বাঙালির
কাছে শেখ রাসেলও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা
মুজিব এবং তার পরিবারের মতোই অন্তহীন এক বেদনার মহাকাব্য, একটি ব্যথার নাম, চাপা কান্নার
নাম; চেতনার গভীরে চিরস্থায়ী এক তাজা ক্ষতের নাম, বুকভার হয়ে যাওয়া এক দীর্ঘশ্বাসের
নাম ; যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস থমকে দাঁড়িয়ে থাকে।
হেমন্তের
এক মায়াবি রাতে ২রা কার্তিক, ১৩৭১ বঙ্গাব্দ ও ১৮ অক্টোবর ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ঠিক রাত
দেড়টায় রোজ রবিবার বাংলার আকাশের আলোর পাখি ও অন্ধকারের প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে পৃথিবীতে
এসেছিলেন শেখ রাসেল।
শেখ
রাসেল এমন একটি সময়ে বাংলার মাটিতে এসেছিলেন যখন বাংলার আকাশ পরাধীনতার বিষবাষ্পে ঘনীভূত
ছিল। পরিস্থিতি ছিল থমথমে ও উত্তেজনাকর। তখন ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ঘটনাগুলো বেশ প্রভাব
ফেলছিল পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে। একদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোল আবার অন্যদিকে
প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও বিরোধী প্রার্থী ফাতেমা জিন্নাহ। কঠিন অনিশ্চয়তা আর অন্ধকারের
মাঝেও এ অঞ্চলের মানুষ যখন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছে, ঠিক তখনই জন্ম নিয়েছিল রাসেল।
রাসেলের যেদিন জন্ম হয় বঙ্গবন্ধু সেদিন ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণের
জন্য চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন।
ষাটের দশকে বিশ্বমানবতার প্রতীক হয়ে আবির্ভূত হওয়া জগদ্বিখ্যাত নোবেল জয়ী দার্শনিক ও বিজ্ঞানী বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে বঙ্গবন্ধু তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের নাম রাখেন শেখ রাসেল।
এগিয়ে যেতে থাকে সময়। বেড়ে উঠতে থাকেন শিশু রাসেল ; সবকিছু বুঝতে থাকেন। শিশু রাসেলের এ বোঝাপড়াটা অন্য আর সব শিশুর থেকে অনেক ভিন্নতর ছিল। আমাদের এই শিশুটি জন্মেই জেনেছিলেন তার জন্মদাতা পিতার অপরিমেয় সংগ্রাম ও ত্যাগী জীবনের কথা; যে জীবনটার বেশীরভাগ সময় কেটে যায় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে। এটি ছিল একটি শিশুর উত্তরাধিকার সূত্রের রাজনৈতিক পরিবেশ যেখানে বেড়ে ওঠার প্রথম পর্ব ছিল রাজনৈতিক সংকটের কাল প্রত্যক্ষণ ; একই সাথে জীবন জুড়ে ছিল জন্মদাতা পিতার তীব্র অনুপস্থিতি। ভুমিষ্ঠ হবার পর একটি সাধারণ শিশু যে আবেগ নিয়ে বেড়ে ওঠে এটা তেমনটি থেকে ভিন্নতর ছিল। তার এই বোঝপড়ার জায়গাগুলো ও জীবনবোধের যে ব্যাপ্তি সেটাও ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় তৈরি করেছিল।
রাসেলকে
নিয়ে ‘কারাগারের রোজনামচা’র ২৭ শে মে এবং ২৮ শে মে ১৯৬৭ সালের
স্মৃতিচারণায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘রাসেল আমাকে পড়ে শোনাল, আড়াই বত্সরের
ছেলে আমাকে বলছে ৬ দফা মানতে হবে----সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে চলবে----’ ভাঙা
ভাঙা করে বলে কি মিষ্টি শোনায়! জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ও শিখল কোথা থেকে। রেণু বলল, বাসায়
সভা হয়, কর্মীরা বলে, তাই শিখেছে’।
আবার
ভিন্ন চিত্রও স্পষ্ট। যেখানে পিতার প্রতি কাতরতা ও সান্নিধ্য প্রত্যাশী এক ব্যাকুল
শিশুর তীব্র আবেগ ঝলসে দেয় সকল বোধের জায়গা; ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’
