স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বাজারে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে শ্রম অধিকার ও স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা। সেজন্য এখনই সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বলে মত দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৭তম আসরের সমাপনী উপলক্ষে গতকাল আয়োজিত সেমিনারে এ কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় দুদিনব্যাপী এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। দেশের ডেনিম শিল্পকে এগিয়ে নিতে ‘দ্য ব্লু নিউ ওয়ার্ল্ড’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ।
এবারের প্রদর্শনীতে সাতটি দেশের প্রায় ৪৫টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এতে ডেনিম কাপড় ছাড়াও উৎপাদনকারী মিল, ডেনিম ও নন-ডেনিম পোশাক প্রস্তুতকারক সরঞ্জাম, ওয়াশিং লন্ড্রি প্রদর্শিত হয়েছে। ৫৬টি দেশের প্রতিনিধিরা এ এক্সপো পরিদর্শন করেছেন।
দ্বিতীয় দিনের সেমিনারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সফলতার গল্প অব্যাহত থাকবে। তবে আমাদের আসন্ন চ্যালেঞ্জগুলোর কথা চিন্তা করে প্রণোদনাগুলো পুনর্গঠন করতে হবে। ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা আমাদের উদ্যোক্তাদের প্রযুক্তি স্থানান্তর, শ্রম ও অন্যান্য মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলার বিষয়ে সহায়তা করবে। এটি ব্যবসার জন্য ভালো দিক। একই সঙ্গে শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়েও আমাদের ভাবতে হবে, কারণ এটি মানবাধিকার।’
জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন যে বাংলাদেশ সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে। তবে এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা, অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতাই হবে মূল চাবিকাঠি। শ্রমিক অধিকারও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।’
সেমিনারে বাংলাদেশের অর্থনীতি পোশাক খাতের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল বলে মন্তব্য করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ড. মোস্তফা আবিদ খান। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি সফলতার গল্প। তারা বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রদানে খুবই আগ্রহী। তবে সেক্ষেত্রে আমাদের ইইউ কর্তৃক নির্ধারিত ডিউ ডিলিজেন্স মানদণ্ড মেনে চলতে হবে।’
বাংলাদেশে ইইউর প্রতিনিধি দলের গ্রিন ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরামর্শক এডউইন কোককোক বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে ডিউ ডিলিজেন্স গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা শ্রম অধিকার ও পরিবেশগত মানদণ্ডে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি। তবে ডিকার্বনাইজেশনেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ডেনমার্কের দূতাবাসের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সেক্টরের কাউন্সেলর ওলে আর জাস্টেসেন। তিনি বলেন, ‘কারখানা বা কর্মস্থলের পরিবেশ উন্নত করার জন্য শ্রম পরিদর্শন গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমগ্র অবকাঠামোতে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’ পাশাপাশি ডিউ ডিলিজেন্সকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে না দেখে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে শিন শিন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল সাদাত, ইভিন্স গ্রুপের পরিচালক শাহ রাইদ চৌধুরী, এইচঅ্যান্ডএমের আঞ্চলিক কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বক্তব্য দেন।