তামাক পণ্য: সাত বছরে রফতানি বেড়েছে চার গুণ

দেশে তামাক ও তামাকজাতীয় পণ্য রফতানি ক্রমাগত বাড়ছে। সাত বছরের ব্যবধানে মাত্র ৪ কোটি ডলার থেকে রফতানি উন্নীত হয়ে ১৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এ রফতানি হার আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাত পণ্য রফতানিতে আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার এবং একই সঙ্গে অপ্রক্রিয়াজাত তামাকে থাকা ১০ শতাংশ রফতানি

দেশে তামাক ও তামাকজাতীয় পণ্য রফতানি ক্রমাগত বাড়ছে। সাত বছরের ব্যবধানে মাত্র ৪ কোটি ডলার থেকে রফতানি উন্নীত হয়ে ১৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এ রফতানি হার আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাত পণ্য রফতানিতে আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার এবং একই সঙ্গে অপ্রক্রিয়াজাত তামাকে থাকা ১০ শতাংশ রফতানি শুল্কও প্রত্যাহার করে শূন্য শতাংশ করার পর থেকে রফতানি বাড়তে থাকে। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ডলারের তামাক পণ্য রফতানি করা হয়। এর পর থেকে তামাক পণ্য রফতানি দ্রুত হারে বাড়তে শুরু হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ডলার রফতানি করা হয়। পরের বছর ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩২ হাজার ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সে হার বৃদ্ধি পেয়ে ৮ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ কোটি ৬২ লাখ ৩ হাজার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ কোটি ৭২ লাখ ২৪ হাজার ডলারের তামাক পণ্য রফতানি হয়। সর্বশেষ গত অর্থবছরে ১৬ কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার ডলারের তামাক পণ্য রফতানি করা হয়।

দেশের ১১ জেলায় সরাসরি তামাক চাষ হয়। জেলাগুলো হলো বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, মানিকগঞ্জ, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তামাক উৎপাদন হয় উত্তরের জনপদ রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাটে। তবে সবচেয়ে বেশি তামাক ‍উৎপাদন হয় কুষ্টিয়ায়। 

কৃষকরা জানান, তামাক চাষের জন্য সহজেই কৃষিঋণ পাওয়া যায়। যার কারণে কৃষকরা সবজি চাষের চেয়ে তামাক চাষে বেশি উৎসাহী হন। অন্যদিকে তামাক চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে তামাক চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। যেখানে ফসলি জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৯৪ হাজার ৫৬৮ একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চাষের জমির পরিমাণ ১০ হাজার ৬৯৫ একর বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৫ হাজার ২৬৩ একরে দাঁড়ায়। এ সময়ে তামাক দ্রব্যের উৎপাদন ৫ হাজার ৫২৮ থেকে ৮ হাজার ৯২৪ টনে দাঁড়িয়েছে।

কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হাজি মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‌স্থানীয় রফতানিকারকরা নয়, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এখানে তামাক রফতানির সঙ্গে জড়িত। শিল্পপতি শেখ আকিজ উদ্দিনের ঢাকা টোব্যাকো তামাক রফতানি করলেও সম্প্রতি জাপান টোব্যাকো ঢাকা টোব্যাকো কিনে নেয়ায় জাপান টোব্যাকোই রফতানির সঙ্গে জড়িত। জমি থেকে প্রাপ্ত তামাককে রি-ডায়িং করে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোও একইভাবে রফতানি করে।’

তিনি বলেন, ‘‌যারা তামাক উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তারা তামাক উৎপাদনকে নেতিবাচকভাবে দেখে। তারা চায় এখানে তামাক উৎপাদন না হোক। তামাক উৎপাদন এলাকায় শিশুরা বিকলাঙ্গ হচ্ছে। তামাকের প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে নারী-পুরুষ দুজনই জড়িত। সরকার এখান থেকে বড় আকারের রাজস্ব পায়। সরকার এখন তামাক উৎপাদন বন্ধ করতে বলে। কিন্তু এখন চাইলেও হুট করে তামাক চাষ বন্ধ করা সম্ভব নয়। চাষীদের বড় একটি অংশ এখানে জড়িত। তামাক স্বল্প সময়ের একটি ফসল, তিন মাসের মধ্যে ঘরে ওঠে। যেকোনো ফসলের চেয়ে বেশি মূল্য পায়। এর বীজ থেকে আরম্ভ করে কীটনাশক পর্যন্ত সবকিছু কুষ্টিয়ায় উৎপাদন হয়। যার কারণে কুষ্টিয়ার তামাকই বেশি রফতানি হয়।’

যেসব এলাকায় তামাক উৎপাদন হয়

বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, মানিকগঞ্জ, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর।


লেখক: সাংবাদিক

আরও