বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৪৪ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৬১২ টন। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিক লাভজনক হওয়ায় সয়াবিন আবাদে আগ্রহ বাড়ছে বরিশাল বিভাগের কৃষকদের মাঝে। কৃষি কর্মকর্তারা তাদের নিয়মিত পরামর্শ ও কৃষি উপকরণের মাধ্যমে সহায়তা করছেন। এ কারণে তেলবীজটির ফলনও ভালো হচ্ছে।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, বরিশাল অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন চাষ হয় বরিশাল ও ভোলা জেলায়। এর মধ্যে বরিশালে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে। এ জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৫০ টন, পিরোজপুরে ১০ হেক্টর জমির বিপরীতে ১০ টন, ঝালকাঠিতে ১৪ হেক্টর জমির বিপরীতে ১৮ টন, পটুয়াখালীতে ১৫ হেক্টর জমির বিপরীতে ২৭ টন, বরগুনায় পাঁচ হেক্টর জমির বিপরীতে সাত টন, ভোলা জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বিপরীতে ১৬ হাজার ৫০০ টন।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজির হাট থানার আজিমপুর গ্রামের কৃষক ইউনুস সরদার বলেন, ‘একসময় আমাদের এলাকায় এ মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে মুগডাল, খেসারি, মরিচ, তিল, তিশি, সরিষা, মিষ্টি আলু, খিরাসহ বিভিন্ন রবিশস্য চাষ হতো। এখন মাঠজুড়ে সয়াবিন ছাড়া অন্য ফসল তেমন চোখে পড়ে না। ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সয়াবিন বীজ বপন করে ৯০-১১০ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা হয়। অন্যান্য রবি ফসলের চেয়ে সয়াবিন চাষ অনেক বেশি লাভজনক। হেক্টরে সর্বোচ্চ উৎপাদন খরচ ২০ হাজার টাকা। ভালো ফলন ও দাম পাওয়া গেলে উৎপাদন খরচের চেয়ে চার গুণ বেশি লাভ হয়, যা অন্য কোনো ফসল আবাদ করে পাওয়া যায় না। এ কারণে এখন কৃষক সয়াবিন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালক মো. শওকত ওসমান বলেন, ‘সয়াবিন তেলবীজ হলেও আমাদের দেশে উৎপাদিত সয়াবিন থেকে তেল উৎপাদন করা হয় না। দেশী সয়াবিন মূলত পোলট্রি খাদ্য, মাছের খাদ্য তৈরি, সয়াবিস্কুট, সয়ামিল, সাবান, সয়াদুধ, শিশুখাদ্যসহ নানা রকমের ৬১টি পুষ্টিকর খাবার ও পণ্য তৈরিতে ব্যবহার হয়। এছাড়া খুব সামান্য পরিমাণ সয়াবিন রফতানিও করা হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের সয়াবিনচাষীদের বিজ ও সারসহ পরামর্শ দিয়ে আসছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তারা। ফলে এটির আবাদ ও ফলন বাড়ছে।’