খুলনা অঞ্চলের জনপ্রিয় মসলা চইঝাল। প্রাকৃতিক ভেষজ গুণসম্পন্ন এ মসলা মাংসে বাড়তি স্বাদ যোগ করে। চইঝালের সঙ্গে আস্ত রসুন দিয়ে খাসি, গরু কিংবা হাঁসের মাংস রান্না এ অঞ্চলের ঐতিহ্য, প্রচলনও দীর্ঘদিনের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চই বর্তমানে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য। ঔষধি গুণ থাকায় এর চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েই চলছে। খুলনা বিভাগে চই এত জনপ্রিয় যে একে খুলনার কৃষিপণ্য হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। দেশের অন্য এলাকায়ও এখন চইয়ের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অনেকেই সাধারণ তরকারিতেও এ মসলা ব্যবহার করেন। নিরামিষভোজীরাও খাবার তালিকায় চইঝাল রাখছেন। আবার স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে হালিম, ঝালমুড়িতেও এর ব্যবহার হচ্ছে।
এদিকে চই গাছের ডাল, বাকল, শিকড় তরকারিতে ব্যবহার করা হলেও ক্রেতাদের সুবিধার জন্য চইঝালের পাউডার (গুঁড়া) তৈরি করে মসলায় নতুন রূপ দিয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়ার বরাতিয়া গ্রামের কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক। চইঝালের শিকড়, বাকল ও ডাল রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ডার মেশিনে গুঁড়া করে মসলা করছেন তিনি। তবে নবদ্বীপ স্বীকার করেন, চইঝাল চিবিয়ে খেয়ে যে স্বাদ পাওয়া যায়, গুঁড়ায় তা সম্ভব হবে না।
চইঝালের গুঁড়ার বিষয়ে নবদ্বীপ জানান, কৃষি অফিসের সহায়তায় ২০১৮ সাল থেকে চই গাছের চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন তিনি। চই লতা কাটার পর বেশিদিন রাখা যায় না। এজন্য চইঝাল নষ্ট ঠেকাতে গুঁড়া তৈরির পরিকল্পনা করেন এবং তা বিক্রি করে দারুণ সাড়া পাচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রচুর পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ শজনে পাতা পাউডারও করছেন তিনি।
নবদ্বীপ জানান, শজনে গুঁড়ার স্বাদ অসাধারণ। শজনে পাতার গুঁড়া খুবই পুষ্টিকর। ঔষধি গুণ থাকায় যা এখন শুধু দেশীয় বাজারেই নয়, থাইল্যান্ডেও পাঠানো হচ্ছে। নবদ্বীপ মনে করেন, দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজার ধরতে পারলে চইঝাল ও শজনে পাতা গুঁড়ার কদর আরো বাড়বে।
নবদ্বীপ জানান, ভারতের তামিলনাড়ু ঘুরতে গিয়ে শজনে পাতা গুঁড়ার চাহিদা দেখে আগ্রহী হন তিনি। এরপর বাড়ি ফিরে বারোমাসি শজনে চারা সংগ্রহ করে জমিতে লাগান। মৌসুমে শজনে বিক্রির পর শজনে পাতা কেটে বাছাই করে চার-পাঁচ দিন রোদে শুকিয়ে পরীক্ষামূলক ১০ কেজি গুঁড়া দুবাই পাঠান। কিন্তু দুবাইয়ের ক্রেতারা মেশিনে মিহিভাবে গুঁড়া করাসহ কয়েকটি শর্ত দেয়। মিহি করার যন্ত্র কেনার সামর্থ্য না থাকায় পরিকল্পনা থাকলেও সেভাবে রফতানি করতে পারছেন না তিনি। তবে দেশের বাজারে তার পণ্য দারুণ সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন ক্রেতারা অনলাইন ও সরাসরি সংগ্রহ করছেন শজনে পাতার গুঁড়া। শজনে পাতার গুঁড়া রফতানি, পাইকারি ও খুচরায় কেজিতে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা রাখছেন তিনি। প্রতি বছর চইয়ের চারা, চই, চইয়ের গুঁড়া, শজনে পাতা এবং শজনে পাতার গুঁড়া বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা আয় করেন নবদ্বীপ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপপরিচালক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, উদ্ভিদ জাতীয় চইঝালের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশের অন্যান্য এলাকায়ও এখন চইয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এর পাতা, ডাল, শিকড়, ফুল, ফল, ডাল সবই ঔষধি গুণসম্পন্ন। চই গাছের ডাল, বাকল, শিকড় তরকারিতে ব্যবহার করা হলেও ক্রেতাদের সুবিধার জন্য চইঝালের পাউডার (গুঁড়া) তৈরি করে মসলায় নতুন রূপ দিয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়ার বরাতিয়া গ্রামের কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক। একই সঙ্গে প্রচুর পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ শজনে পাতা পাউডারও করছেন তিনি।
মোসাদ্দেক বলেন, ‘শজনে পাতাও খুবই পুষ্টিকর। ঔষধি গুণ থাকায় অনেকে শজনে পাতা পানিতে ভিজিয়ে পানি পান করেন। ২ থেকে ৬ ঘণ্টা শজনে পাতা ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয়।’
শজনে পাতা ও চইঝালের গুঁড়া তৈরিতে কৃষি বিভাগ নবদ্বীপকে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে বলে জানান তিনি।