অভিমত

বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলন: পর্যবেক্ষণ ও বক্তব্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) আবারো চলছে শিক্ষার্থী আন্দোলন। এবারের আন্দোলন ইতিহাস বিভাগের পূর্ণকালীন অনুমোদনের দাবিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের সময়ে ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন চেয়ে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে। কমিশন ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল এক চিঠির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানায় যে, ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন দেয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ততদিনে তত্কালীন উপাচার্য দুটি শিক্ষাবর্ষে তিনশরও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন ইতিহাস বিভাগে। পরবর্তীতে বিষয়টি কমিশনকে জানানো হলে সর্বশেষ ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয় যে, ইতিহাস বিভাগের পূর্ণকালীন অনুমোদন দেয়া হবে না। কিন্তু এরই মধ্যে সর্বশেষ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয় বিভাগটিতে। সব মিলিয়ে তিনটি বর্ষে ৪১৩ শিক্ষার্থী বর্তমানে ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়নরত। কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এটিও জানায়, এই ৪১৩ শিক্ষার্থীকে শর্তসাপেক্ষে তাদের অধ্যয়ন শেষ করার অনুমতি দেয়া হবে, তবে এরপর বিভাগ হিসেবে ইতিহাসের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) আবারো চলছে শিক্ষার্থী আন্দোলন। এবারের আন্দোলন ইতিহাস বিভাগের পূর্ণকালীন অনুমোদনের দাবিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের সময়ে ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন চেয়ে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে। কমিশন ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল এক চিঠির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানায় যে, ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন দেয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ততদিনে তত্কালীন উপাচার্য দুটি শিক্ষাবর্ষে তিনশরও বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন ইতিহাস বিভাগে। পরবর্তীতে বিষয়টি কমিশনকে জানানো হলে সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয় যে, ইতিহাস বিভাগের পূর্ণকালীন অনুমোদন দেয়া হবে না। কিন্তু এরই মধ্যে সর্বশেষ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয় বিভাগটিতে। সব মিলিয়ে তিনটি বর্ষে ৪১৩ শিক্ষার্থী বর্তমানে ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়নরত। কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এটিও জানায়, এই ৪১৩ শিক্ষার্থীকে শর্তসাপেক্ষে তাদের অধ্যয়ন শেষ করার অনুমতি দেয়া হবে, তবে এরপর বিভাগ হিসেবে ইতিহাসের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে।

কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, তত্কালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটি ভুল সিদ্ধান্তের ফলে আজ একটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের আত্মপরিচয়ের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে একই সঙ্গে এটিও বলা প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন যে কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের অনুমোদন দিতে রাজি হচ্ছে না, সেটি সম্পূর্ণ অমূলক এবং অযৌক্তিক। কমিশনের যুক্তি হচ্ছে, ‘বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক সমাজবিজ্ঞান অনুষদের কোনো বিভাগের প্রয়োজন নেই। অথচ বর্তমানে দুটি অনুষদের অধীনে সাতটি বিভাগে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। তাহলে ইতিহাস বিভাগের প্রয়োজন নেই ধরনের ভাবনা কমিশনে কর্মরত শিক্ষাবিদদের কীভাবে আসে, সেটি খুবই আশ্চর্যের বিষয় বৈকি! একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক অনুষদের কোনো বিভাগের প্রয়োজন নেই, একুশ শতকে এসে আমাদের উচ্চশিক্ষাবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কেউ রকম ভাবতে পারেন, তা আমাদের শিক্ষাবিষয়ক দর্শনের দারিদ্র্য বৈ আর কিছু নয়। কমিশনের যুক্তি অনুযায়ী যদি শুধুবিজ্ঞান প্রযুক্তিবিষয়ক বিভাগগুলোকে প্রাধান্য দেয়াই মুখ্য কারণ হয়ে থাকে দেশে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের, তাহলে দেশের সব বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্ভবত মানবিক সমাজবিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলো তুলে দেয়া উচিত! আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা খুব দ্রুতই তাদের এই অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে অবিচারের শিকার এই ৪১৩ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এবং একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানতাত্ত্বিক কাঠামোর কথা ভেবে ইতিহাস বিভাগের পূর্ণ অনুমোদন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অচলাবস্থা নিরসন করবেন।

