সার্বভৌম সম্পদ তহবিলে শীর্ষে আবুধাবি, এরপর অসলো ও সিঙ্গাপুর

বৈচিত্র্যময় খাতে বিনিয়োগের জন্য এরই মধ্যে আর্থিক খাতে ব্র্যান্ডের মর্যাদা পেয়েছে আবুধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (আদিয়া), মুবাদালা ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ও এডিকিউ। তিনটি কোম্পানিই দেশটির রাজধানীর

বৈচিত্র্যময় খাতে বিনিয়োগের জন্য এরই মধ্যে আর্থিক খাতে ব্র্যান্ডের মর্যাদা পেয়েছে আবুধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (আদিয়া), মুবাদালা ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ও এডিকিউ। তিনটি কোম্পানিই দেশটির রাজধানীর আবুধাবির স্থানীয় সরকার সমর্থিত। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, শহর বা প্রদেশভিত্তিক সভরেন ওয়েলথ ফান্ড বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল (এসডব্লিউএফ) গঠনে এগিয়ে রয়েছে আবুধাবি। এ খাতে রাজ্যটির সম্পদের পরিমাণ ১ দশমিক ৬৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এরপর রয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র নরওয়ের রাজধানী অসলো ও নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। খবর দ্য ন্যাশনাল ও দ্য স্ট্রেটস টাইমস।

লাভজনক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম সামনে এলেও রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এসডব্লিউএফ হলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সেই বিনিয়োগ তহবিল, যা স্টক, বন্ড, রিয়েল এস্টেট, মূল্যবান ধাতু, প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড বা হেজ ফান্ডের মতো বিকল্প বিনিয়োগে অর্থায়ন করে। এ বিনিয়োগের পরিসর স্থানীয় পর্যায়ে সীমিত থাকে না, বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হতে পারে। এসডব্লিউএফের পরিচিত উৎস হলো পণ্য রফতানি আয় বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

এ খাতসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক সংস্থা গ্লোবাল এসডব্লিউএফ সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকারভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিলকে আর্থিক আকারের দিক থেকে তালিকাভুক্ত করেছে।

তালিকায় শীর্ষে থাকা আবুধাবি সমর্থিত সার্বভৌম তহবিলের মধ্যে আরো রয়েছে আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট, তাওয়াজুন ও এমিরেটস ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অসলোর সবচেয়ে বড় এসডব্লিউএফ হলো গভর্নমেন্ট পেনশন ফান্ড, এ সংস্থার হাতে রয়েছে ১ দশমিক ৬৬ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ। তৃতীয় স্থানে থাকা বেইজিংয়ের রয়েছে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের তহবিল, চীনের রাজধানীতে রয়েছে চায়না ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশনের সদর দপ্তর। জিআইসি প্রাইভেট ও টেমাসেক হোল্ডিংস খ্যাত সিঙ্গাপুরের তহবিলের আকার ১ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এছাড়া ১ দশমিক ১১ ট্রিলিয়ন ডলার ও ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারের সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল নিয়ে তালিকার শীর্ষ দশে রয়েছে যথাক্রমে রিয়াদ ও হংকং। এর মধ্যে রিয়াদে রয়েছে পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা পিআইএফ।

গ্লোবাল এসডব্লিউএফের সংকলিত তথ্যে ১ অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালনায় থাকা ১২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের তথ্য উঠে এসেছে। এ পরিমাণ সম্পদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের মালিকানা রয়েছে শীর্ষ ছয় শহরের।

চলতি বছরের প্রথমার্ধে এ খাতে নেতৃত্ব দিয়েছে পিআইএফ, মুবাদালা, আদিয়া, এডিকিউ ও কাতারের রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সংস্থা কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি। তারা মোট বিনিয়োগের অর্ধেক করেছে। এ সময় ৫৮টি চুক্তির অধীনের তহবিলগুলোর মোট বিনিয়োগ পৌঁছায় ৩ হাজার ৮২০ কোটি ডলারে।

আবুধাবি সম্পর্কে গ্লোবাল এসডব্লিউএফের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০২০ সাল থেকে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমে স্থিতিশীল বৃদ্ধি দেখেছে আবুধাবি। ফলে শহরটিতে বিনিয়োগের জন্য বড় ধরনের উদ্বৃত্ত থাকছে। যদি বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি অক্ষুণ্ন থাকে, তবে আবুধাবি আগামী দুই বছরে ৬ হাজার কোটি ডলার উদ্বৃত্ত থেকে উপকৃত হবে।

এ তালিকা থেকে সম্পদের পুঞ্জীভবন সম্পর্কে একটি ধারণাও পাওয়া যাচ্ছে। গ্লোবাল এসডব্লিউএফের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিয়েগো লোপেজের মতে, বৈশ্বিক এ র‌্যাংকিং থেকে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি শহর সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের বেশির ভাগ পরিচালনা করছে, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরেছে।

অঞ্চল হিসেবে তালিকা করলে দেখা যাচ্ছে বৈশ্বিক সার্বভৌম সম্পদ তহবিলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বড় ভূমিকা রাখছে। প্রায় ৫ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার পুঁজি নিয়ে শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (এমইএনএ) অঞ্চলের সার্বভৌম তহবিলগুলো। এরপর এশিয়া, ইউরোপ, ওশেনিয়া ও উত্তর আমেরিকার প্রধান শহরগুলোর এসডব্লিউএফের আর্থিক মূল্য যথাক্রমে ৪ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন, ২ ট্রিলিয়ন, ৪৫ হাজার কোটি ও ৩৫ হাজার কোটি ডলার।

আরও