বইয়ের একুশ পৃষ্ঠায় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা
শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে
নিয়ে গেলে ও আর আসতে চাইত না। খুবই কান্নাকাটি করত। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে, আব্বার বাসা
জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা বাসায় ফেরত যাব। বেশ কষ্ট করেই ওকে
বাসায় ফিরিয়ে আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা কী হতো, তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায়
আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতেন এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই
আব্বা বলে ডাকত।’
অন্যদিকে
‘কারাগারের রোজনামচা’য় শেখ রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন,
‘৮ ফেব্রুয়ারি ২ বছরের ছেলেটা এসে
বলে, আব্বা বাড়ি চলো।’ কী উত্তর ওকে আমি দেব। ওকে ভোলাতে
চেষ্টা করলাম ও তো বোঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম, ‘তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার
আমাকে দেখতে এসো।’ ও কী বুঝতে চায়! কী করে নিয়ে যাবে
এই ছোট্ট ছেলেটা, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে! দুঃখ আমার লেগেছে।
শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলে-মেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল
এখনও বুঝতে শিখেনি। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে।’
এভাবে
আমরা দেখতে পাই নিজের জীবনের সাথে বোঝাপড়া এবং পিতার কারাগার জীবন সবই একাকার হয়ে উঠেছিল
শিশু রাসেলের জীবনে। এখানে আরেকটি চরম সত্য উদ্ভাসিত সেটি হলো পিতা শেখ মুজিবের প্রতি
রাসেলের যে প্রগাঢ় টান। যদিও সব সন্তানেরই এটা চিরন্তন বৈশিষ্ট এখানে একজন রাজনৈতিক
টানাপোড়েনে সর্বদা বিদ্ধ একজন পিতার প্রতি তার এক সন্তানের দূর্ণিবার টানটি ছিল অনন্য।
জন্মেই পিতার মুক্তি মন্ত্রণা তাঁর রক্ত মাংস শিরা উপশিরায় অপ্রতিরোধ্যভাবে মিশে গিয়েছিল।
তাই তার বেঁচে থাকা এই ক্ষুদ্র শৈশব জীবনটা অসীম হয়ে ওঠে, যখন দেখি তার ছেলেবেলা শুধুমাত্র
শিশুদের জীবন না হয়ে প্রতিটি কাজে বারবার উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মহীরুহ পিতার আদর্শ, দেশপ্রেম,
মানবিকতা, দায়িত্বশীলতাসহ বিচিত্র গুণাবলীর প্রকাশ। এখানেই রাসেল আর শিশু থাকে না,
হয়ে ওঠে পরিণত মানুষের সম্ভাব্য রূপ। পিতার অঙ্কুরিত বীজকণা।
শেখ হাসিনা,আমাদের ছোট রাসেল সোনা, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ১৭ মার্চ ২০১৮; পৃ.১৭’তে লিখছেন ওর সব কিছুই যেন ছিল ব্যতিক্রম। অত্যন্ত মেধাবী তার প্রমাণ অনেকবার পেয়েছি। চলাফেরায় বেশ সাবধানী কিন্তু সাহসী ছিল। সহসা কোনো কিছুতেই ভয় পেত না।
ইতিহাস বলছে বাবার সবকিছুই তার পছন্দের ছিল। পোশাক-আশাক, কথা বলা, বসার ধরন, হাঁটাচলা - সব। আসলে গোটা বাবাটাই তার সব চেয়ে প্রিয় ছিল। তাই তো পিতা মুজিবের ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকতে চাইতেন। মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে ফিরে আসার পর পিতার সান্নিধ্য লাভে সবসময়ই উন্মুখ হয়ে থাকতেন শিশু রাসেল। স্বাধীনতা পূর্ব ও পরে বঙ্গবন্ধু যতক্ষন জেলের বাইরে ছিলেন, তার পুরো সময়টাই রাসেলের সঙ্গে নিবিড় মমতায় জড়িয়েছিলেন। এমনকি স্বাধীনতার পর জাপান সফরে তিনি এই ছোট পুত্রকে সঙ্গী করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাসেলই ছিলেন তার আনন্দের সঙ্গী। তারপরও ইতিহাস বলছে সেই মহান পিতাকে দেখার সুযোগও রাসেলের জীবনে কম হয়েছিল।
