জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানির বিপরীতে টেকসই বিকল্প হচ্ছে নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো। এ খাতে শীর্ষ অর্থনীতিগুলো বড় বড় উদ্যোগ নিলেও তা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সঙ্গে এখনো মানানসই হয়ে ওঠেনি। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনে বর্তমানের তুলনায় বার্ষিক তিন গুণ বিনিয়োগ করতে হবে, এর পরিমাণ দেড় লাখ কোটি বা ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। খবর দ্য ন্যাশনাল।
ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সির আইআরইএ সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে বর্তমান প্রচেষ্টাকে তিন গুণে উন্নীত করতে হবে। এতে বার্ষিক ব্যয় দাঁড়াবে দেড় লাখ কোটি ডলার।
২০২৩ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ছিল ৫৭ হাজার কোটি ডলার। তা সত্ত্বে চলমান প্রকল্পগুলো নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তার তুলনায় অর্ধেক সরবরাহ করছে। সম্প্রতি আজারবাইজানে প্রাক-কপ২৯ আলোচনার আগের এ তথ্য প্রকাশ করে আইআরইএ।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে ১৯৫টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কিছু পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রাক-শিল্প যুগ-পরবর্তী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা। এ পরিপ্রেক্ষিতে নেয়া প্রধান উদ্যোগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনায় অর্থায়নসংক্রান্ত ব্যবধান বৈশ্বিক লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কপ২৮-এর প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আল জাবের বলেন, ‘বিশ্বকে বড় চিন্তা, সাহসী কাজ এবং জ্বালানির রূপান্তরের যাত্রায় আমাদের সম্মিলিতভাবে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে।’
ড. আল জাবের বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিল্প ও উন্নত প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তার মতে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আরো কাজের সুযোগ রয়েছে। আরো বেশি দেশকে আসন্ন এনডিসিতে (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশনস) নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অবকাঠামো লক্ষ্যকে সুনির্দিষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগে উৎসাহ দান এবং প্রকল্প বিকাশ ও বাস্তবায়ন সহজীকরণে এগিয়ে আসতে হবে।
সম্মেলনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকানোর এ পদক্ষেপে অবকাঠামো ও পরিচালনা, নীতি ও প্রবিধান, সরবরাহ চেইন, দক্ষতা ও সক্ষমতা, অর্থ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাসহ জ্বালানি স্থানান্তরের মূল খাতগুলোয় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রয়োজন রয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা রয়েছে ৩ দশমিক ৯ টেরাওয়াট। অন্যদিকে ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক লক্ষ্য হলো ১১ দশমিক ২ টেরাওয়াটে উন্নীত হওয়া। কিন্তু চলমান গতিতে এ খাতে বিনিয়োগ হলে ২০৩০ সালে লক্ষ্যের চেয়ে ৩ দশমিক ৮ টেরাওয়াট বা ৩৪ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ঘাটতি থেকে যাবে। ২০২২ সাল নাগাদ বার্ষিক সক্ষমতা বৃদ্ধির হার ছিল ২ শতাংশ। কিন্তু এ দশকের শেষ দিকে নির্ধারিত উৎপাদনে পৌঁছতে গেলে বার্ষিক হারে বৃদ্ধির গতি ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এর জন্য পরিবহন, নির্মাণ ও শিল্পসহ একাধিক খাতে নতুন উদ্ভাবন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে দ্রুত সক্ষম হতে হবে।
এ বিষয়ে আইআরইএ মহাপরিচালক ফ্রান্সেসকো লা কামেরা জানান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানগুলো চিহ্নিত করতে হবে। পরবর্তী এনডিসিকে অবশ্যই বাঁক বদল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে এবং বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে ঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে, সাম্প্রতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বেশির ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রে। একই সময়ে অপর্যাপ্ত অর্থায়ন ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে ক্লিন এনার্জিতে বিনিয়োগ থেকে পিছিয়ে আছে অনেক উন্নয়নশীল দেশ। গত জানুয়ারিতে এক সাক্ষাৎকারে ফ্যান্সেসকো লা কামেরা বলেছিলেন, দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণে কিছু ‘কাঠামোগত বাধা’ অতিক্রম করতে হবে।
আইআরইএ সর্বশেষ প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো অর্থায়নের জটিলতায় ভুগছে। এ কারণে পুঁজিনিবিড় এ জ্বালানি রূপান্তর প্রযুক্তির সুযোগ নিতে পারছে না। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আফ্রিকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ কমেছে ৪৭ শতাংশ। অন্যদিকে সাব-সাহারান আফ্রিকায় মাথাপিছু জ্বালানি রূপান্তর-সম্পর্কিত বিনিয়োগ বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ৪০ গুণ কম।