উত্তরের কৃষিনির্ভর জেলাগুলোর মধ্যে গাইবান্ধা অন্যতম। এ জেলায় নানা ধরনের ফসলের পাশাপাশি কৃষকরা প্রতি বছর মরিচের আবাদ করে থাকে। এজন্য এ জেলার স্লোগান হচ্ছে স্বাদে ভরা রসমঞ্জুরীর ঘ্রাণ, চরাঞ্চলের ভুট্টা-মরিচ গাইবান্ধার প্রাণ। জেলার ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে মরিচ চাষে বিপ্লব ঘটেছে।
ফুলছড়ি উপজেলায় চাষ বেশি হওয়ায় এটি জেলার একমাত্র মরিচের হাট হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত। উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র সংলগ্ন হাটে নৌকাযোগে বিভিন্ন চর থেকে প্রচুর মরিচ আসে। এলাকার কৃষকরা হাইব্রিড, দেশী, বগুড়ার জাতসহ স্থানীয় জাতের মরিচ চাষ করে থাকেন।
সম্প্রতি ফুলছড়ি হাটে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর, খোলাবাড়িসহ, ফুলছড়ি, সাঘাটাসহ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল, জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ও বকসীগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষকরা হাটে মরিচ বিক্রি করতে এসেছেন। বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মরিচ কিনতে আসেন ব্যাপারীরা। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সকাল ৭টায় হাটের কেনাবেচা শুরু হয়।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলায় ২ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৭৫ টন শুকনা মরিচ। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৪০ হেক্টর, সাদুল্লাপুরে ১৮০ হেক্টর, পলাশবাড়ীতে ৭৫ হেক্টর, গোবিন্দগঞ্জে ১২৫৬ হেক্টর, সুন্দরগঞ্জে ১৪৮ হেক্টর, ফুলছড়িতে ৯৯২ হেক্টর ও সাঘাটায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে।
মরিচ বিক্রি করতে আসা ফুলছড়ি উপজেলার কাবিলপুর চরের কৃষক আব্দুল খালেক (৪২) বলেন, ‘১৫ কেজি শুকনো মরিচ নিয়ে আসছি। পাইকাররা দাম বলছে ১৫ থেকে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা মণ দর হিসাবে। তাতে গত বছরের তুলনায় এবার ভালো দাম পাচ্ছি।’
বগুড়া জেলার সাড়িয়াকান্দি উপজেলা থেকে মরিচ কিনতে আসা ব্যাপারী মো. জাকিরুল ইসলাম ও শাহীন মণ্ডল বলেন, ‘আমরা প্রতি বছরই এ হাট থেকে শুকনা মরিচ কিনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে থাকি। অন্যান্য বছরের থেকে এ বছর মরিচের মান ভালো। দামও একটু চড়া এবং প্রতি মণ মরিচের খাজনা দিতে হয় ৮০ টাকা। এতে খরচ বেশি পড়ে যায় ।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এ জেলার সাতটি উপজেলায় যে পরিমাণ মরিচের চাষ হয় তার অর্ধেকই উৎপন্ন হয় ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলে। এখানে দিন দিন মরিচ চাষের পরিমাণ বাড়ছে। কৃষি বিভাগ থেকে যেকোনো পরামর্শসহ সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে।
ফুলছড়িহাট ইজারাদার বজলুর রহমান বলেন, ‘শনিবার ও মঙ্গলবার দুদিন আমাদের হাটবার। প্রতি হাটে ৭০০-৮০০ মণের বেশি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। শুকনা মরিচের হাটের জন্য আমাদের নির্ধারিত কোনো স্থান নেই। উপজেলা প্রশাসন থেকে সে ব্যবস্থা করা হলে আমাদের বেচাকেনা বাড়বে।’