আনন্দময় শৈশবে রাসেলের দুরন্তপনার মাঝেও মায়ের শিক্ষায় তার মানবীয় গুণাবলির দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে। সেই অল্প বয়সেই রাসেল মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে শেখেন। বাড়ির কাজের ছেলে আব্দুল মিয়াকে ‘ভাই’ বলে ডাকতেন শিশু রাসেল। তার কাছ থেকে কচিকাঁচাদের কল্পকাহিনির কিসসা শুনে হেসে কুটিকুটি হতেন ছোট্ট রাসেল। তাদের সঙ্গে খুব মজা করে সময় কাটাতেন তিনি। বাসায় আম্বিয়ার মা নামে একজন কাজের বুয়া ছিলেন। তিনি রাসেলকে খুব আদর করতেন। ছোটবেলায় তাকে কোলে নিয়ে ঘুরে ঘুরে খাবার খাওয়াতেন। রাসেল যখন একটু বড় হলেন, তখন রান্নাঘরে লাল ফুল আঁকা থালায় করে পিঁড়ি পেতে বসে এই কাজের লোকদের সঙ্গে ভাত খেতে খুব পছন্দ করতেন। বাংলার মা মাটির সাথে মিশে যাওয়া ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আপন করে নেওয়া যেন তাঁর রক্তের শিরায় শিরায় প্রথিত ছিল। আর হবে নাই বা কেন তিনি যে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরী।
বড়
হয়ে আর্মি অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন শেখ রাসেল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাসেলের এই ইচ্ছা
মনের কোণে দানা বাঁধতে শুরু করে। এ থেকেই বড় দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর
তাঁদের কাছ থেকে খুব আগ্রহ নিয়ে যুদ্ধের গল্প শুনত রাসেল। এসব থেকেই যে তাঁর ভিতরে
নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত হচ্ছিল তার হদিস মেলে আরেকটি ঘটনা থেকে, টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর
গ্রামের বাসায় ঘুরতে গিয়ে সেখানকার খেলার সাথীদের নিয়ে নিজ বাহিনী তৈরি করেছিলেন শেখ
রাসেল এবং তিনি নিজেই ছিলেন সেই বাহিনীর প্রধান। ছিলেন জেনারেল রাসেল।
আগস্টের
আগে তাঁর প্রিয় হাসু আপার সাথে জার্মানি যাবার কথা ছিল শিশু রাসেলের। কিন্তু জন্ডিসে
আক্রান্ত হবার কারণে তিনি যেতে পারেননি। সেদিন যদি তিনি জার্মানি যেতে পারতেন তাহলে
হয়তো বাংলার অদম্য এ আলোর পাখিকে ঘাতকের বুলেট ছুঁতে করতে পারতো না।
শেখ
রাসেল সম্পর্কে ইতিহাস থেকে তথ্য নিয়ে বলবার জায়গাটি কম। তবে ১১ বছরের জীবদ্দশায় রাসেলকে
ঘিরে ইতিহাসের ছিটেফোটা তথ্য আমাদের অনেক কিছুই জানিযে যায়। রাসেলের প্রিয় হাসু আপা
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতিচারণে অনেক ক্ষুদ্র-বৃহত্-মহত্
তাত্পর্যপূর্ণ চিহ্ন দৃষ্টিগোচর হয়। এই চিহ্নগুলো অনন্ত প্রত্যাশার দিকেই বারবার তর্জনী
দেখায়। যাকে বাংলার মাটি ও মানুষ চিরজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলেছে কিন্তু তার স্বল্প সময়ের
জীবনের উজ্জ্বল প্রতিভার অমূল্য ইতিহাস খন্ড একটি চিরঞ্জীব নক্ষত্রের মতো প্রজন্ম পরম্পরা
আলোর পথ দেখাতে সক্ষম।
শেখ
রাসেল বেঁচে থাকলে নিশ্চয় ইতিহাস অন্যভাবে সাজতো ; যেমন শেখ মুজিবের জন্ম একটি স্বাধীন
জাতিকে জন্ম দিয়েছে ; তারই উত্তরসূরী শেখ রাসেল নিশ্চয় জাতি গঠনে, জাতির উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর
স্বাধীন দেশকে এগিয়ে নিতে অনেক বড় ভুমিকা পালন করতেন। বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হতো
৫৯ বছর। পুরোদস্তর মধ্য বয়সী এক পুরুষের দীপ্তিতে উদ্ভাসিত হতেন। তিনিও সামিল হতেন
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণে। ভিশন ২০২১, ২০৩০, ২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান,
