কয়েকজন
সহকর্মীর সঙ্গে
সমসাময়িক ঘটনা
নিয়ে আলোচনার
সময় দুটি
ধারণা জাগে।
উৎসাহী কোনো
রাজনৈতিক বা
প্রশাসনিক নেতৃত্ব
কিংবা শক্তিশালী
কোনো স্বার্থচক্র
নিজ স্বার্থে
নতুন কর্ম-উদ্যোগের
যৌক্তিকতা খুঁজে
পেতে পারে
এবং সেই
সঙ্গে সামাজিক
অগ্রগতিতে সহায়ক
ভূমিকা রাখতে
পারে, সেই
আশায় ধারণা
দুটি প্রকাশ
করছি।
ধারণা-১:
বৈদেশিক
মুদ্রার মজুদে
স্থিতিশীলতা আনতে
বৈদেশিক ঋণের
বিকল্প
প্রকাশিত সংখ্যা
ও বিবিধ
ঘোষিত নীতিমালা
স্পষ্টতই জানান
দেয়, বাংলাদেশ
ব্যাংকের বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভ
ক্রমেই কমছে
এবং লাগাম
না ধরলে
রিজার্ভের পরিমাণ
আগামীতে বিপজ্জনক
সীমায় নামতে
পারে। তাই
প্রলাপে লিপ্ত
না হয়ে
অথবা ব্যর্থতার
বিস্তারিত বিশ্লেষণে
না গিয়ে
উত্তম কর্মপন্থা
খুঁজে পাওয়া
(এবং বেছে
নেয়া) জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি
পরিকল্পনা জরুরি,
বিশেষত মেগা
প্রকল্প থেকে
বৈদেশিক মুদ্রা
অর্জন বা
সাশ্রয়ের সম্ভাবনা
যাচাই করে।
তবে সে
আলোচনায় না
গিয়ে অনুমান
করছি যে
নিকটভবিষ্যৎ (আগামী
দু-তিন
বছর) সামাল
দিতে হবে।
রিজার্ভে স্থিতিশীলতা
এনে দেশের
অর্থনীতির ওপর
আস্থা নিশ্চিত
করতে কয়েকটি
সম্ভাব্য কর্মপন্থা
আলোচনায় উঠেছে।
বিস্তারিত বিশ্লেষণে
না গিয়ে
এটা অনুমেয়,
আন্তর্জাতিক মুদ্রা
তহবিলের (আইএমএফ)
থেকে ঋণ
নেয়া বর্তমান
রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের
জন্য অগ্রাধিকারের
বিচারে সর্বনিম্নে।
শর্তের বেড়াজাল
বিস্তৃত হয়ে
এ-জাতীয়
ঋণ অনেক
সময় ‘অস্থিশীলতা’
সৃষ্টির হাতিয়ার
হতে পারে
বিধায় অদৃশ্য
ঝুঁকির মাত্রা
অধিক এবং
৫০ বছর
পূর্তিতে এ
পর্যায়ে নামা
সম্মানজনক নয়।
দ্বিতীয় একটি সম্ভাব্য সাশ্রয়ের পন্থা হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি আপাতত অপরিশোধিত রাখার কথা উঠেছে। বিলম্বে দায় মেটানোর ব্যবস্থা অতীতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে ঘটেছে। এমনকি বর্তমানেও কিছু ঋণগ্রস্ত দেশ সে ধরনের পন্থা অবলম্বন করছে। অদূরভবিষ্যতে যেহেতু এ ঘাটতি থেকেই যাবে, ভারতীয় রুপিতে ঋণ পরিশোধের গুঞ্জরণটি অবান্তর। তাছাড়া বর্তমানের রিজার্ভ সামলাতে গিয়ে ভবিষ্যতের আমদানি কোনো নির্দিষ্ট উৎসের সঙ্গে বাঁধা কাম্য নয়, যদি না সে দেশে রফতানি বাজার একই চুক্তিবলে নিশ্চিত করা যায়। নিঃসন্দেহে ট্রানজিট সেবা বিক্রি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন সম্ভব। তবে তার দাম নির্ধারণে অস্পষ্টতা থাকার কারণে, ভিন্ন কোনো ঋণ চুক্তি, সেই দাম নির্ধারণে বাংলাদেশের অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
উপরোক্ত দুটি
সম্ভাব্য পথের
খুঁটিনাটি আলোচনা
থেকে আমি
বিরত থাকছি
বরং তৃতীয়
একটি পন্থার
প্রতি দৃষ্টি
আকর্ষণ করাই
আমার মুখ্য
উদ্দেশ্য।
বৈশ্বিক গবেষণা
প্রতিষ্ঠান এবং
জাতীয় সংবাদমাধ্যমের
তথ্যে প্রায়
উঠে আসে,
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত
অনেক প্রবাসী
নাগরিক এবং
সম্ভবত বাংলাদেশী
নাগরিকত্ব থাকা
অনেক ব্যক্তির
বিদেশের ব্যাংক
ও আর্থিক
প্রতিষ্ঠানে বিপুল
আমানত সঞ্চিত
