পাটের পর চা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থকরী ফসল। সকালের নাশতা থেকে শুরু করে সন্ধ্যার আড্ডা, চা সারাদিনই এ দেশের মানুষের প্রিয় পানীয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্যের মতো দেশে চা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এ কারণে ১৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে চা উৎপাদন হয়ে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫০৭ দশমিক ৪৪ একর জমিতে ১৬৭টি বাণিজ্যিক চা উৎপাদন এস্টেট এবং চা বাগান রয়েছে, যেখানে প্রায় ১ দশমিক ৫ লাখ শ্রমিক নিযুক্ত। এছাড়া বিশ্বব্যাপী চা উৎপাদনের ৩ শতাংশ বাংলাদেশে হয়। ২০২১ সালে বাংলাদেশে চা শিল্পের বাজারের আকার ছিল প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
চা বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ, যা আমাদের অর্থনীতির একটি মূল স্তম্ভ। এটি আমাদের দেশের কৃষি শিল্পকে উৎসাহিত করে এবং আমাদের সর্বজনীন অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবেও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। চা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য উৎপাদক দেশগুলোর সঙ্গে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়েছে, যা এ নিবন্ধে আমরা বিশেষভাবে আলোচনা করব।
বাংলাদেশ চা শিল্পে একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বহন করে, যা নিয়ে আমরা গর্বিত। যা-ই হোক, যখন বৈশ্বিক রফতানির কথা আসে, তখন বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ভারত ও কেনিয়ার মতো প্রতিপক্ষের চেয়ে পিছিয়ে থাকে। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের চা রফতানি খাত প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।
২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের চা রফতানির তথ্য পর্যালোচনা করার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশের চা রফতানি বেড়েছে, কিন্তু এ বৃদ্ধির মাত্রা প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক কারণ হয়তো পূর্ণতা প্রদান করেনি। সূত্র: বাংলাদেশ চা বোর্ড
শ্রীলংকা, ভারত এবং কেনিয়া চা উৎপাদনে ও রফতানিতে আমাদের দেশের তুলনায় বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করেছে। চা উৎপাদনে প্রবল সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যার কারণে চা রফতানি খাতে বাংলাদেশ স্থিতিশীল হতে পারেনি। এ চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রযুক্তি ও আধুনিক উপাদানের অভাব। শ্রীলংকা, ভারত ও কেনিয়া এ দেশগুলো চা উৎপাদনে উন্নত উপাদান এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত তাদের চা শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সামর্থ্য বর্ধিত করার জন্য, আমাদের উপাদান ও প্রযুক্তিতে বৃদ্ধি এবং নতুন উদ্ভাবনে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। প্রযুক্তি ও উন্নত উপাদান ব্যবহার করে উন্নত চা উৎপাদনের সুবিধাপ্রাপ্ত করার জন্য সঠিক নৈপুণ্য এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা আবশ্যক। আমাদের উদ্ভাবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের এ খাতে বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।
রফতানি বৃদ্ধিতে যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে বলে আমি মনে করি সেগুলো হলো
সমুদ্রপথে নির্দিষ্ট বন্দরে সরাসরি রফতানি সুযোগের অভাবের কারণে রফতানিকারকদের অত্যধিক জাহাজ ভাড়া গুনতে হয়, বিধায় চা রফতানি ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
চা রফতানিতে সরকারি নগদ সহায়তার অপ্রতুলতা।
রফতানিবিষয়ক কার্যক্রম সম্পাদনে অনেক সময় আইনি জটিলতায় জাহাজীকরণ বিঘ্নিত হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী ডলার বিনিময় মূল্যের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে চা রফতানিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে, কারণ রফতানিকারকের ব্যাংক থেকে আশানুরূপ ‘বিনিময় মূল্য’ পাওয়া যায় না।
রফতানিকারক ও ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক ভ্রমণের জন্য ভিসা প্রাপ্তিবিষয়ক জটিলতা।
ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চা উচ্চ মানের মনে করা হয় না। অধিকন্তু দেশীয় চায়ের গুণমান ঋতু পরিবর্তন সাপেক্ষে হওয়ায় চা রফতানির সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করে।
প্যাকেট চায়ের উপকরণের দাম অনেক বেশি হওয়ায় রফতানি মূল্য প্রতিযোগী হয় না।
নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেয়া হলে আমাদের
