বেনাপোল
স্থলবন্দরে আগামী অক্টোবরে চালু হচ্ছে কার্গো ভেহিকল টার্মিনাল। যেখানে একসঙ্গে রাখা যাবে প্রায় দেড় হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। ফলে দ্রুত মালামাল লোড-আনলোড করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন যানজট কমবে, তেমনি বেশি রাজস্ব আয় বাড়বে বলে
আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সড়ক ও রেল যোগাযোগ সহজ হওয়ায় যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য বেড়েছে বহু গুণ। তাই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পণ্য পরিবহনের ভোগান্তিও। এ সংকট থেকে উত্তরণে এবং স্থলবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ‘বেনাপোলে কার্গো ভেহিকল টার্মিনাল নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণপূর্বক এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়। প্রায় ২৪ একর জমির ওপর টার্মিনাল নির্মাণে ৩২৯ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ১০৯ এবং নির্মাণকাজ বাবদ ২২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।’
বন্দর সূত্র জানায়, প্রায় দেড় হাজার মালবাহী ট্রাক ধারণক্ষমতার এ প্রকল্পের আওতায় পার্কিং ইয়ার্ড, কার্গো ভবন, বন্দর সেবা ভবন, ইউটিলিটি ভবন, ফায়ার স্টেশন, আধুনিক টয়লেট কমপ্লেক্স, ওয়েব্রিজ স্কেলসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে।
টার্মিনালের বিষয়ে বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান বলেন, ‘টার্মিনাল উদ্বোধন হলে এক থেকে দেড় হাজার ট্রাক একসঙ্গে রাখা যাবে, ফলে দ্রুত পণ্য আনলোড সম্ভব হবে। আর আমদানিকারকদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না। কেননা, পণ্য ছাড় করতে দেরি হলে আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। সেটি আর লাগবে না।’
বন্দর সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় সাত-আট হাজার টন পণ্য আমদানি হয়। ফলে জায়গা সংকটে অনেক পণ্য রাখা হয় খোলা আকাশের নিচে। এছাড়া ভারতীয় ট্রাকগুলো পণ্য নিয়ে দিনের পর দিন বসে থাকে বন্দরে। জায়গা না থাকায় আনলোড করতে সমস্যা হয়। টার্মিনালটি চালু হলে এ সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে বলে মনে করেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬ লাখ ৪৪ হাজার টন পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪৩ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয় ২০ লাখ ৩ হাজার ৬৭০ টন। আর গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ২১ হাজার ৪৪১ টন।
যশোরের আমদানিকারক এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে পণ্যজটের কবলে পড়ে আমাদের জরিমানা গুনতে হতো। কিন্তু টার্মিনালটি চালু হলে সব পর্যায়ের আমদানিকারকদের জন্য সুবিধা হবে।’
বন্দরের প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসান আলী বলেন, ‘কার্গো ভেহিকল টার্মিনাল নির্মাণে সর্বোচ্চ গুণগতমান নিশ্চিত করা হয়েছে বুয়েট, কুয়েট এবং আমাদের নিজস্ব ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে।’ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, ‘টার্মিনাল উদ্বোধন হলে দীর্ঘদিনের যানজট ও পণ্যজট কমে যাবে। যার সুবিধাভোগী হবেন আমদানিকারকরা।’ তবে ভারতের পেট্রাপোলে যদি জট নিরসন না হয়, তাহলে এ সুবিধা কোনো কাজে আসবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ ব্যবসায়ী নেতা।