অপ্রতুল ভৌত সম্পদ কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা নিয়ে বশেমুরবিপ্রবি তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ২০১১ সালে। অথচ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত না করেই কিছু মানুষের ব্যক্তিস্বার্থের কারণে সর্বশেষ কয়েক বছরে এখানে অতি দ্রুত একের পর এক বিভাগ খোলা হয়, এমনকি কোনো কোনো বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি অথচ কয়েকশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেএমন নজিরও আছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪টি বিভাগ আছে, প্রতিটি বিভাগেই শিক্ষার্থী সংখ্যার তুলনায় শিক্ষক সংখ্যা, শ্রেণীকক্ষ ল্যাবরেটরি কক্ষের তীব্র সংকটের কারণে নিজেদের মধ্যেই এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য হয়েছে! কোনো কোনো বিভাগের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী একটি ছোট কক্ষে চেয়ার-টেবিল ভাগাভাগি করে বসতে বাধ্য হচ্ছেন। মাত্রাতিরিক্ত আর্থিক লোভের কারণে এরই মধ্যে গত বছর শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যার দিক থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে পৌঁছে যায় মাত্র ৫৫ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বশেমুরবিপ্রবি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন অথচ আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন সর্বোচ্চ দুই হাজার শিক্ষার্থী।

এই যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণার যে কোনো স্বাভাবিক পরিবেশ নেই, তা বলা বাহুল্য। পাওয়া না-পাওয়ার বঞ্চনা থেকে কিছুদিন পর পরই এখানে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে নেমে পড়ছেন। তবে আন্দোলনগুলো হচ্ছে কখনোযৌক্তিককারণে আবার কখনোঅযৌক্তিককারণে! এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, বর্তমানে চলমান আন্দোলনটি যৌক্তিক কারণেই হচ্ছে। তবে এর পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষকদের কিছু মতভিন্নতা আছে। অন্যদিকেঅযৌক্তিকআন্দোলনগুলো কেন হয়, তার ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তত্কালীন উপাচার্যের দুর্নীতি স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে তিনি পদত্যাগ করলে শিক্ষার্থীদের মাঝে আন্দোলনের ব্যাপারে এক নতুন ধরনেরউৎসাহতৈরি হয়। বলা যায়, বশেমুরবিপ্রবি এখন পরিণত হয়েছে আন্দোলনের স্বর্গে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মাঝে রকম একটি ধারণা কাজ করছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান গ্রহণ করলেই বোধহয় যেকোনো আন্দোলন সফল হবে। এমনকি গত তিন মাসে নিয়ে চতুর্থবারের মতো তালা ঝোলানোর ঘটনা ঘটল। গত তিন মাসের আন্দোলনের মধ্যে কিছু আন্দোলনের কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেগুলো নিতান্তই কয়েকজন মানুষের ব্যক্তিস্বার্থের কারণে অন্যকে বিপদে ফেলা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এর মধ্যে কয়েকটি আবাসিক হল বিভাগে সংঘটিত আন্দোলনের দাবি প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেই বলা যায় সেগুলো সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থের কারণে সংঘটিত আন্দোলন এবং এইতালা ঝোলানোসংস্কৃতিকে ব্যবহার করে সেখানে শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে কার্যত জিম্মি করে আন্দোলনকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে আন্দোলনের প্রকৃতি ভাষা ব্যবহার নিয়ে এক ধরনেরঅপরিপক্বতাবিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। প্রথমেই শেষের বিষয়টি নিয়ে বলতে হয়। যেকোনো শিক্ষার্থী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করবেন, এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আন্দোলনের ভাষা যদি তার শিক্ষার স্তরের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়, তবে সেই আন্দোলন অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলনে যে ধরনের ভাষা শব্দ ব্যবহার করা হয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত মাত্রারঅশ্রাব্যরূপ ধারণ করে। বিশেষ করে বলতে হয়, সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ভাষা শব্দের ব্যবহার এতটাই নিম্নমানের ছিল যে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিয়ে লজ্জিত হয়েছেন। অথচ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে যৌক্তিক অবস্থান থেকে একমত পোষণ করলেও অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারের কারণে অনেকেই দূরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। এক্ষেত্রে আরেকটি প্রাসঙ্গিক কথা বলা প্রয়োজন, অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাকস্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হননি। বাকস্বাধীনতা যে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য অন্যের মতকে দমিয়ে রাখা নয় অথবা অন্যকে তার মতপ্রকাশের জন্য বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো নয়, সেই বোধটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুঃখজনকভাবে এখনো অনুপস্থিত।