দেশের রফতানি বৃদ্ধিতে তা সহায়ক হবে বলে
মনে করি আমি
চা রফতানিতে সরকারি নগদ সহায়তা ৪ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, যা রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
নগদ সহায়তা প্রদাননিজস্ব বাগানের পাশাপাশি নিলাম থেকে ক্রয়কৃত চায়ের ওপরও একই সুবিধা দেয়া প্রয়োজন।
অধিকতর বাজার সম্প্রসারণে বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক দেশের বাইরে চা মেলার আয়োজন করা প্রয়োজন, যাতে রফতানিকারক ও ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়।
রফতানিকারক ও ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক ভিসা সহজীকরণের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক আশু পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কতিপয় নির্দিষ্ট বন্দরে সরাসরি পণ্য পৌঁছানোর জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক আশু পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন, যাতে অল্প সময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পণ্য পৌঁছানো যায়।
দেশীয় চা শুল্কমুক্ত প্রবেশের জন্য আমদানিকারক দেশুগুলোর সঙ্গে ‘লেটার অব এগ্রিমেন্ট’-এর মাধ্যমে চা রফতানি উৎসাহিতকরণ, যাতে অন্য আমদানিকারক দেশগুলোয় বাংলাদেশের চা অধিকতর বিপণন সম্ভব হয়।
অতিরিক্ত চায়ের উৎপাদন অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
রফতানিবিষয়ক কার্যক্রম সহজীকরণের লক্ষ্যে রফতানিকারকদের সঙ্গে বাংলাদেশ চা বোর্ড, কাস্টমস ও উদ্ভিদ সংগনিরোধ শাখার সমন্বয়ে যৌথ কর্মশালার আয়োজন ও ব্যবস্থা গ্রহণ।
চা প্যাকিংয়ের উপকরণগুলোর ওপর আমদানি শুল্ক হ্রাস।
শ্রীলংকা, ভারত ও ভিয়েতনাম প্রতিষ্ঠিত চা উৎপাদনে সক্ষমতা এবং ব্র্যান্ডিং বা মার্কেটিং দ্বারা একটি শক্ত অবস্থান অর্জন করেছে। বাংলাদেশও এ প্রয়াস করতে পারে এবং নিজেকে বিশ্ববাজারে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, যদি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তবে বাংলাদেশের চা রফতানি বৃদ্ধি এবং নিজেদের একটি শক্ত অবস্থানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করি।
চা মার্কেটিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো হচ্ছে
সুবিধাগুলো নিম্নরূপ
চা রফতানির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করে।
রফতানিকারক ও ক্রেতা দেশগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
রিজার্ভ ফান্ডের উত্তরোত্তর বৃদ্ধির কারণে দেশের সার্বিক সুনাম বাড়ে। এছাড়া জটিল কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমদানি পণ্যের মূল্য ERQ থেকে সুবিধাজনকভাবে ব্যবহার বা সমন্বয় করা যায়।
বাগান মালিকরা তাদের অবিক্রীত চা সরাসরি রফতানি করার মাধ্যমে নিলাম ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পারেন।
বিশ্ববাজারে রফতানির কারণে বাংলাদেশের চায়ের ব্র্যান্ডের অত্যধিক ব্যবহার দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে।
রফতানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
দেশের যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চা রফতানি শুধু মুদ্রাবাজারের স্থবিরতা দূর করে না, বরং জাতীয় স্বার্থে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
অসুবিধাগুলো নিম্নরূপ
আমদানিকারকরা অনেক সময় বিলম্বে রফতানি মূল্য পরিশোধ করেন।
লাগামহীন রফতানি ব্যয় বৃদ্ধি যেমন বৈদেশিক ব্যাংক চার্জ, পোর্ট সার চার্জ, বীমা পলিসি চার্জ, জাহাজ ও ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি চা বিপণনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে।
যেহেতু দেশীয় চায়ের রফতানি মূল্য অন্যান্য দেশের চায়ের দামের ওপর নির্ভরশীল, সেহেতু অন্যান্য উৎসের চায়ের মূল্য কম হলে দেশীয় বাজার থেকে ক্রয়কৃত রফতানি চায়ের ধার্যকৃত মূল্য পরিশোধে আমদানিকারকরা গড়িমসি করেন।
‘CAD’ পদ্ধতিতে আমদানিকারকদের রফতানি মূল্য পরিশোধের প্রস্তাব রফতানিকারকদের চা রফতানিতে ঝুঁকি বৃদ্ধি ও নিরুৎসাহিত করে।
আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদাপত্রে নতুন ধরনের দলিলাদির বা প্রত্যয়নপত্রের প্রয়োজনীয়তা রফতানিকারকদের চা রফতানিতে নিরুৎসাহিত করে।
‘লেটার অব ক্রেডিট’-এর আওতায় বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে আমদানিকারকের ব্যাংকের দীর্ঘসূত্রতার কারণে রফতানিকারক ব্যাংক তাদের বিল বিলম্বে গ্রহণ করেন, যা রফতানিকারদের চা রফতানিতে নিরুৎসাহিত করে।