আছে। ইউক্রেন-রাশিয়া
যুদ্ধের কারণে
তাদের অনেকেই
বিদেশে নিজেদের
আমানত রাখতে
কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ
মনে করতে
পারে এবং
একটা অংশ
দেশে ফিরিয়ে
আনতে আগ্রহী
হতে পারে।
বললে অতিরঞ্জন
হবে না,
রাষ্ট্রের সমর্থনেই
অনেক ক্ষেত্রে
এ ধরনের
সম্পদ সঞ্চয়ন
সম্ভব হয়েছে।
তাই রাষ্ট্রের
রক্ষক হিসেবে
ক্ষমতাসীন সরকারের
দায়িত্ব, সীমিত
সময়ের জন্য
হলেও বিদেশে
থাকা আমানতের
একটা অংশ
ফিরিয়ে আনা।
আমি অধিক
সুদের লোভ
দেখিয়ে তা
আনার কথা
বলছি না।
সরকার বিপদের
দিনে দেশের
নাগরিকদের যেমন
সাশ্রয়ী হতে
বলছে, করের
বোঝা বাড়িয়েছে
এবং লোডশেডিংকে
নিয়মিত চালু
করেছে, একইভাবে
ব্যক্তি ও
ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে
দায়বদ্ধতার আওতায়
আনা প্রয়োজন।
মনে আছে,
টি২০-এর
আসর সুষ্ঠুভাবে
সম্পাদনের উদ্দেশ্যে
স্থানীয় ব্যবসায়ী
ও ব্যাংক
থেকে চাঁদা
নামধারী (কথিত)
আগাম কর
সংগ্রহ করা
হয়েছিল। আজকের
প্রয়োজনে, সরকার
নৈতিক কারণে
বিদেশে রাখা
আমানতের একাংশ
ফেরত আনার
জন্য চাপ
দিতে পারে।
একজন সাধারণ
নাগরিক যেমন
কর রিটার্ন
জমা দেয়ার
প্রমাণ না
দেখালে বিভিন্ন
সুযোগ থেকে
বঞ্চিত হবে,
একইভাবে সহযোগিতার
হাত না
বাড়ালে দল-মত
নির্বিশেষে অসহযোগী
ব্যক্তি ও
প্রতিষ্ঠানকে একঘরে
করার নীতি
চালু করা
যেতে পারে।
সুনির্দিষ্ট কোনো
মুদ্রায় এ
অর্থ আনার
ব্যবস্থা করা
যায়, বিনে
সুদে আসবে।
তবে বাংলাদেশ
ব্যাংকের মাধ্যমে
রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি
দিয়ে সমপরিমাণ
অর্থ নির্দিষ্ট
সময়ে পরিশোধের
বিধান (প্রতিশ্রুতি)
নিশ্চিত করতে
হবে। সদিচ্ছা
নিয়ে যেকোনো
দেশ বিপদের
সময়ে তার
সব ধরনের
সম্পদ সংগ্রহে
নামতে পারে,
যে চর্চা
নিয়মিতভাবে আমাদের
স্থানীয়/গ্রামীণ
জনগোষ্ঠীর মাঝে
দেখা যায়।
ধারণা-২:
‘পদ্দা’
সেতুতে পরিবহনবহির্ভূত
জনচাহিদা মেটানোর
সম্ভাবনা
পদ্দা সেতু
চলাচলের জন্য
খুলে দেয়া-পরবর্তী
কিছু ঘটনা
দেখে মনে
হয়েছে, পণ্য
ও যাত্রী
পরিবহনের মাধ্যমে
সংযোগের বাইরে
সেতুতে হাঁটা
এবং দাঁড়িয়ে
নদীর সৌন্দর্য
উপভোগের একটা
বিপুল চাহিদা
মানুষের আছে।
এ চাওয়া
স্থানীয়দের মাঝে
যেমন আছে,
তেমনি দেশের
অন্যান্য অঞ্চল
ও বিদেশে
বসবাসরত অনেকের
মাঝেই রয়েছে।
নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল
জরিপ করে
চাহিদা নিরূপণের
চেয়ে সেতু
ব্যবহারে সীমিত
পরীক্ষার মাধ্যমে
তা করা
অধিক সহজ।
তাই চাহিদার
উপস্থিতি অনুমান
করে বাকি
আলোচনা করছি।
কারিগরি দৃষ্টিকোণ
থেকে বহুমুখিতা
(মাল্টিপারপাস) বলতে
সেবা জোগানের
বিভিন্ন মাধ্যমগুলোর
কথা ভাবা
হয়েছে যেমন—সড়ক,
রেল ও
নৌপথের সমন্বিত
প্রকল্প। এর
সঙ্গে হাঁটাপথ
যোগ হতে
দোষ নেই।
তবে প্রকল্প
প্রণয়নের সময়
তা (হয়তো
যথার্থ কারণে)
গুরুত্ব পায়নি।
অর্থনীতির পরিভাষায়
একই অবকাঠামো
ব্যবহার করে
ভিন্নধর্মী সেবার
চাহিদা মেটানোর
ভিত্তিতে বহুমুখিতার
সংজ্ঞা দেয়া
সম্ভব। সে
কারণে চলাচল
ও পণ্য
পরিবহনের চাহিদার
সঙ্গে বিনোদন
চাহিদা যোগ
হতে পারে।
তবে প্রশ্ন
রয়ে যায়,
রেল ও
সড়কপথের জন্য
তৈরি সেতু
থেকে কি
বিনোদন সেবা
পাওয়া সম্ভব?