আন্দোলনের প্রকৃতি নিয়েও কিছু কথা বলা জরুরি। একটি আন্দোলনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সামনে রেখে সেই আন্দোলনের রূপরেখা আঁকতে হয়। আন্দোলনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য রূপরেখা থাকাটি আবশ্যক। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বশেমুরবিপ্রবিতে যেকোনো আন্দোলনেই দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা একমাত্র যে পথটি অবলম্বন করেন, তা হলো বিভিন্ন ভবন দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া। যেন তালা ঝুলিয়ে দিলেই সব দাবিদাওয়া পূরণ হয়ে যাবে। এমনকি চলমান আন্দোলনের ক্ষেত্রেও দুঃখজনকভাবে চর্চাটি দেখা যাচ্ছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মনে করছেন একাডেমিক প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে সামনে বসে থাকলেই আন্দোলন সফল হবে। নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে এক ধরনের জনমত তৈরির প্রচেষ্টাও লক্ষ করা যায়। আন্দোলনের কারণে ভবনগুলোতে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্যও কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না। চাকরিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সনদপত্র বা প্রশংসাপত্র তুলতেও বাধা দেয়া হচ্ছে যুক্তিতে যে, চাকরি পরেও পাওয়া যাবে, কিন্তু আগে বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন। ভবনে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রতিদিন আর্থিক লগ্নি গুনতে হচ্ছে, কিন্তু তাদেরকেও প্রবেশের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আরো অনেক অন্যায়ের জন্ম দিয়ে শিক্ষার্থীরা আদৌ কি ইতিবাচক কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন?

চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের শিক্ষক উপস্থিত হয়ে সংহতি জানিয়ে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি পরবর্তী করণীয় নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করে তাদের আন্দোলনের প্রকৃতি পরিবর্তনের অনুরোধ জানানোর পরও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসছেন না। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চিন্তা করলেই বোঝা যায় ইতিহাস বিভাগের পূর্ণ অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার কর্মতত্পরতা চালাতে গেলেও প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করে কাজ করতে হবে। অথচ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে সব তথ্য-উপাত্ত এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতা উপস্থাপনের পরও তাদের মনে হচ্ছে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে! যখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সব শিক্ষক একটি দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন, তখন সেখানে অন্তত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে যে কোনো বিরোধ নেইএই সরল সত্যটুকু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যখন বুঝতে না পারেন, তখন বলতেই হয় একটি আন্দোলন সফল করার জন্য যে মানসিক পরিপক্বতা থাকা প্রয়োজন, সেটি দুঃখজনকভাবে অনেকের মাঝেই অনুপস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরই ক্ষতি হচ্ছে অথচ ইতিহাস বিভাগের অনুমোদনের কর্তৃত্ব রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের হাতে

সর্বশেষ বলতে হয়, দেশের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত নীতিনির্ধারক এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উভয়ের ক্ষেত্রেই শুভ চিন্তার উদয় হোক। ইতিহাস পাঠ যেমন একটি জাতির ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের পাতায় নিজেকে ইতিবাচকভাবে প্রতিষ্ঠিত করাও অতি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, আমরা শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অচলাবস্থার অবসান দেখতে পাব। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দ্রুতই ফিরে যাবেন তাদের নিয়মিত শিক্ষা-গবেষণার কাজে।

 

আরাফাত রহমান: শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও