ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক

ইউরোপে জিডিপি কমতে পারে দেড় শতাংশীয় পয়েন্ট

মার্কিন নির্বাচনে বিজয়ী হলে আমদানির ক্ষেত্রে সর্বজনীন কর আরোপের কথা বলেছেন রিপাবলিক পার্টির প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মার্কিন নির্বাচনে বিজয়ী হলে আমদানির ক্ষেত্রে সর্বজনীন কর আরোপের কথা বলেছেন রিপাবলিক পার্টির প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার প্রস্তাবিত ১০ শতাংশ শুল্ক অটো ও রাসায়নিকের মতো ইউরোপীয় পণ্যকে আঘাত করতে পারে। এতে ইউরোপের জিডিপি ১ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বা প্রায় ২৬ হাজার কোটি ইউরো পর্যন্ত কমতে পারে। খবর ইউরো নিউজ।

এ আর্থিক ক্ষতি বিস্তৃত পরিসরে আঘাত হানতে পারে। এতে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) কমিয়ে দিতে পারে সুদহার। ইউরোর বিনিময় হারে পতন ও মন্দার ঝুঁকি সম্পর্কেও সতর্ক করছেন বিশ্লেষকরা। তারা আরো জানান, বাণিজ্য ও মুদ্রা ব্যবস্থায় সংকটের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ব্যয়ে নতুন চাপ যুক্ত হতে পারে।

গতকাল অনুষ্ঠিত হওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য বিজয় নিয়ে অনেক দিন ধরে আলোচনা হচ্ছে ইউরোপে। বিশ্লেষকরা বরাবরই ট্রাম্পের বিজয়কে অর্থনীতির জন্য মারাত্মক সমস্যা হিসেবে তুলে ধরছেন। সম্ভাব্য শুল্ক বাধার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপের দেশগুলো এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপের পরিকল্পনা করেছে।

ইউরোপিয়ান কমিশনের তথ্যানুসারে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ হাজার ২৩০ কোটি ইউরোর পণ্য রফতানি করেছে, যা সব নন-ইইউ রফতানির এক-পঞ্চমাংশ।

ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ২০ হাজার ৭৬০ কোটি ইউরোর যন্ত্রপাতি ও যানবাহন। ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি ও ১০ হাজার ৩৭০ কোটি ইউরো রফতানি নিয়ে পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে রাসায়নিক ও অন্যান্য শিল্পোৎপাদন। সব মিলিয়ে ট্রান্স-আটলান্টিক রফতানির প্রায় ৯০ শতাংশ রয়েছে এসব পণ্যের দখলে। অর্থাৎ ইউরোপের শিল্পোৎপাদন বড় অংশে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে।

এ বিষয়ে ম্যাক্রো রিসার্চ বিভাগের প্রধান বিল ডিভিনিসহ ডাচ ব্যাংক এবিএন আমরোর বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক কার্যকর হলে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিতে পতন ঘটবে। এতে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের মতো বাণিজ্যভিত্তিক অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ব্যাংকটির মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক ইউরোপীয় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে দেবে। ২০২৪ সালের জন্য পূর্বাভাসকৃত জিডিপি ১৭ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ইউরোর ভিত্তিতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে ২৬ হাজার কোটি ইউরো। এতে ইউরোপের প্রবৃদ্ধির পতন ঘটলে ইসিবি কড়া প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হতে পারে, ফলে ২০২৫ সালের মধ্যে সুদহার শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসতে পারে। এর বিপরীতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পারে। এটি ১৯৯৯ সালে ইউরোর সূচনার পর ইসিবি ও ফেডের মধ্যে ‘সবচেয়ে বড় ও স্থায়ী নীতিগত পার্থক্যের অন্যতম’ হতে পারে।

জার্মানির নাটিক্সিস করপোরেট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ের ইউরোপীয় ম্যাক্রো রিসার্চের প্রধান ডার্ক শুমাকারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর কারণে জার্মানির জিডিপি প্রায় দশমিক ৫, ফ্রান্সে দশমিক ৩, ইতালিতে দশমিক ৪ ও স্পেনে দশমিক ২ শতাংশ কমতে পারে।

আরও