কেউ অস্বীকার
করবেন না
দুই পাড়ের
সেতুসংলগ্ন এলাকায়,
উপযুক্ত উদ্যোগ
নিলে, বাণিজ্যিক
ভিত্তিতে বিনোদন
ব্যবস্থা নেয়া
সম্ভব। তবে
তা হবে
বাইরে থেকে
দেখা সেতু।
সেতুর ওপর
দাঁড়িয়ে পদ্দাকে
অবলোকন করার
(বা সেখানে
দাঁড়িয়ে সেলফি
তোলার) চাহিদা
অপূর্ণ রয়ে
যাবে। বাকি
অংশে সে
চাহিদা পূরণের
বাণিজ্যিকভাবে গ্রহণযোগ্য
একটি প্রস্তাব
রইল।
পদার্থবিজ্ঞানের ধ্যান-ধারণা
দ্বারা প্রভাবান্বিত
হয়ে অর্থনীতিতেও
দ্রব্য ও
সেবাকে স্থান
ও সময়ভিত্তিক
বিভাজন করার
চল আছে।
এ বিভাজনের
মাত্রা যত
বেশি করা
যায়, একই
অবকাঠামো দিয়ে
তত বেশি
ভিন্নধর্মী (বহুমাত্রিক)
চাহিদা মেটানো
সম্ভব। একই
প্রক্রিয়ায় একটি
অবকাঠামোর পূর্ণাঙ্গ
ব্যবহার (অধিক
ক্যাপাসিটি ইউটিলাইজেশন)
সম্ভব এবং
সেই সঙ্গে
অধিক অর্থ
উপার্জনও সম্ভব।
ধরা যাক,
সপ্তাহের যেকোনো
একদিনের সুনির্দিষ্ট
সময় (সর্বাধিক
৪ ঘণ্টা),
কর্তৃপক্ষ অর্থের
বিনিময়ে সেতুর
উভয় পাড়ের
নির্দিষ্ট দুটি
অংশে পথচারীদের
জন্য চলাফেরার
অনুমতি দিল।
সাধারণ জ্ঞানে
বলে, ছুটির
দিনে ভোর
বা পড়ন্ত
বিকালে এ
ধরনের বিনোদন
চাহিদা অধিক
থাকবে, যখন
নির্দিষ্ট সময়
আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা
করা হবে,
তখন এটা
অনুমেয়, বিধিনিষেধ
যথাযথ কার্যকর
হলে উভয়
প্রাতিষ্ঠানিক ও
ব্যক্তি তাদের
যানবাহন চলাচল
কর্মসূচির সমন্বয়
ঘটাবে।
এ ধরনের
উন্মুক্ততার তিনটি
সুফল রয়েছে।
প্রথমত, নির্দিষ্ট
কোনো সপ্তাহে
সেতুতে চলা
মোট যানবাহনের
ওপর নেতিবাচক
প্রভাব না
ফেলেই পদব্রজে
ভ্রমণকারীর ঘণ্টাভিত্তিক
‘ওয়াক-টিকিট’
থেকে সরকারের
বাড়তি রাজস্ব
আসবে। দ্বিতীয়ত,
সেতুতে সশরীরে
ভ্রমণের সুযোগ
মানুষকে জাতীয়
সম্পদের মালিকানায়
অংশীদারত্ব অনুভবকে
সম্ভব করে।
তৃতীয়ত, (এবং
সম্ভবত সর্বাধিক
গুরুত্বপূর্ণ) যেসব
অবকাঠামোয় আন্তঃদেশীয়
স্বার্থ জড়িত
থাকে, সেসবে
স্থানীয় নাগরিক
স্বার্থ শুরু
থেকেই নিশ্চিত
করা রাজনৈতিক
নেতৃত্বের দায়িত্ব।
যেকোনো সেবা
সরবরাহে খরচ
ও ঝুঁকি
থাকবে, যা
উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে
যাচাই করতে
হবে। তবে
কেবল নিরাপত্তার
দোহাই দিয়ে
নাগরিক স্বার্থের
প্রান্তিকীকরণ সামাজিক
স্থিতিশীলতার জন্য
কাম্য নয়।
পরিশেষে উল্লেখ্য,
এ ধরনের
বিনোদন চাহিদা
একসময় কমে
এলেও ততদিনে
কে জানে
আমরা হয়তো
সেতুর ওপর
প্রতি বছর
শীতকালীন ‘পদ্দা
ম্যারাথন’-এর
আয়োজন করতে
পারব!
(ধারণাগুলো
লেখকের একান্তই
নিজস্ব)
সাজ্জাদ জহির: নির্বাহী পরিচালক, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