মোট দেশীয় উৎপাদনে (জিডিপি) সার্বিক কৃষি খাতের (শস্য উপখাত, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপখাত এবং বন উপখাত নিয়ে সার্বিক কৃষি খাত গঠিত) অবদান হ্রাস পেলেও এখনো ‘কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান কর্মকাণ্ড এবং জীবনীশক্তি। উৎপাদনশীলতা, আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’ (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৮)। কৃষি জাতীয় জীবনে কী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তা আমরা টের পেয়েছি করোনা মহামারীর সময়। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে যখন শিল্প খাতসহ অন্যান্য খাত বিপর্যস্ত, তখন কৃষি খাতই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। এই যখন কৃষি খাতের অবদান, তখন জাতীয় সংসদে সদ্য উপস্থাপিত এ-যাবৎকালে দেশের সর্ববৃহৎ বাজেটে হ্রাস পেল সার্বিক কৃষি খাতের বরাদ্দ। এটা কাম্য নয়। কৃষি খাতে কেন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার, তা আলোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এটি জাতীয় সংসদে তার প্রথম জাতীয় বাজেট উপস্থাপন। ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম জাতীয় বাজেটের (১৯৭২-৭৩) আকার ক্রমান্বয়ে বেড়ে ৫১ বছর পর ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াল। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে খাদ্যশস্য (চাল ও গম) উৎপাদনকারী অনেক দেশ যখন খাদ্যশস্য উৎপাদনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশী মুদ্রার মানে বড় ধরনের অবনমন ঘটায় যখন খাদ্যপণ্য আমদানি অত্যন্ত ব্যয়হুল হয়ে দাঁড়িয়েছে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে যখন দেশে খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীন বাড়ছে, দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে যখন খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানের সময় এসেছে, তখন চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বরাদ্দের তুলনায় আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সার্বিক কৃষি খাতে বরাদ্দ হ্রাসের প্রস্তাব অনেকটা বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার সারণি থেকে দেখা যায়, সার্বিক কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিনটি মন্ত্রণালয়-কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ যখন ৩৯ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা, তখন আগামী অর্থবছরের বাজেটে ওই তিনটি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে প্রস্তাবিত মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩৩ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এর অর্থ দাঁড়ায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সার্বিক কৃষি খাতে বরাদ্দের তুলনায় আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক কৃষি খাতে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হ্রাস পাচ্ছে। এটি ঘটতে যাচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সার্বিক কৃষি খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শস্য উপখাতে ৬ হাজার ৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ হ্রাসের কারণে।
এখন দেখা যাক, আগামী জাতীয় বাজেটে সার্বিক কৃষি খাতে বরাদ্দ হ্রাস না করে তা কেন বৃদ্ধি করা দরকার। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর শীর্ষে অবস্থান খাদ্যের। খাদ্যের একাধিক উপাদান থাকলেও আমাদের দেশে খাদ্য বলতে মূলত চাল থেকে তৈরি ভাতকে বোঝায়। ক্যালরির অন্যতম উৎস ভাত। আমাদের জাতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার এখন নেমে এসেছে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের নিচে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস’ ২০২৩-এর তথ্যের বরাত দিয়ে ২৫ মে বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে দেশে বার্ষিক জনসংখ্যা স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার (আরএনআই) ছিল ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা আগের বছরে ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, গত তিন অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হার ছিল ১ শতাংশের নিচে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একদিকে যেমন প্রয়োজন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস, তেমনি অন্যদিকে দরকার চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তুলনায় চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হার কম হওয়ার মূল কারণ দেড় দশক ধরে কৃষি খাতের নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি হার। সরকারি তথ্য মোতাবেক ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপর প্রবৃদ্ধি হার কমে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশে দাঁড়ায় (বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ-২০০৫)।
এরপর প্রবৃদ্ধি হার একটু একটু করে বেড়ে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশে পৌঁছে। এরপর প্রবৃদ্ধি হারে আবার নিম্নমুখিতা দেখা দেয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরের ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার হ্রাস পেয়ে পরবর্তী এক দশকে গড়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়ায় (অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ২০১৯-২০)। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩-এ বলা হয়েছে, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ২ দশমিক ৬১ শতাংশে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হারে নিম্নমুখিতার কারণগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো—
১. জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব: জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন, বিশেষ করে শস্য উপখাতে উৎপাদন বৃদ্ধিতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ গঠিত জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে ঘোষণা করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা বাড়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সাইক্লোন-ঝড়ের পৌনঃপুনিকতা বৃদ্ধি অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মতো বাংলাদেশের কৃষি খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। হ্রাস পাচ্ছে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হার।
