ভয়েস ফর রিফর্মের সংলাপে বক্তারা

দীর্ঘমেয়াদে পণ্যের দাম কমাতে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে

রাজধানীতে গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘পুলিশের আনুগত্য হোক আইন ও জনগণের প্রতি, ক্ষমতার প্রতি নয়: কীভাবে সম্ভব এ রূপান্তর’ শীর্ষক সংলাপে বক্তব্য রাখেন অতিথিরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দীর্ঘমেয়াদে পণ্যের দাম কমাতে উৎপাদন খরচ কমানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের গৃহীত নীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। গতকাল রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। নাগরিক প্লাটফর্ম ‘ভয়েস ফর রিফর্ম’ দিনব্যাপী ‘মেরামত আলাপে’র অংশ হিসেবে সকাল ১০টায় ‘দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি: সংকট সমাধানের আশু উপায়’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করে।

দিনের শুরুর সংলাপে মূল বক্তা হিসেবে অংশ নেন সিরডাপ পরিচালক (গবেষণা) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। বক্তব্য দেন চালডালের সিইও ওয়াসিম আলীম ও অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্ম প্লাটফর্মের সহ-আহ্বায়ক ও তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফাহিম মাশরুর।

মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বিগত সরকারের বিভিন্ন সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভুল নীতির কারণে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে এসব নীতি সংশোধন করতে হবে। আগের সরকারের প্রবৃদ্ধি দেখানোর নীতির নেতিবাচক ফল হচ্ছে আজকের মূল্যস্ফীতি। বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতি এবং চাঁদাবাজির কারণে জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়ে, কিন্তু তা সাময়িক। কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ দাম ধরে রাখতে পারে না। তার বিপরীতে উৎপাদন ব্যয়ের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদে পণ্যের দাম কমাতে হলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘পুলিশের আনুগত্য হোক আইন ও জনগণের প্রতি, ক্ষমতার প্রতি নয়: কীভাবে সম্ভব এ রূপান্তর’ শীর্ষক সংলাপ। এতে মূল বক্তা ছিলেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মির্জা হাসান। সংলাপে আরো অংশ নেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. নাজমুল হক।

এ সময় নুরুল হুদা বলেন, ‘পুলিশকে কেন দুর্নীতিপরায়ণ বলা হয়—এর উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাবে তাদের বেতন কম। এছাড়া বাংলাদেশে আইন ভঙ্গ করা এক ধরনের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন ভঙ্গ করার দ্বারা নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তির জানান দেয়া হয়। মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে অপরাধ কমে আসবে।’

এদিন বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘ভরসা ফিরুক গণমাধ্যমে: কোন সংস্কারে স্বাধীন হবে মিডিয়া?’ শীর্ষক সংলাপ। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন। আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট কামাল আহমেদ এবং সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার।

এ অংশে কামাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশের গণমাধ্যম কি আসলে গণমাধ্যম? বাংলাদেশে সরকারি মাধ্যম আছে। আবার সরকার সমর্থকরা গণমাধ্যমকে সরকারি মাধ্যম করে ফেলতে চান; যেটা বাতাবি লেবু টিভির মতো। একইভাবে করপোরেট মাধ্যম আছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এসব গণমাধ্যম তৈরি করে। তারা শুধু করপোরেটদের স্বার্থই রক্ষার চেষ্টা করে। আমরা যদি গণমাধ্যম চাই, সেটি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া কী হবে? সেটি হবে জনস্বার্থ। সেটি যদি কোনো অনুষ্ঠান হয়, সেই অনুষ্ঠানে জনসাধারণের স্বার্থরক্ষা করছে কিনা—তা হচ্ছে যাচাইয়ের একটি মানদণ্ড। শ্রোতা, পাঠক, দর্শকের কাছে জবাবদিহি থাকতে হবে।’

সাধারণত বলা হয়, আমার পাঠক যদি না পড়ে, দর্শক যদি না দেখে বা শ্রোতা যদি না শোনেন, তাহলে সেই গণমাধ্যম নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু গত ৫০ বছরে ঠিক এ কারণে কতটি গণমাধ্যম বন্ধ হয়েছে? আমার জানামতে একটিও না। অনেকগুলোরই কিন্তু দর্শক নেই। তার পরও সেগুলো চালু আছে। কীভাবে আছে তাহলে? সরকারের কাছ থেকে কৃপা নিয়ে অথবা অন্য ব্যবস্থা থেকে টাকা এনে এগুলো চলছে। কারণ গণমাধ্যম দেখিয়ে সরকারের সঙ্গে আপস করে ব্যবসায়ের লাইসেন্সসহ অন্য সুবিধা নেয়া যায়।’

সমাপনী সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় বিকাল ৫টায়। ‘ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও গণতন্ত্রায়ণ নিশ্চিত করতে সংবিধানে কী কী সংস্কার দরকার?’ শীর্ষক এ সংলাপে মূল বক্তা হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের গ্লোবাল একাডেমিক ফেলো ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. সিনথিয়া ফরিদ। এ অংশে অন্য দুই বক্তা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমএ মতিন এবং সমাজ বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান।

আরও