বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সে তুলনায় এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) উৎপাদন কমছে। ফলে সরবরাহ সংকটে বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের বাজার। ৩ অক্টোবর প্রকাশিত বার্ষিক ‘বৈশ্বিক গ্যাস নিরাপত্তা পর্যালোচনায়’ এ তথ্য জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস।
আইইএ জানায়, চলতি ও আগামী বছর বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছতে পারে। এর মধ্যে চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটির মোট চাহিদা ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি ঘনমিটারে পৌঁছতে পারে। এ সময় এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে। আগামী বছর বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়তে পারে ২ দশমিক ৩ শতাংশ বা ১০ হাজার কোটি ঘনমিটার। এ সময়ও এশিয়ার দেশগুলো মোট চাহিদা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
আইইএর সরবরাহকৃত প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এটি ২০১০-২০ পর্যন্ত গড়ের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। ব্যবহার বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। এছাড়া ইউরোপের কিছু দেশেও পণ্যটির চাহিদা বাড়ছে।
সংস্থাটি আরো জানায়, একদিকে সরবরাহ সংকট, অন্যদিকে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ঊর্ধ্বমুখিতা বজায় রেখেছে। চাহিদা, ব্যবহার ও সরবরাহে ভারসাম্য না থাকায় অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে পণ্যটির বাজার।
আইইএ বলেছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে বিশ্বে এলএনজি সরবরাহ মাত্র ২ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬-২০ সাল এ বৃদ্ধির গড় হার ছিল ৮ শতাংশ।
সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যাঙ্গোলা, মিসর, ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোর মতো কিছু ঐতিহ্যবাহী উৎপাদনকারী দেশে কিছু প্রকল্পের বিলম্ব ও ফিড গ্যাসের সরবরাহের সমস্যা এলএনজি উৎপাদনের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু প্রকল্প থেকে এলএনজি সরবরাহ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আইইএ জানায়, চলতি বছর বৈশ্বিক এলএনজি সরবরাহ ২ শতাংশ বাড়তে পারে। ২০২০ সালের পর এটি সবচেয়ে ধীর বৃদ্ধির হার।
আগামী বছর বৈশ্বিক সরবরাহ বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশে পৌঁছতে পারে। সে সময় বেশ কয়েকটি বড় এলএনজি প্রকল্প চালু হওয়ার কথা। এর মধ্যে এ সময় উত্তর আমেরিকা ৮৫ শতাংশ অতিরিক্ত এলএনজি সরবরাহে অবদান রাখবে, যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই আসবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
আইইএ বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগে আছে অন্যান্য দেশ। কারণ ইউক্রেনের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ ও আন্তঃসংযোগ চুক্তির মেয়াদ চলতি বছরের শেষের দিকে শেষ হওয়ার কথা। গত বছর ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়া ১ হাজার ৪৬৫ কোটি ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস ইউরোপের দেশগুলোয় সরবরাহ করেছিল।