দেশের বিরাজমান মুদ্রা সংকট পরিস্থিতিতে রফতানি বিলের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে কাঙ্ক্ষিত বিনিময় মূল্য পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের চা পণ্য নিয়ে প্রচারণায়ও আমাদের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের চা পণ্য প্রচারণায় ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশে উৎপাদিত চায়ের গুণাগুণ প্রচারে ঘাটতি দূর করা প্রয়োজন। সরকারি উদ্যোগে রফতানিকারকদের জন্য বড় বড় আন্তর্জাতিক চা মেলার আয়োজন ও অংশগ্রহণ বাংলাদেশের চা পণ্য প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের মহামান্য রাষ্ট্রদূতরা তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশ চায়ের গুণাগুণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচারে বৈদেশিক বাণিজ্য়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
রফতানি বৃদ্ধিতে চায়ের গুণগত মানে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করি। উন্নত ও টেকসই মোড়কের ব্যবহার চায়ে বিদ্যমান আর্দ্রতা বৃদ্ধি রোধ করবে। লুস চায়ের ক্ষেত্রে ‘Vaccum Packing’-এর ব্যবহার, যা চায়ের গুণগত মানকে অক্ষুণ্ন রাখতে পারে। ‘Paper Sacks’-এর ব্যবহার যাচাইয়ের মানকে অক্ষুণ্ন রাখে। ‘Seasoning Wooden Chests’-এর ব্যবহার চায়ের মানকে অক্ষুণ্ন রাখতে পারে।
ঐতিহ্যবাহী ব্ল্যাক টি ছাড়াও যদি বাংলাদেশী ব্র্যান্ডগুলো চায়ের ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও স্বাদ তৈরি করতে পারে, তাহলে প্রিমিয়াম চা খাতেরও বড় সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের প্রিমিয়াম চা অভ্যন্তরীণ বাজারে উপহার প্যাকেজ হিসেবে বাজারজাত ও বিদেশে রফতানি করা যেতে পারে। সাধারণ চায়ের তুলনায় এ ধরনের স্বাদযুক্ত ইনফিউজড চা পশ্চিমা দেশগুলোয় প্রচলিত ও চাহিদা রয়েছে। ফলে এ ধরনের প্রিমিয়াম চা বাংলাদেশী ব্র্যান্ডগুলোর জন্য একটি ভালো রফতানির সুযোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানীয় ছাড়াও চা ত্বকের যত্ন এবং সৌন্দর্য পণ্যগুলোয়ও ব্যবহার হয়। তাই চা পাতার উপজাত হিসেবে চা-মিশ্র ত্বকের যত্নের পণ্য উৎপাদন করা স্থানীয় ব্র্যান্ডের জন্য একটি অনন্য সুযোগ হতে পারে। এটি চা শিল্পের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নতুন শিল্প তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে এবং বাংলাদেশ চা পাতা ছাড়াও ত্বকের যত্ন ও সৌন্দর্য পণ্য রফতানি করতে পারে।
বাংলাদেশে চা উৎপাদন বাড়লেও রফতানি বাড়েনি। ২০০১ সালে বাংলাদেশ ১ কোটি ২০ লাখ কেজির বেশি চা বিদেশে রফতানি করেছে; ২০১০ সালে এটি মাত্র নয় লাখ কেজিতে নেমে আসে এবং ২০২১ সালে এটি আরো কমে যায় মাত্র ৬ লাখ ৮০ হাজার কিলোগ্রামে। অতীতে বাংলাদেশের চা রফতানি থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেত, কিন্তু এখন চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওয়ার্ল্ডস্টপ এক্সপোর্টস অনুযায়ী, বিশ্ব রফতানিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৫৭তম স্থানে। তাই বাংলাদেশকে বৈশ্বিক বাজার ধরতে চাইলে স্থানীয় চাহিদার চেয়ে বেশি চা উৎপাদন করতে হবে। স্থানীয় চাহিদা বাড়তে থাকায় উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, তেঁতুলিয়া ও ঠাকুরগাঁওয়ের মতো আরো কয়েকটি জেলার সমতল ভূমিতে চাষের উপযোগী করতে এবং চা রফতানি বাড়ানোর জন্য আগে যেখানে চা চাষ করা হয়নি, সে জমিগুলো প্রস্তুত করা অপরিহার্য। এতে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত চা রফতানির জন্য উৎপাদন বাড়বে। এছাড়া উৎপাদনের পরিমাণ বাড়লে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে অন্য দেশ থেকে চা আমদানি করতে হবে না। তাছাড়া বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গাছ থেকে চা পাতা সংগ্রহের পর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিকে আরো আধুনিকায়ন করা যেতে পারে। এছাড়া দেশের বেশকিছু পাহাড়ি এলাকা অনাবাদি রয়ে গেছে। তাই এ অনাবাদি এলাকাগুলো চা চাষের উপযোগী হলে টিয়ার উৎপাদন আরো বাড়ানো যেতে পারে। তদুপরি, তৎকালীন ব্রিটিশ সংস্কৃতি অনুসরণ করে বাংলাদেশে এখনো চা চাষ ও উৎপাদন হয়, যা আধুনিকীকরণ করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই চা চাষের আধুনিকায়ন করলে উৎপাদন বাড়বে, বাকিটা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা যাবে। এছাড়া চা শিল্প বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান করে। এসব শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে চা বাগান ও চা বাগানের মালিকদের পাশাপাশি সরকারকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব বিষয় বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চা শিল্প আরো স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।