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ
জয় এখন যেমন দেশের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন, তিনি বেঁচে থাকলে নিঃসন্দেহে নিজেকে দেশের
জন্য নিয়োজিত রাখতেন। তিনি হয়তো বিজ্ঞানী অথবা শিক্ষক অথবা জাতির পিতার মতো বিশ্ব শান্তি
প্রতিষ্ঠার কান্ডারি হতেন। কিংবা হতে পারতেন বার্ট্রান্ড রাসেলের মতোই স্বমহিমায় উজ্জ্বল
বিশ্বমানবতার প্রতীক। হ্যাঁ তিনিই ছিলেন অপ্রতিরোধ্য বাংলার অমৃত সূর্যোদয়ের প্রবল
সম্ভাবনার প্রতীক। কিন্তু দেশের তরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা থেকে নিজেকে প্রস্তুত
করতে থাকা বাংলার অমৃত সূর্যোদয়ের এই প্রবল সম্ভাবনার যবনিকাপাত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট
মানব রূপী কিছু দানবের হাতে।
স্বামী
বিবেকানন্দ একটা কথা বলেছেন, ‘জন্মেছিস যখন দাগ রেখে যা’। হিসেব করে দেখুন রাসেলের
১০/১১ বছর নামক সময়ের সীমানায় আবদ্ধ জীবন এগিয়ে যেতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু জীবিত রাসেলের
চেয়ে মৃত রাসেল অনেক শক্তি নিয়ে আর্বিভূত হয়েছিল সময়ের এক অমোঘ গতিতে এবং এখনও সমান
শক্তি নিয়ে বিদ্যমান। লক্ষ্য করে দেখুন ৭৫’র বিচারহীন নির্মমতার বিপরীতে আজ পর্যন্ত
সেই নির্মম-নিষ্ঠুর খুনীদের বিচারের প্রতিটি আন্দোলনে এমনকি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ
শক্তির প্রতিটি সংগ্রামে শেখ রাসেল নামটি বারবার বাঙালীর রক্তকে টগবগ করে জ্বালিয়ে
দিয়েছে। রাসেলের রক্তধারা একটি জাতির আবেগকে নির্মাণ করেছে ; প্রবাহিত করেছে ও চালিত
করেছে। শুধু তাই নয় শিশু রাসেলের উপর সংঘটিত অমানবিক নিষ্ঠুরতা, এ ধরনের মার্সি কিলিং
(Mercy Killing) ভূ-খন্ড ছাড়িয়ে বিশ্ব মানবতাকে ছুঁয়ে দিয়েছে; বারবার সচকিত করেছে;
খুনীদের বিরুদ্ধে নিয়ে গেছে। তাই শিশু রাসেলের সেদিনের সেই নিস্পাপ রক্তধারা আজ বিশ্বজুড়ে
মানবতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। বেদনা বিধুর হলেও এই শিশুটিই নক্ষত্রের তীব্র বিচ্ছুরণ হয়ে
আলো করে রেখেছে বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসের একটি বড় অংশকে।
আজ
বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অঙ্গনে তরুণ প্রজন্মের গুণাবলী সমৃদ্ধ নেতৃত্বের
বড্ড অভাব। আমরা এই প্রজন্মকে আহ্বান করবো শেখ রাসেলের নির্মল জীবন থেকে পাঠ নিয়ে এই
অভাব পূরণে এগিয়ে আসার। এ জন্মদিনের স্মরণ-উত্সব অসহনীয় বেদনার কিন্তু আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করতে চাই। শেখ
রাসেলের মতো ‘দুরন্ত প্রাণবন্ত নির্ভীক’ সুন্দর প্রতীতির উল্লাস খুঁজে নিই।
আসুন
বিশ্বজুড়ে এই ক্রান্তিকালে আমরা সবাই বিশ্বাস জমিয়ে জমিয়ে আত্মবিশ্বাসের শক্ত ভিত নির্মাণ
করি ; এই প্রজন্মের প্রতিটি শিশুকে শেখ রাসেলের মতো নির্মলতার প্রতীক করে গড়ে
তুলি। প্রতিটি শিশুর মৌলিক চাহিদা থেকে শুরু করে সুস্থ মানুষ হিসেবে মানবিক
গুণাবলি বিকশিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু নিশ্চিত করি। শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য
ভালোবাসাপূর্ণ মানবিক পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমেই শিশু শেখ রাসেলের প্রতি সকলের
আবেগ ও ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে। অঙ্গীকার করি রাসেলের মতো প্রতিটি শিশুর কল্যাণের
জন্য। আর প্রতিজ্ঞবদ্ধ হই, বাংলাদেশ হোক সকল শিশুর জন্য নিরাপদ আবাসস্থল।
ড.
আমানুর আমান: পরিচালক (জনসংযোগ), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া