দেশের বৃহত্তম পাইকারি সুতার মোকাম নারায়ণগঞ্জের টানবাজারে সব কাউন্টের সুতার দাম বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে পাউন্ডে সুতার দাম বেড়েছে ৬-১৪ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও টাকা উত্তোলনে সীমা বেঁধে দেয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকে টাকা না রেখে সুতা কিনে গুদামজাত করেছেন। বেচাকেনা কম করে সুতা গুদামে রেখে দেয়ায় মূলত সুতার দাম বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০ কাউন্টের সুতা বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে প্রকারভেদে ৬৫-১১২ টাকা পাউন্ড দরে। এক মাস আগেও একই সুতা বেচাকেনা হয়েছিল ৫২-১০২ টাকায়। সে হিসাবে ১০ কাউন্টের সুতার দাম পাউন্ডে বেড়েছে প্রকারভেদে ১০-১৩ টাকা।
২০ কাউন্টের সুতা প্রকারভেদে বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে ১১৯-১২৪ টাকা পাউন্ড দরে, এক মাস আগেও যা ছিল ১১০-১১২ টাকা। সে হিসাবে ২০ কাউন্টের সুতার দাম পাউন্ডপ্রতি বেড়েছে ৯-১২ টাকা।
৩০ কাউন্টের সুতা প্রকারভেদে বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে ১৫২-১৬৮ টাকা পাউন্ড দরে। ১৫-২০ দিন আগে একই সুতা বেচাকেনা হয়েছিল ১৪০-১৫৪ টাকায়। সে হিসাবে এ কাউন্টের সুতার দাম বেড়েছে ১২-১৪ টাকা।
৪০ কাউন্টের সুতা বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে প্রকারভেদে ১৭৮-১৮২ টাকা দরে। একই সুতা এক মাস আগে বেচাকেনা হয়েছিল ১৭০-১৭৪ টাকা দরে। সে হিসাবে ৪০ কাউন্টের সুতার দাম বেড়েছে প্রকারভেদে ৮ টাকা।
৬০ কাউন্টের সুতা বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে প্রকারভেদে ২২২-২৩২ টাকা দরে। একই সুতা তিন সপ্তাহ আগে বেচাকেনা হয়েছিল ২১৮-২২৬ টাকা দরে। সে হিসাবে এ কাউন্টের সুতার দাম পাউন্ডে বেড়েছে ৪-৬ টাকা।
৮০ কাউন্টের সুতা প্রকারভেদে বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকা পাউন্ড দরে। একই সুতা ২০-২৫ দিন আগে বেচাকেনা হয়েছিল ২৬৬-২৭৪ টাকায়। সে হিসাবে ৮০ কাউন্টের সুতার দাম বেড়েছে পাউন্ডে ৪-৬ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সুতার দাম বাড়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রথম এক সপ্তাহ সব ব্যাংক থেকে কোনো গ্রাহক নগদ ১ লাখ টাকার বেশি তুলতে পারবেন না। এর পরের সপ্তাহে ২ লাখ ও তার পরের সপ্তাহে ৩ লাখ টাকা তোলার সীমা বেঁধে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা তোলার নিয়ম উন্মুক্ত করে দেয়। কিন্তু ওই তিন সপ্তাহ টাকা তোলা নিয়ে ঝামেলার মধ্যে কিছু সুতা ব্যবসায়ী নগদে সুতা কিনে নিজস্ব গুদামে রেখে দেন। ওই সময়টায় সুতা বেচাকেনা খুবই কম হয়। ব্যাংকের টাকা তোলার বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে এলে বেচাকেনা বাড়ে। তবে এ সুযোগে এর দাম পাউন্ডে বেড়ে যায় ৬-১৪ টাকা পর্যন্ত।
এ ব্যাপারে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও রংধনু স্পিনিংয়ের স্বত্বাধিকারী প্রবীর কুমার সাহা বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে সুতার চাহিদা বাড়ায় বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে যে আইটেমের সুতা বাজারে ঘাটতি আছে সেটির দাম একটু বেশি বেড়েছে। তবে সেটা পাউন্ডে ৬ টাকার বেশি নয়।’ তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করেন। কারণ জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থানের কারণে বাজারে বেচাকেনা একেবারে ছিল না। সে সময় যে লোকসান হয়েছে। এখন দাম বাড়ায় তা কিছুটা সমন্বয় হবে।