২. আবাদি জমি হ্রাস: ‘কৃষি জমি রক্ষা কেন জরুরি’ শিরোনামে ১০ মে একটি দৈনিকের (যুগান্তর) সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের আবাদি জমি, বনভূমি, নদী, লেক ও বনাঞ্চল সব মিলিয়ে মোট জমির পরিমাণ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে দেশের কৃষিজমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ২০ হাজার হেক্টর। উল্লেখ্য, ইকুইটি বিডির এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও নদীভাঙনের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮৯ হাজার হেক্টর অ-কৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের মোট জমির ৫০ শতাংশই চলে যাবে শুধু বসতি স্থাপনে। কৃষিজমি অ-কৃষি খাতে চলে যাওয়ায় অর্থাৎ আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় কৃষি খাতে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।
৩. জাতীয় বাজেট বাড়ার তুলনায় কৃষি খাতের বাজেট বৃদ্ধি না পাওয়া: এক যুগ ধরে জাতীয় বাজেটের আকার দ্রুত বাড়ছে। সে তুলনায় কৃষি বাজেট বাড়ছে না। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ‘২০১১-১২ অর্থবছরের মোট বাজেটে কৃষি বাজেটের হিস্যা ছিল ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশে। একইভাবে কৃষি ভর্তুকির হিস্যা নেমে এসেছে ৬ দশমিক ৪ থেকে ২ দশমিক ৩ শতাংশে। গত বাজেটে কৃষি ভর্তুকির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। বাস্তবে খরচ হয়েছে আরো প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। আগামী অর্থবছরে কৃষি ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা উচিত’ (জাহাঙ্গীর আলম: ৩১ মে, যুগান্তর)। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, সার্বিক কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ ৩৯ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে আশা করা হয়েছিল যে সার্বিক কৃষি খাতে মোট বরাদ্দ বেড়ে যাবে। কিন্তু তা না হয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সার্বিক কৃষি খাতে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হ্রাস পেতে পাচ্ছে।
কৃষি খাতের নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি হারের বিরূপ প্রভাব পড়েছে শস্য উপখাতের ওপর। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, শস্য উপখাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হার হ্রাস পেয়ে গত তিন বছরে গড়ে ১ শতাংশের নিচে নেমে আসে (বণিক বার্তা, ২৫ মে)। অন্য এক তথ্য মোতাবেক গত তিন বছরের গড় প্রবৃদ্ধি হার হলো দশমিক ৫২ শতাংশ, যখন একই সময়ে জনসংখ্যার গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আমাদের দ্বিতীয় খাদ্যশস্য গমের উৎপাদন ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরের ১৯ লাখ টনের তুলনায় সাম্প্রতিক কালে ১১ লাখ থেকে ১২ লাখ টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে গমের চাহিদার (কম-বেশি ৭০ লাখ টন) প্রায় ৮৫ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে মেটাতে হচ্ছে। গত কয়েক বছর গম আমদানির সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে গম আমদানিতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ১৪৩৭, ১৬৫১, ১৮৩০ ও ২১৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে দেশে চাল আমদানিতে ব্যয় দাঁড়ায় যথাক্রমে ১১৫, ২২, ৮৫১, ৪২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০২৩)।
শুধু খাদ্যশস্য নয়, অন্যান্য খাদ্যপণ্য যথা—ডাল, ভোজ্যতেল, ডিম, দুধ, চিনি, ফল, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, আদাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার উৎপাদন দেশের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এসব খাদ্যপণ্য আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০২৩-এর হিসাবে ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ অর্থবছরে কেবল ভোজ্যতেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৬১৭, ১ হাজার ৯২৬, ২ হাজার ৮৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। জনসংখ্যার তুলনায় আবাদি জমির পরিমাণ খুব কম হওয়ায় দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করতে হলে খাদ্যশস্য চাল, গমসহ অন্য খাদ্যপণ্যের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। চালসহ অনেক কৃষিপণ্যে হেক্টরপ্রতি উৎপাদনশীলতায় চীন ও ভারত আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। খাদ্যশস্যের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে অবকাঠামো সুবিধার আরো সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। অধিক পরিমাণে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে কৃষককে উৎসাহিত করতে তাদের অতিস্বল্প দামে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় কৃষিতে চলমান ভর্তুকি অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিলেও তা বাড়ানোর কোনো ইঙ্গিত দেননি। বাড়াতে হবে ভর্তুকির পরিমাণ। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। টেকসই কৃষি উন্নয়নে যান্ত্রিকীকরণের গতি বাড়াতে হবে। আরো জোর দিতে হবে গবেষণায়। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ডিম ও দুধের উৎপাদন বাড়াতে ব্যবস্থা নিতে হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শস্য উপখাত ও প্রাণিসম্পদ উপখাতের চ্যালেঞ্জগুলোর বর্ণনা রয়েছে। শস্য উপখাতের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো—নিম্ন উৎপাদনশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের ভিত্তির অবনমন ও ভূগর্ভস্থ পানিস্তর হ্রাস, কৃষিজমির প্রাপ্যতা হ্রাস ও ঋণপ্রাপ্তির সমস্যা। প্রাণিসম্পদ উপখাতের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে কম উৎপাদনশীলতা, মানসম্মত ফিড ও তৃণজাতীয় খাদ্যের অপর্যাপ্ততা, নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব ও পুরনো রোগের পুনঃসংক্রমণ, অপর্যাপ্ত ভেটেরিনারি সেবা ও প্রাণিস্বাস্থ্য, সীমিত ঋণ সুবিধা। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদের শেষ অর্থবছরের বাজেটে অর্থাৎ আগামী বাজেটে সার্বিক কৃষি খাতে বরাদ্দ হ্রাস উপর্যুক্ত সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা এবং উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাই আগামী অর্থবছরে সার্বিক কৃষি খাতে প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়াতে হবে।
মো. আবদুল লতিফ মন্ডল: সাবেক খাদ্য সচিব