয় দেখানোর মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে লাখ লাখ কোটি টাকা, যেজন্য এসব প্রকল্পের ব্যয় ‘বিশ্বের সর্বোচ্চ’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দেশের এমন কোনো প্রকল্প নেই যে সেটির খরচ প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি ছাড়া কম।
তার সরকার বাংলাদেশে ২০০৯-২৪ সাল পর্যন্ত যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছে কিংবা করছে সেগুলো হলো পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা বন্দর, পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, বাঁশখালী বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা বিআরটি প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া উড়াল সড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক, মিরসরাই-ফেনীতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-পায়রা-যশোর রেলপথ, যমুনা রেলসেতু, পতেঙ্গা নিউমুরিং টার্মিনাল, আখাউড়া-লাকসাম ডবল লাইন রেলপথ এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। এগুলো ছাড়াও সারা দেশের গ্রাম ও শহরগুলোয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে গত সাড়ে ১৫ বছরে শত শত প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সত্ত্বেও তিনি জনগণের বিশাল বৃহদংশের মন জয় করতে পারেননি, তার সরকারকে উৎখাত করেছে গণ-অভ্যুত্থান। কারণ এ প্রকল্পগুলোকে জনগণ পুঁজি লুণ্ঠনের মেগা মওকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
আর এ পুঁজি লুণ্ঠনের কেন্দ্রে ছিল হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, রেহানা কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকী ও রেহানা পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল, তার ভাই শেখ জুয়েল ও তার পুত্র শেখ তন্ময়, সেরনিয়াবাত হাসনাত আবদুল্লাহ ও তার পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ, শেখ তাপস, শেখ পরশ, লিটন চৌধুরী ও নিক্সন চৌধুরী এবং হাসিনার অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের পুত্র সোহেল তাজ অভিযোগ করেছেন, ২০০৯ সালেই শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘বিএনপি অনেক টাকা কামিয়েছে। এখন আমাদের দুহাতে টাকা বানাতে হবে’। প্রতিমন্ত্রিত্ব গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রকৃতপক্ষে সরকারের সবকিছু পরিচালনা করছিল হাসিনার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা শুধুই শিখণ্ডী। চরমভাবে হতাশ হয়ে ২০০৯ সালের মে মাসেই সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
২০০৯-২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়িত এমন কোনো প্রকল্প নেই যেখান থেকে হাসিনার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কিংবা তার পৃষ্ঠপোষকতাধন্য অলিগার্ক ব্যবসায়ীরা মোটা দাগে অর্থ আত্মসাৎ করেননি। অতিসম্প্রতি হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান রিমান্ডে স্বীকার করেছেন, এস আলম বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি লুট করেছে তার অর্ধেকটাই দিতে হয়েছে জয় ও টিউলিপকে! সালমান নিজেও তার মালিকানাধীন বেক্সিমকোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩৬ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি। তিনি জনতা ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ২৩ হাজার কোটি টাকা, আর আইএফআইসি ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ১১ হাজার কোটি টাকা।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ তাপস মধুমতি ব্যাংকের লাইসেন্স পেয়েছেন, আরেক আত্মীয় আকরাম উদ্দিন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের লাইসেন্স বাগিয়েছেন। আরেক আত্মীয় তাকসিম এ খান ঢাকা ওয়াসাকে লুটেপুটে খেয়েছেন ১৫ বছর। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ার সুবাদে বেনজীর আহমদ পুলিশে রাজত্ব চালিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে যথাসময়ে বিদেশে ভেগে গেছেন। শেখ রেহানার দেবর তারিক আহমেদ সিদ্দিক সেনাবাহিনীতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম রেখেছিলেন হাসিনার পতনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, তিনি কয়েকশ কোটি টাকা লুট করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এ সাড়ে ১৫ বছরে দেশের পুলিশ বাহিনী ‘গোপালি অফিসারদের রাজত্ব’ থেকে একদিনও মুক্ত ছিল না। একই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর সব স্তরেই বেধড়ক দুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছিলেন হাসিনা। সেজন্যই হাসিনার নির্দেশে পুলিশের গুলিতে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এ গণ-অভ্যুত্থানে, কয়েক হাজার মানুষ অন্ধ ও পঙ্গু হয়ে গেছে। দুঃখজনক হলো, শেখ হাসিনার একজন আত্মীয়ও তাদের নিজ-গুণে সরকারের বড় কোনো পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেননি।
এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে হাসিনার পতনের পর গত দুই মাসে তার একজন আত্মীয়ও পুলিশের কাছে ধরা পড়েনি, সবাই যথাসময়ে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পেরেছেন। শেখ তাপস তো হাসিনার পতনের আভাস পেয়ে ৩ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান, রেহানা পুত্র ববিও পালিয়েছিলেন। পতনের আগে-পরে অন্যরাও গোপনে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের সবাই কোটিপতি হয়ে গেছেন, সবারই বিদেশে হয়তো বাড়িঘর রয়েছে কিংবা নাগরিকত্ব রয়েছে। এখন বোঝা যাচ্ছে, হাসিনার শাসনামলে সবাই প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার। এরই মধ্যে দেশের যেখানেই তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপাতি ছিল সব হয় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে নয়তো লুটতরাজ ও ভাংচুরের শিকার হয়েছে। এ সত্ত্বেও গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশ থেকে বিদেশে যে পরিমাণ অর্থ তারা পাচার করতে সক্ষম হয়েছে তা দিয়ে বাকি জীবনটা বিদেশে আরাম-আয়েসে কাটিয়ে দেবেন তারা। আফসোস হচ্ছে, তারা যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে পালিয়ে যেতে পেরেছেন সে অর্থ দেশের জনগণ কখনই ফেরত পাবে না।
ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়