কমিউনিস্ট শাসিত পূর্ব জার্মানিতে শ্রমে বাধ্য করা ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে ফার্নিচার জায়ান্ট আইকিয়া। জার্মান সরকারের নতুন এক তহবিলে কোম্পানিটি ৬০ লাখ ইউরো বা ৬৫ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। অন্যান্য কোম্পানিও এ তহবিলে অর্থ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর সিএনএন।
স্নায়ুযুদ্ধকালীন জার্মানিতে রাজনৈতিক ও অপরাধমূলক মামলায় আটক বন্দিদের দিয়ে আইকিয়ার জন্য ফ্ল্যাটপ্যাক আসবাব তৈরি করানো হতো। এ ধরনের আসবাব বিভিন্ন অংশে ভাগ করে বহন করা যায়। জোরপূর্বক শ্রমের বিষয়টি প্রায় এক দশক আগে সুইডেন ও জার্মানির সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। এর পরই আইকিয়া স্বাধীনভাবে তদন্ত পরিচালনা করে।
নিরীক্ষা, কর ও লেনদেন-সম্পর্কিত সেবা প্রদানকারী সংস্থা আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের তদন্তে জানা গেছে, ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত বন্দিদের দিয়ে আইকিয়ার জন্য আসবাবপত্র তৈরি করানো হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এ সুইডিশ কোম্পানির প্রতিনিধিরাও রাজনৈতিক বন্দিদের শ্রমশক্তি হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টি জানত।
১৯৪৯-৯০ সাল পর্যন্ত কট্টর কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল পূর্ব জার্মানি বা জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (জিডিআর)। তখন সেখানে কয়েক হাজার বন্দিকে কারখানায় শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। ফলে দেশটির সস্তা শ্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়, যার সুবিধা বহু পশ্চিমা কোম্পানি নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
চলতি সপ্তাহে আইকিয়া জার্মানি বলেছে, তারা পূর্ব জার্মানির স্বৈরতন্ত্রের ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তাবিত নতুন সরকারি তহবিলে স্বেচ্ছায় ৬০ লাখ ইউরো দেবে।
ভুক্তভোগীরা কয়েক দশক ধরে দাবি জানিয়ে আসার পর জার্মানির ক্ষমতাসীন জোট সরকার ২০২১ সালে এ তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেয়। জার্মান সংসদ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তহবিল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভোটের আয়োজন করবে। যদিও এ পদক্ষেপকে নিছক আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আইকিয়া জার্মানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়াল্টার কাডনার বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি যে জিডিআরের রাজনৈতিক বন্দিদের দিয়ে আইকিয়ার জন্যও পণ্য তৈরি করা হয়েছিল, যা জানার পর আমরা পুরো বিষয় খোলাসা করতে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে আমরা ক্ষতিপূরণ প্রদানে অংশগ্রহণ করব। তাই আমরা ক্ষতিপূরণ দিতে তহবিলের বাস্তবায়নকে স্বাগত জানাচ্ছি এবং আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরে আনন্দিত।’
ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গঠিত তহবিলে অর্থ প্রদান এটি আইকিয়ার জন্য প্রথম ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।