দেশে এখন চলছে চা উৎপাদনের মৌসুম। দেশব্যাপী কম-বেশি বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। তবে চা উৎপাদনের জন্য কাঙ্ক্ষিত ও পরিমিত বৃষ্টির অভাবে চায়ের উৎপাদন কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে দেশের চা নিলামে। টানা পাঁচ নিলামে তুলনামূলক কম চা পাঠিয়েছেন বাগান মালিকরা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চা খাতের বার্ষিক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সারা দেশে ১৬৮টি চা বাগান ও উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্রায়তন চা চাষীরা নিজস্ব বাগানে উৎপাদিত চা নিলাম বাজারগুলোয় পাঠায়। দেশের তিনটি চা নিলাম কেন্দ্রের মধ্যে শতবর্ষী ও সবচেয়ে জমজমাট চট্টগ্রামের চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম। এখানে গত পাঁচটি নিলামে আগের বছরের তুলনায় ৩২ লাখ কেজি কম চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। বাগান থেকে আশানুরূপ উৎপাদন না হওয়ায় নিলামে চায়ের সরবরাহ কমেছে বলে জানিয়েছেন বাগান ও ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
বাগানসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের চা চাষ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া অনেকটা প্রকৃতিনির্ভর। বর্ষা মৌসুমের জুন-অক্টোবর পর্যন্ত চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। এ সময় সর্বোচ্চ পরিমাণ ও সবচেয়ে ভালো মানের চা উৎপাদন করে নিলামে বিক্রি করা হয়। চায়ের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, পরিমিত ও নিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া প্রয়োজন। বিশেষত রাতে বৃষ্টি ও দিনের সূর্যোলোকের তাপ ভালো চা উৎপাদনে সহায়ক। কিন্তু এ বছর গরমের তীব্রতার পাশাপাশি বৃষ্টিপাত ছিল অনিয়মিত। ফলে বাগানগুলো কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ চা উৎপাদন করতে পারছে না, যার প্রভাব পড়েছে চায়ের নিলামে।
চট্টগ্রাম ভ্যালির উদালিয়া চা বাগানের কো-অর্ডিনেটর মো. জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বৃষ্টিপাত হলেও চায়ের উৎপাদন আশানুরূপ হচ্ছে না। এ বছর নিয়মিত বৃষ্টিপাতের পরিবর্তে স্বল্প সময়ে ভারি বৃষ্টিপাতের পরিমাণই ছিল বেশি। এ কারণে বাগানগুলোয় উৎপাদন কম। তবে শেষ সময়ে এসে বৃষ্টিপাত এখনো অব্যাহত থাকায় বছরের শেষ কয়েক মাসে উৎপাদন কিছুটা বাড়তে পারে। বাগানগুলো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাড়তি চা উৎপাদনে এখনো আশা ছাড়েনি।’
নিলামসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিলামে চায়ের সরবরাহ কমে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে দামও বাড়তি রয়েছে। গত বছরের নিলামগুলোয় এ সময় চায়ের প্রতি কেজির দাম ২০০ টাকার নিচে নেমে যায়। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত প্রতি কেজি চায়ের দাম ২০০ টাকার ঊর্ধ্বে রয়েছে। সর্বশেষ ২১তম নিলামেও প্রতি কেজি চা বিক্রি হয় গড়ে ২১৮ দশমিক ৪৫ পয়সায়। তবে ২২তম নিলামে গড় দাম কিছুটা কমে প্রতি কেজি ২১৫ টাকায় নেমে গেছে। তাছাড়া চলতি মৌসুম থেকে নিলামে চা বিপণনের ক্ষেত্রে ক্যাটাগরিভিত্তিক ন্যূনতম মূল্যস্তর বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ কারণেও দাম কমছে না বলে জানিয়েছেন ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চা বোর্ড। ২০২৩ সালে দেশে রেকর্ড ১০ কোটি ২৯ লাখ ১৮ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। সর্বশেষ আগস্ট পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৩২ হাজার কেজি। যদিও ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়েছিল ৫ কোটি ৪৭ লাখ কেজি। পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় চা উৎপাদন কম হওয়ায় চলতি মৌসুমে এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
চা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্রোকার্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক অঞ্জন দেব বর্মণ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে নিলামে চায়ের দাম ভালো পাচ্ছে বাগানগুলো। স্বাভাবিকভাবে দাম বাড়তি থাকলে নিলামে সরবরাহও বেড়ে যায়। কিন্তু বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়ার কারণে আশানুরূপ উৎপাদন না হওয়ায় নিলামে সরবরাহ কম। ভরা মৌসুমে চায়ের সরবরাহ কম থাকায় নিলাম বর্ষের শেষ পর্যন্ত চায়ের ক্রেতা চাহিদা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য প্রতিটি নিলামে গড়ে ৭০-৭৫ শতাংশ চা কিনে নিচ্ছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।’