সরকারের বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আটটি পাটকল ইজারা দেয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এ ইজারা সম্পন্ন করা হয়েছে। ইজারা পাওয়া পাটকলগুলোর সবই দেশীয় কোম্পানি।
এছাড়া ৮টি পাটকলের ইজারা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তির আওতায় আসেনি। তবে ইজারা পেতে ইচ্ছুক এমন আট কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। নির্ধারিত পাটকল ইজারা নেয়ার জন্য এবং চুক্তির যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করার জন্য নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার (নোয়া) দেয়া হবে। প্রক্রিয়াধীন পাটকলগুলোর দুটি পেতে যাচ্ছে ভারতের দুই কোম্পানি। আরো তিনটি পাটকল ইজারা দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেবে বিজেএমসি। বিজেএমসি প্রত্যাশা করছে, খুব শিগগির এ তিনটি পাটকলও ইজারার আওতায় আসবে।
বিজেএমসি সূত্রে জানা যায়, ৫ থেকে ২০ বছরের জন্য এসব পাট কারখানা ইজারা দেয়া হয়েছে। ইজারা শর্তাবলির অধীনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য মিলের বিদ্যমান যন্ত্রপাতি, জমি ও অন্যান্য সক্ষমতা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে। এক্ষেত্রে অন্য কাজে সম্পদের ব্যবহার ও ব্যাংক ঋণ পাওয়ার জন্য মিলের সম্পত্তি বন্ধক রাখতে পারবে না এ প্রতিষ্ঠানগুলো।
পাঁচ থেকে বিশ বছরের জন্য দেশের পাটকলগুলো ইজারা দেয়া হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে ইজারার মেয়াদ বাড়ানো যাবে। কারখানার ইজারা পেলেও পাটকলগুলো কেবল পাট ও পাটজাত পণ্য এবং বহুমুখী পাটজাত পণ্যের জন্যই ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু ইজারা দেয়া কোনো সম্পত্তি বা এর কোনো অংশ কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা মধ্যস্থতাকারীসহ কোনো পক্ষের কাছে বন্ধক রাখা যাবে না, সাব-লিজ বা ভাড়া দেয়াও যাবে না।
ইজারায় দেয়া পাটকলগুলোর মধ্যে নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস লিমিটেড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জুট অ্যালায়েন্স নামে একটি ভেঞ্চার কোম্পানির অনুকূলে। এ ভেঞ্চার কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বে গ্রুপ। সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস লিমিটেডের ইজারা পেয়েছে রশিদ অটোমেটিক রাইস, চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস পেয়েছে ইউনিটেক্স কম্পোজিট মিলস, এমএম জুট মিলস লিমিটেড পেয়েছে স্টিল মার্ক বিল্ডিং, আরআর জুট মিলস লিমিটেড পেয়েছে বে স্টফ জুট মিলস লিমিটেড, মিলস ফারনিশিংস লিমিটেড পেয়েছে ফোর এমারেলড লিমিটেড, যশোর জুট মিলস লিমিটেড পেয়েছে আকিজ জুট মিলস লিমিটেড, খুলনার দৌলতপুর জুট মিলস লিমিটেড পেয়েছে ইউনি ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার লিমিটেড। এরই মধ্যে বাংলাদেশ জুট মিলস, কেএফডি জুট মিলস এবং সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিলস কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রাথমিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে পাটকল করপোরেশন।
ইজারার জন্য প্রক্রিয়াধীন পাটকলগুলোর মধ্যে ইউএমসি জুট মিলস লিমিটেড বরাদ্দের জন্য নোয়া দেয়া হয়েছে সোনিয়া অ্যান্ড সোয়েটারস লিমিটেড, হাফিজ জুট মিলস লিমিটেডের বরাদ্দের জন্য ইউনিটেক্স এলপি গ্যাস লিমিটেড, গুল আহমদ জুট মিলস লিমিটেডের জন্য কেডিএস টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, দ্য ক্রিসেন্ট জুট মিলস কোং লিমিটেডের জন্য পেয়েছে ঢাকা সক্স ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, খালিশপুর জুট মিলস লিমিটেডের জন্য রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডকে নোয়া দেয়া হয়েছে। একমাত্র নন-জুট মিলসের হিসাবে গালফ্রা হাবিব লিমিটেডের বিপরীতে নোয়া দেয়া হয়েছে শাফি মোটরস লিমিটেডকে। অন্যদিকে ভারতীয় কোম্পানি প্যাসিফিক জুট লিমিটেডকে দেয়া হবে ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিটেড এবং মোহন জুট লিমিটেড পাবে কার্পেটিং জুট মিলস লিমিটেড।
বিজ্ঞপ্তি দিয়েও এখনো তিনটি পাটকলকে ইজারার প্রক্রিয়ায় আনা সম্ভব হয়নি। অপেক্ষমাণ তিনটি পাটকল হলো খুলনার স্টার জুট মিলস লিমিটেড, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস লিমিটেড ও রাজশাহী জুট মিলস লিমিটেড। বিজেএমসি বলছে, খুব শিগগির এ তিন পাটকল ইজারা দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি ও টার্মস অব রেফারেন্সের (টিওআর) বিধি অনুযায়ী পাটকলগুলো বরাদ্দ দেয়া হবে।
জানা গেছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট পাটকল ইউনিটের সংখ্যা প্রায় ৩০০। এর মধ্যে ব্যক্তি বা বেসরকারি খাতে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) ও বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সদস্য সক্রিয় পাটকল ইউনিট আছে প্রায় ২৪০টি।
পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান আনিস মাহমুদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে আটটি পাটকলের ইজারা প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পাটকল তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। বাকি পাঁচটি কারখানা খুব শিগগির তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। ইজারার প্রক্রিয়ায় আছে ১০টি পাটকল। পাটকলগুলোর ইজারার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর কারখানাগুলো ইজারায় যেতে পারবে বলে আশা রাখছি।’